আল কুর’আনে ‘মুরতাদ’ সম্পর্কিত আয়াতসমূহ
লিখেছেন লিখেছেন ধূমকেতু ৩০ এপ্রিল, ২০১৩, ০৬:৫৭:৫৯ সন্ধ্যা
(পর্ব-১)
যে সমস্ত আয়াতে দুনিয়ার শাস্তির প্রসঙ্গ আসেনি
আজ প্রায়ই একটা কথা শুনতে পাচ্ছি যে, ইসলামে নাকি ‘ব্লাসফেমি আইন’ নাই। অর্থাৎ আল্লাহ্-রাসূল-ইসলামের বিরুদ্ধে কটুক্তি করলে কিংবা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করলে তার কোনো শাস্তির কথা কুর’আন হাদীসে নাই। অর্থাৎ এমন কোনো আইন নেই যা সরাসরি কুর’আন থেকে উৎসারিত। এটা সুস্পষ্ট মিথ্যাচার। ‘ইসলামী দন্ডবিধি’ সম্পর্কে যাদের ধারনা আছে, তারা নিশ্চয়ই বিষয়টা সম্পর্কে জানেন।
কুর’আন থেকে এমন কিছু আয়াত তুলে ধরার চেষ্টা করব, যা সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণ বহন করে যে, ব্লাসফেমির ‘পারলৌকিক শাস্তি’র পাশাপাশি ‘ইহলৌকিক শাস্তি’ বিদ্যমান। চুরি, ডাকাতি, ব্যাভিচার, সুদ, ঘুষ প্রভৃতির কিন্তু ইহলৌকিক শাস্তি রয়েছে, তার পাশাপাশি পারলৌকিক শাস্তিও রয়েছে। ঠিক একইভাবে এক্ষেত্রেও শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে।
যে সমস্ত আয়াতে দুনিয়ার শাস্তির প্রসঙ্গ আসেনি, কেবল মুরতাদদের অভিশপ্ত বলা হয়েছে আর আখিরাতের শাস্তি হিসেবে চিরস্থায়ী জাহান্নামের কথা বলা হয়েছে, সেই সকল আয়াত সমূহ প্রথমে তুলে ধরা হলো।
আয়াতঃ১ (‘কাফিরদের প্ররোচনায় যদি কেউ দ্বীন থেকে ফিরে যায়’, তবে সেই মুরতাদদের কি হবে?)
“. . . তোমাদের মধ্যে যারা নিজের দ্বীন (ধর্ম) থেকে ফিরে দাঁড়াবে এবং কাফির (অবিশ্বাসী) অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, তাদের দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের যাবতীয় আমল (কর্ম) বিনষ্ট হয়ে যাবে। আর কারাই হলো দোযখবাসী। তাতে তারা চিরকাল বাস করবে।” (২ নং সূরা বাকারা, আয়াতঃ২১৭)
ব্যাখ্যাঃ (মুরতাদের পরিণাম)
> উক্ত ‘দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের যাবতীয় আমল (কর্ম) বিনষ্ট হয়ে’ যাওয়ার অর্থ কি? এর অর্থ হলো- (১) পার্থিব জীবনে তাদের স্ত্রী তাদের বিবাহ বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, (২) যদি তার কোনো নিকটাত্মীয়ের মৃত্যু হয়, তাহলে সেই ব্যক্তির উত্তরাধিকার বা মীরাসের অংশ থেকে বঞ্চিত হয়, (৩) ইসলামে থাকাকালীন নামায রোযা যত কিছু করেছে সব বাতিল হয়ে যায়, (৪) মৃত্যুর পর তার জানাযা পড়া হয় না, এবং (৫) মুসলমানদের কবরস্থানে তাকে দাফনও করা হবে না। আর আখিরাতের আমল বিনষ্ট হওয়া বলতে বুঝায় যে- দুনিয়াতে করা সকল আমল বিনষ্ট হয়ে যায়, বিধায় চিরস্থায়ী জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়া। (তফসিরে মা’আরেফুল কুর’আন, পৃষ্ঠা-১১২)
আয়াতঃ২ (ইসলাম ছেড়ে অন্য কোনো ধর্ম বা মতবাদে স্থির হওয়া প্রসঙ্গে।)
“(৮৫) যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম তালাশ করবে, কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্থ।
(৮৬) কেমন করে আল্লাহ্ এমন জাতিকে হেদায়েত দান করবেন, যারা ইমান আনার পর এবং রাসূলকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেয়ার পর কাফের হয়েছে? আল্লাহ্ জালেম সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না।
(৮৭) এমন লোকের শাস্তি হলো আল্লাহ্, ফিরেশতাগণ এবং মানুষ সকলেরই অভিসম্পাত।
(৮৮) সর্বক্ষণই তারা তাতে থাকবে। তাদের আযাব হালকাও হবে না এবং তারা এতে অবকাশও পাবে না।
(৮৯) কিন্তু যারা অতঃপর তওবা করে নেবে এবং সৎকাজ করবে তারা ব্যতীত, নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
(৯০) যারা ইমান আনার পর অস্বীকার করেছে এবং অস্বীকৃতিতে বৃদ্ধি ঘটিয়েছে, কস্মিনকালেও তাদের তওবা কবূল করা হবে না- আর তারা হলো গোমরাহ্।
(৯১) যদি সারা পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণও তার পরিবর্তে দেয়া হয়, তবুও যারা কাফের হয়েছে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তাদের তওবা কবুল হবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক আযাব। পক্ষান্তরে তাদের কোনই সাহায্যকারী নেই।”
(৩ নং সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৮৫-৯১)
আয়াতঃ৩
“(১৩৭) যারা একবার মুসলমান হয়ে পরে পুনঃরায় কাফের হয়ে গেছে, আবার মুসলমান হয়েছে এবং আবারো কাফের হয়েছে এবং কুফুরীতেই উন্নতি লাভ করেছে, আল্লাহ্ তাদেরকে না কখনও ক্ষমা করবেন, না পথ দেখাবেন।
(১৩৮) সেসব মুনাফিককে সুসংবাদ শুনিয়ে দিন যে, তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।”
(৪ নং সূরা আন নিসা, আয়াতঃ১৩৭-১৩৮)
আয়াতঃ৪
“হে মু’মিনগণ! তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ্ এমন এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোনো নিন্দুকের নিন্দায় ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ- তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ্ তো প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী।”
(৫ নং সূরা মায়িদা, আয়াতঃ৫৪)
আয়াতঃ৫
“(১০৬) যার উপর জবরদস্তি করা হয় এবং তার অন্তর বিশ্বাসে অটল থাকে সে ব্যতীত যে কেউ বিশ্বাসী হওয়ার পর আল্লাহতে অবিশ্বাসী হয় এবং কুফরীর জন্য মন উন্মুক্ত করে দেয় তাদের উপর আপতিত হবে আল্লাহর গযব এবং তাদের জন্য রেছ শাস্তি।”
(১০৭) এটা এ জন্য যে, তারা পার্থিব জীবনকে পরকালের চাইতে প্রিয় মনে করেছে এবং আল্লাহ্ অবিশ্বাসীদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।
(১০৮) এরাই তারা, আল্লাহ্ তা’আরা এদেরই অন্তর, কর্ণ ও চক্ষুর উপর মোহর মেরে দিয়েছেন এবং এরাই কান্ডজ্ঞানহীন।
(১০৯) বলাবাহুল্য, পরকালে এরাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে।”
(১৬ নং সূরা নাহল, আয়াতঃ ১০৬-১০৯)
সংগৃহীত ।
বিষয়: বিবিধ
১৭৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন