পহেলা এপ্রিলে যখন আমরা fool!

লিখেছেন লিখেছেন ভিনদেশী ০১ এপ্রিল, ২০১৫, ০১:১১:৩৯ দুপুর

প্রতি বছর এপ্রিল মাস শুরু হওয়ার অন্তত এক সপ্তাহ আগে থেকে মায়াকান্নার আয়োজন শুরু হয়। আর এ কান্না শেষ হয় অন্তত আরো এক সপ্তাহ পর। কেন এ কান্না?

ভাবলেশহীন উত্তর- মুসলিম ইতিহাসের সবচে' দু:খজনক ট্রাজেডি 'গ্রানাডার পতন' এবং শেষবারের মতো স্পেনের মাঠিতে ঝরা মুসলমানদের কালো (!) রক্তের স্মরণে এ মাতমের আয়োজন।

হুম, খারাপ না। যে মুলুক আমাদের পূর্বপুরুষরা দীর্ঘ প্রায় ৮০০ বছর (৯২-৮৯৭ হিজরী) বীরদর্পে শাসন করেছেন। আবূ আব্দুল্লাহর চোখের পানি যে মুলুক রক্ষা করতে পারে নি। সে মুলুকের মাতম পালনে কান্না না করে আর কিইবা করা যায়?

জ্বী, অবশ্যই কান্না করবো। কান্না আমাদের করতেই হবে। তবে সমস্যাটা অন্য জায়গায়। ৮০০ বছরের সাজানো স্পেন আমাদের পূর্বপুরুষরা এমনিতেই হারান নি। এর পেছনে রয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ। সেসব নিয়ে হয়তো অন্য কেউ আলোচনা করবেন। তবে অন্তত একটা কারণ এখানে বলতে-ই হয়- স্পেন পতনের অন্যতম কারণ, আমাদের 'অজ্ঞতা'। জ্বী, ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞতা। (শেষদিকে) দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে অজ্ঞতা। শত্রুর ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অজ্ঞতা। শত্রু-মিত্রু নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অজ্ঞতা। অজ্ঞতার আরো যতো প্রকার ও শ্রেণী থাকতে পারে সব-ই সেদিন আমাদের শাসক শ্রেণীর মধ্যে বিদ্যমান ছিল।

স্পেন পতনের প্রায় ৬০০ শ' বছরে পরেও আমি ও আমাদের অনেকে স্পেন বিষয়ক অজ্ঞতা-রোগ থেকে রেহাই পাই নি। আর তাই তো, প্রতি বছর এপ্রিলের প্রথম দিন মায়াকান্নায় চোখ না ভিজলেও আলোচনার মঞ্চ ভিজানোর চেষ্টা কর থাকি।

স্পেনের সর্বশেষ মুসলিম-দুর্গ 'গ্রানাডা'র চাবি ফার্ডিনেন্ড-ইসাবেলার হস্তগত হয় ২রা জানোয়ারি।

প্রশ্ন হল, তাহলে তিন মাস পর এপ্রিলে কেন সে কান্না! এ বুঝি মহাকান্নার আয়োজন পিরিয়ড! তো, সে কান্না কি আর থামবে না! ইতিহাসের সিঁড়ি বেয়ে কান্নার মিছিল সামনে এগুতে থাকবে!

মনে হয় তো তাই। অন্যতায় প্রতি বছর পহেলা এপ্রিলে ঘটা করে কান্নার আয়োজনের অর্থ কি!

মুসলিম-স্পেনের সব ঐতিহাসিকরা কি ভুর করে ফেললেন। আর আমাদের কান্নাবিদরা সে ভুল সংশোধনে মরণ-যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন! বুকের রক্ত দিয়ে যাদের বাপ-দাদারা ৮০০ বছরের ঐতিহ্য রক্ষা করতে পারে নি। তারা ৬০০ বছর ধরে চোখের পানি ঝরিয়ে কি লাভ! এটা কিন্তু আমার কথা নয়। এ কথা বলেছিলেন- স্পেনের সর্বশেষ নালায়েক মুসলিম শাসক আবূ আব্দুল্লাহর লায়েক ও শাহসি মা (আয়েশা হুর্রা)। আর তাই তো ইতিহাস তাঁকে হুর্রা (স্বাধীন) উপাদিতে ভূষিত করে। গ্রানাডা হারা শাসক যখন লজ্জার মিছিলে অংশ নিয়ে অজানা পথ ধরলেন। শেষবারের মতো আল হামরার দিকে থাকিয়ে তাঁর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। আর তখনি স্বাধীনচেতা মায়ের বুক থেকে্ উচ্চারিত হলো সেই ঐতিহাসিক উক্তি- ''

ابكِ كالنساء مُلْكا لم تُدافعْ عنه كالرجال

''পুরুষের সাহসিকতা দেখিয়ে যে মুলুক রক্ষা করো নি। নারীদের মতো সে মুলুকের জন্য কান্না করো!''

কি আর বলবো! বলার তো কিছুই নেই। যদি বলতেই হয়, তবে বলবো- এপ্রিল ফুলের ইতিহাসকে আর যার সঙ্গে-ই যোগ করুন না কেন। দয়া করে মুসলিম ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত করবেন না। রক্তক্ষরণের মতো যথেষ্ট উপাদান আমাদের ইতিহাসে আছে। অন্যদের কাছ থেকে নতুনভাবে কিছু আমদানির প্রয়োজন নেই। সো প্লিজ! Do not say that...

পুনশ্চ: এপ্রির ফুলের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু লিখার ইচ্ছা ছিল। পরে চিন্তা করলুম। এসব তো ইউরোপিয়ানদের কুসংস্কার। ওসব লিখে সময় ক্ষেপণের কোন মানে হয় না। তারাই লিখুক তাদের কুসংস্কারের ইতিহাস।

বিষয়: বিবিধ

১২৮২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

312215
০১ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০৩:২১
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : মুসলিম ইতিহাসে কি শুধু মুসলমানদের বিজ্যগাথাই লিখা হবে? পরাজয় নয়? বিজয় থেকে মানুষ উজ্জীবিত হয়য়, পরাজয়ে ভুলের শিক্ষা নেয়। এপ্রিল ফুলের ইতিহাস অবশ্যই জানতে হবে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File