নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা সত্য বলেছেন। এবং বূরক্বীবাহ মিথ্যা বলেছে!
লিখেছেন লিখেছেন ভিনদেশী ০৪ জুলাই, ২০১৪, ০৬:০১:৫২ সন্ধ্যা
মুহাম্মদ তাহির ইবনে আশুর। محمد الطاهر ابن عاشور রহিমাহুল্লাহ তা'য়ালা। জন্ম ১২৯৬ হিজরী/ ১৮৭৯ ইংরেজী। মৃত্যু ১৩৯৩ হিজরী/ ১৯৭৩ ইংরেজী। তিউনিসিয়ার সাবেক প্রধান মুফতী। আয্ যায়তূন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান। দুনিয়াখ্যাত তাফসীর (আত্ তাহরীর ওয়াত্ তানভীর التحرير والتنوير) -এর লেখক। দীর্ঘ ৪০বছর সময় ধরে তিনি ত্রিশ খন্ডের এ বিশাল গ্রন্থ লিখে ছিলেন। পবিত্র কোরআনের অলংকার, ইসলামী আইন এবং (ইসলামী আইনের) মূল নীতিমালা বিষয়ে আগ্রহীদের জন্য এক অনন্য হাদিয়া। মহা মূ্ল্যবান তুহফা। এসব তো শাইখের ব্যক্তিগত পরিচয়। আজ তাঁর একটি তাক্ওয়া বিষয়ক সাহসী ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করা যাক।
১৯৫৬ সালের দিকের কথা। সবেমাত্র তিউনিসিয়া ফরাসী উপনিবেশের বর্বরতা থেকে মুক্তি লাভ করেছে। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা একেবারে ভঙ্গুর। মূল্যবান যা কিছু ছিল সব সাগরের ওপারে। ফ্রান্সে! কারণ, তারা এসেছিল তিউনিসিয়াকে উন্নত করতে। মোক্বাবেল হিসেবে দেশের 'সম্পদ' তাদের প্রাপ্য অধিকার ছিল! তাই নিয়ে গেছে!
যাক্ সে কথা। স্বাধীনতার পর দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট আল হাবীব বূরক্বীবাহ (১৯০৩-২০০০)। উপনেবিবেশিকদের রাজধানী প্যারিসে শিক্ষা গ্রহণকারী বূরক্বীবাহ দাদা-বাবুদের হাতে ভাঙ্গা দেশকে নতুনভাবে গড়ার প্রস্তুতি নিলেন। আর এ উন্নয়ন কার্যক্রমও হবে দাদা-বাবুদের বাতানো পদ্ধতিতে! কারণ, তাদের যে অনেক অবিজ্ঞতা!
দেশের অর্থনীতিকে সোজা করতে, দারিদ্র ও নিরক্ষরতা বিমোচন করতে জনগণ কাজ শুরু করলেন। দেশের ওলামা-বুদ্ধিজীবী সবাই নিজ নিজ স্থানে থেকে উন্নয়নের এ মহৎ আন্দোলনে শরীক হলেন। কিন্তু...! কিন্তু কী?
উন্নয়নের এমন ভরা মৌসুমে রামাদান এসে হাজির! অ-সময়ে রামাদানের আগমনে বূরক্বীবাহ দুঃখিত হলেন। কারণ, ক্ষুধার্ত রোজাদাররা দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে যথাযথ অংশ গ্রহন করতে পারবে না! কিন্তু উন্নয়নের সব কার্যক্রম যে রামাদানে-ই শেষ করতে হবে! আর এটা-ই যে বূরক্বীবাহর দায়িত্ব! তাঁর বুদ্ধি বলে কথা! রামাদানের এক ভর-দুপুরে প্রেসিডেন্ট রাস্ট্রীয় টেলিভিশনের বড় পর্দায় হাজির হলেন। সঙ্গে এক গ্লাস পানি। দেশ রক্ষায় তিনি মধ্য-দুপুরে ইফতার (!) করলেন। দেশবাসীকে ইফতারের আহবান জানালেন। রোজা রাখার সময় অনেক আসবে। কিন্তু দেশ উন্নত করার সময় যে আর নেই!
জনগণ তাঁর এ গর্হীত আচরণকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলেন। প্রতিবাদ করলেন! রোজা রেখে তারা উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে থাকলেন। জনতার এরূপ আচরণে বূরক্বীবাহর মান-সম্মান (যা ছিল সব) যায় যায় অবস্থা! বেচারা প্রসিডেন্ট পড়লেন দু'মুখি সমস্যায়। রোজাও শেষ। তাতে অবশ্য তেমন সমস্যা নেই! আবার চেয়ারও যায় যায় অবস্থা! রোজা বাদ গেলেও দ্বিতীয়টা যে বাদ দেওয়া যায় না! তিনি কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। কিন্তু এ বিপদ থেকে তাকে যে রক্ষা পেতে হবে। দেশকে যে রক্ষা করতে হবে 'রোজা রাখার কঠিন' পরিণতি থেকে! চিন্তা-ভাবনার পর তাঁর মাথায় এক বুদ্ধি আসলো। প্যারিস থেকে প্রাপ্ত বুদ্ধি বলে কথা।
জনতাকে সুবোধ বালকের মতো রাজি করাতে হবে। আর তা একেবারে সহজ! এ কাজ করতে হবে প্রধান মুফতী সাহেবের মাধ্যমে! তিনি শাইখ মুহাম্মদ তাহির ইবনে আশুর!
তিউনিসিয়ার জনগণ এ লোকটিকে গভীর শ্রদ্ধার চোখে দেখে। তিনি বললে সব কিছু সহজে মেনে নেয়। প্রসিডেন্ট শাইখকে ডাকলেন। তাকে বুঝিয়ে বললেন (হয়তো সাথে হুমকি-ধমকিও)।
শাইখ রাজি হলেন! রাস্ট্রীয় টেলিভিশনে তিনি জনতাকে রোজা রাখা থেকে বারণ করবেন! রাস্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে তা ব্যাপক হারে প্রচার করা হলো। উৎসুক জনতা শাইখের আলোচনা শুনার প্রহর গুণছে। যথা সময়ে তিনি বড় পর্দার সামনে উপস্তিত হলেন। আলোচনার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে রামাদানের রোজা ফরজ বিষয়ক আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন।
{يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ} [البقرة: 183]
হে ইমানদাররা! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল। যেন তোমরা ‘তাকওয়া’ অর্জন করতে পারো’’। সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৮৩।
আয়াতি তিলাওয়াত করে শাইখ থেমে গেলেন। কিছু-ই বলছেন না। অনেক্ষণ পর হঠাৎ বলে উঠলেন:
صَدَقَ الله وكَذَبَ بورقيبة! صَدَقَ الله وكَذَبَ بورقيبة!
নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা সত্য বলেছেন। এবং বূরক্বীবাহ্ মিথ্যা বলেছে!
নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা সত্য বলেছেন। এবং বূরক্বীবাহ্ মিথ্যা বলেছে!
(যার অর্থ; রামাদানের মাধ্যমে রোজাদারদের তাকওয়া অর্জিত হয়। তাকওয়ার মাধম্যে মুমিনরা আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করে। যা তাদেরকে দুনিয়া-আখিরাতের কাজে সহযোগিতা করে। তাই রোজার কারণে, মুমিন কখনো দুর্বল হয় না। তার কাজের পরিধি কমে আসে না। বরং কাজের গতি আরো বৃদ্ধি পায়। আর আল্লাহ তা'য়ালার কথা-ই সত্য। বূবক্বীবার কথা মিথ্যা)
আর কোন কথা না বলে স্টুডিও ত্যাগ করলেন!
শাইখের এরূপ সাহসী আচরণে জনতার আনন্দ কে দেখে অবস্থা!
অন্যদিকে বেচারা সরকার প্রধানেরও কিছু-ই করার রইলো না!
শাইখ ইবনে আশুর আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তাঁর লিখিত গ্রন্থাদি আজো আছে। আজো মুসলিম বিশ্বের হাজারো, আলিম-তালিব তাঁর মূল্যবান গ্রন্থাদি থেকে উপকৃত হচ্ছে। ইনশা-আল্লাহ ভবিষ্যতেও হবে। তাঁর হাজারো সাহসী প্রদক্ষেপ আজো মুসলমাদের কঠিন থেকে কঠিন মূহুর্তে সুস্পষ্ট ভাষায় সাহসীকতার সঙ্গে বলিষ্ঠ কণ্ঠে সত্য-ন্যায়ের কথা বলার উৎসাহ যোগায়। আল্লাহ তা'য়ালা এ মহান ইমামের সব আমল গুলোকে কবুল করুন। দুনিয়ায় তাঁর কবরকে জান্নাতের টুকরা বানিয়ে দিন। আখিরাতে জান্নাতুল ফিরদাউসে তাঁর (এবং আমাদের) স্থান করুন। আমাদেরকে তাঁর গ্রন্থাদি এবং মাওয়াক্বিফ থেকে শিক্ষা নেওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৪১৮ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই বরগুইবা রোজা রাখা নিষিদ্ধ করেছিলেন। আজকে সে কোথায়।
হ্যাঁ,বূরক্বীবাহ এখন মাঠির নিচে। যেখানে দাদা-বাবুদের ক্ষমতা চলে না।
ভালো লাগলো। ইনার সম্বন্ধে প্রথম জানলাম। জাজাকাল্লাহু খাইরান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন