আরো একটি তারা ঝরে গেল!
লিখেছেন লিখেছেন ভিনদেশী ২৪ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:৫০:১৯ দুপুর
শাইখ ডক্টর মুহাম্মদ রাউয়াছ কাল-আজী। উম্মাতের ঐ সব ধন্য রত্নদের একজন যাদেরকে আল্লাহ তা'য়ালা জ্ঞান দান করেছেন এবং তারা সে জ্ঞানকে উম্মাতের খেদমতে আজীবন বিলিয়ে গেছেন। যশ-খ্যাতির আশা ত্যাগ করে আজীবন যেমন গোপনে, নিভৃতে, পর্দা আড়ালে থেকে কাজ করে গেছেন। তেমনি গোপনে এ ধরা ত্যাগ করেছেন। আশি বছরের এই সিরিয়ান জ্ঞান সাধক গতকাল কুয়েতে ইন্তেকাল করেন।
ইন্না লিল্লাহি ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
২০১০ সালের শেষের দিকে আমাদের শিক্ষক, ইসলামি অর্থনীতির প্রসিদ্ধ লেখক প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মদ উসমান শুবাইরের মাধ্যমে ড. কাল-আজীর গ্রন্থের সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ হয়। তিনি প্রসিদ্ধ 'ফিক্হ বিশ্বকোষ' الموسوعة الفقهية الكويتية - সম্পাদনা কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। (হয়তো) এ বিশ্বকোষ সম্পাদনার কাজ করতে গিয়ে তিনি দেখতে পান, ফিকাহ শাস্ত্রে উম্মাতের খেদমতের এক বিশাল ময়দান পড়ে আছে। আর সে ময়দান হলো, পূর্ববর্তী মুজতাহিদ ইমামদের ফিকহ্কে আলাদাভাবে একত্রিত করা। অতন্ত কঠিন ও দূরহ যে কাজটিতে ইতিপূর্বে কেউ হাত দেননি বা সাহস করেননি। উম্মাতের খিদমতের অদম্য আগ্রহ ও নেশা ড. কিল-আজীকে সেই কঠিন ও দূরহ কাজে হাত দিতে প্ররণা দেয়। তিনি নিজেকে এ কাজের জন্য উৎসর্গ করেন। কঠিন শ্রম ও বিপুল সময় মাধ্যমে এ কঠিন কাজগুলো একের পর সম্পাদন করেন। এবং ইসলামি পাঠাগারে যোগ হতে থাকে দুর্লব সব গ্রন্থ ও প্রমান্য তথ্যসূত্র। তাঁর আজীবন শ্রম ও কষ্টের ফসল হিসেবে মুসলিম উম্মাহ পেল 'ফিকাহ্ বিশ্বকোষ সিরিজ' -এর মতো মূলবান গ্রন্থগুলো। যেমন:
موسوعة فقه أبي بكر رضي الله عنه
موسوعة فقه عمر رضي الله عنه
موسوعة فقه عثمان رضي الله عنه
موسوعة فقه علي رضي الله عنه
موسوعة فقه عمر بن عبد العزيز
موسوعة فقه الأوزاعي
موسوعة فقه الليث بن سعد
موسوعة فقه ابن تيمية
الموسوعة الفقهية الميسرة
এ ছাড়াও তাঁর লিখিত আরো বহু গ্রন্থ রয়েছে। হয়তো তার মধ্যে সবচে' প্রসিদ্ধ গ্রন্থ معجم لغة الفقهاء । ড. কিল-আজী ও ড. হামিদ সাদিকের যৌথ প্রচেষ্টায় এটি লিখিত হয়েছে। বলতে গেলে এ গ্রন্থটিও একটি বিশাল (আরবী-ইংরেজী) "ফিক্হী শব্দকোষ"।
ফিকাহর গ্রন্থগুলোতে ব্যবহারিত কঠিন পরিভাষাগুলোকে সময়োপযোগি ও সহজ করে তোলার ক্ষেত্রে এ মূল্যবান ফিকাহ্-অভিধানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ও রাখবে ইনশা-আল্লাহ।
আশি বছরের দীর্ঘ সফরের ক্লান্ত পথিক গতকাল পথ ধরেছেন ভিন্ন সফরের। এ ধরা থেকে প্রস্থান হলো একটি পূণ্যবান আত্মার। এতোক্ষণে হয়তো আমাদের প্রিয় শাইখ কাল-আজীর দেহ স্থান পরিবর্তন করেছে। মাঠির উপর থেকে চলে গেছে নিচে। কিন্তু তার মহাকর্মগুলো মাধ্যমে বহু জ্ঞান পিপাসু যুগে-যুগে উপকৃত হবে। মাঠির নিচে শুয়ে তিনি পেতে থাকবেন এর ছাওয়াব! কতো মহান সৌভাগ্য! কতো লাভবান তেজারত!
হে আল্লাহ আপনি নিজ অনুগ্রহে তাকে জান্নাতের সূউচ্চ মাক্বাম দান করুন। আমাদেরকেও তাঁর সঙ্গে আপনার জিয়াফত খানায় একত্রিত করুন। আমার মতো তাঁর এক নগন্য পাঠকের এটাই কামনা। করুণা করুন মাওলা। আপনি-ই একমাত্র করুণাময়। দয়াময়।
বিষয়: বিবিধ
৯৫১ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খুব খারাপ লাগলো। যে ক'জন উলামা নিয়ে আমরা গর্ব করতাম তাদের আরেক জন চলে গেলেন। আল্লাহ তাকে উত্তম জাযা দান করুন, তার রূহ কে উচ্চতম ইল্লিয়্যীনে স্থান দান করুন।
তার জীবন ও কর্মের উপর আরো একটু বিস্তারিত লিখলে উপকৃত হব। আল্লাহ আপনাকেও জাযায়ে খায়র দান করুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন