নবজীবনের পথে... পর্ব-৪
লিখেছেন লিখেছেন ভিনদেশী ০২ মার্চ, ২০১৪, ০৩:৩৯:৫৯ রাত
মিলানি জরজিয়াডিস্ ডায়াম’স। খ্যাতিমান ফরাসি র্যাপ (Rap) গায়িকা। উনিশ বছর বয়সে ‘রাপ মিউজিকে’র চাকচিক্য জগতে পা রাখেন। সুন্দর দৈহিক গঠন, চমৎকার বাচনভঙ্গি, সুললিত কণ্ঠ ও মনভোলানো রূপের জোরে, অল্প সময়ে ‘র্যাপ মিউজিক’ জগতে নিজের অবস্থান গড়ে নেন। ২০০৬ সালে প্রকাশিত তার একটি এ্যালবাম (এক বছরে) এক মিলিয়ন কপি বিক্রিত হয়! টাকাকড়ি, যশ-খ্যাতি ও মান-মর্যাদা পায়ের কাছে গড়াগড়ি দিলেও ডায়াম’স –এর জীবনে ‘সুখ’ ছিল না। কোনো এক অজানা দুঃশ্চিন্তা তার জীবনকে অসহনীয় করে তোলে। প্রতি সপ্তাহে তিনি ‘সাইকিয়াট্রিক ক্লিনিক বা মানসিক হাসপাতালে’ যাওয়া আসা করেন। কিন্তু কোনো ফায়দা হয় না! সুখ নামক পায়রার দেখা যেন তার জীবনে আসে না!
২০০৭ সালের শুরুতে হঠাৎ ডায়াম’স মিউজিক জগত থেকে উধাও হয়ে গেলেন! তার ভক্তকুল অস্থির হয়ে পড়ে। মহা মূল্যবান বস্তু হারানোর মতো ভক্তরা তার খোঁজে নেমে পড়ে! কিন্তু তার যে দেখা নেই! কোথায় ডায়াম’স? কোথায় তার নিত্যনতুন এ্যালবাম? দীর্ঘ দিন তার সন্ধান না পেয়ে যখন ভক্তরা আশা ত্যাগ করতে বসেছে। ঠিক তখনই ডায়াম’সের আবির্ভাব হলো!
দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর পর তাকে আবার দেখা গেল পরিচিত টিভিপর্দায়। তবে আগের মতো মনমাতানো, কান ফাটানো দেহ-স্বরে নয়। ঢাকা গায়ে, শান্ত সুরে! ফ্রান্সের প্রাইবেট টিভি ‘টি এফ ওয়ানে’র পর্দায় ভেসে ওঠা আজকের ডায়াম’স এবং অতীতের ডায়াম’সের মধ্যে কোনো মিল নেই! দু’টি ভিন্ন জীবন বা দু’টি ভিন্ন মানব!
টিভি পর্দায় তার স্পষ্ট স্বর শোনা গেল-
‘আমি আর আগের ডায়াম’স নই। যে পর-পুরুষের সামনে নাচতো-গাইতো! যে অন্যের মনোরঞ্জনে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিতো! সে উন্মাদ ডায়াম’সের কবরের উপর রচিত হয়েছে নতুন ডায়াম’সের জীবন। এখন সে এক নতুন জগতের নতুন বাসিন্দা। যে জগতে নেই নির্লজ্জতা! বেহায়াপনা! যে জগত পবিত্র! যে জগত স্বচ্ছ! যে জগতে এসে রাতে ঘুমানোর জন্য তাকে মানসিক ডাক্তারের ধরণা দিতে হয় না! শুধু তাই নয়, এখন সে এক পরিপূর্ণ দর্শনের অধিকারী। যে দর্শন ‘দুনিয়া-আখিরাত’কে ভিন্ন চোখে দেখে না। যা দুনিয়াকে বিবেচনা করে আখিরাতের মূলধন হিসেবে। জীবন নামের যে শ্রোত বেয়ে, মানব সন্তানের দুনিয়ায় আগমণ। সে শ্রোতের যাত্রা এখানে শেষ নয়। তার চলার পথ আরো দীর্ঘ। আরো বিস্তীর্ণ। এপারের সকল কাজের ‘হিসাব-নিকাশ’ শেষে ওপারে গিয়ে শেষ হবে তার পথচলা।’
ডায়াম’সের এ অভাবনীয় পরিবর্তনে ভক্তরা হতাশ হলেন। অবাক হলেন! হলেন হতবাক! তারা নিশ্চিত ডায়াম’স তার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েছে! তার মতিভ্রম হয়েছে! ফ্রান্স হারিয়েছে এক অমূল্য সম্পদ! হায় হায়! একী হলো!!
ডায়াম’সের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি বলে চলছেন নবজীবনের আকর্ষণীয় কাহিনী! সফল যাত্রার গল্প! তার কাছেই শোনা যাক সে চমৎকার ঘটনা।
ডায়াম’স বলেন-
‘এক অনুষ্ঠান শেষে, আমার এক মুসলিম গায়িকা বান্ধবীর সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছি। এমন সময় সে বলে উঠল- ‘আমি সালাতে যাচ্ছি, একটু পর ফিরে আসবো’
আমি বললাম- ‘আমিও যাব তোমার সঙ্গে!’
এ কথা বলে আমি তার পিঁছু নিই। মসজিদে গিয়ে তার মতো সালাত আদায় করি! সিজদা দিই! জীবনে এই প্রথম আমার কপাল মাটির স্পর্শ পেল! অন্তরে এক ভিন্ন রকম স্বাদ অনুভূত হলো! এ জীবনে কখনো এমন স্বাদ অনুভব করিনি! আমার বুঝে আসে, এক আল্লাহ ছাড়া আর কারোর জন্য ইবাদত হতে পারে না!’
‘শাহাদাহ’ পাঠ করে ডায়াম’স তার অভিশপ্ত জীবন ছেড়ে ইসলামের ছায়াতলে প্রবেশ করেন! এক নবজীবনের পথে যাত্রা শুরু করেন! সে এখন একজন মুসলিমাহ! আল্লাহর এক খাঁটি বান্দা! ফিরে আসা পলাতক বান্দা! যে কিনা অনেক দিন তাঁর পথ থেকে পালিয়ে ছিল! অবশেষে আল্লাহ তা’য়ালা ‘সিজদা’ নামক বেড়ি পড়িয়ে তাকে নিয়ে আসলেন! বেড়ি পড়ে আমাদের ডায়াম’স যার পর নাই খুশি! নবজীবনের সন্ধান পেয়ে তিনি এত খুশি, র্যাপ মিউজিকের প্রতি আগ্রহই হারিয়ে পেললেন! তিনি আর ঐ পাপাচারের পথে যাবেন না! পরপুরুষের সামনে আর নাচ-গান করতে নামবেন না! পরপুরুষ নামক বহুরূপীদের সামনে নিজেকে বলি দিবেন না! কারণ, এখন তিনি একজন মুসলিমাহ! একজন সত্যিকারের মুসলিমাহ কখনো ওসব গর্হিত কাজ করতে পারে না! সম্পদের বিনিময়ে নিজের সত্ত্বাকে বিকিয়ে দিতে পারে না! প্রসিদ্ধির আশায় নিজের চরিত্রকে বিলীন করতে পারে না! তিনি শপথ নিলেন। দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলেন। অনেক হয়েছে পাপাচার! ওপথে আর সামনে যাওয়ার সুযোগ নেই! নির্লজ্জতার জীবন এখানে শেষ! শেষ বেহায়াপনার জীবন!
ডায়াম’স এখন নিয়মিত সালাত আদায় করেন। ইসলামের অন্যান্য সব বিধি-নিষেধ মেনে চলেন। তবে একটি বিষয়ে তিনি নিজেকে মানিয়ে নিয়ে পারে না। আর তা হলো, ‘পর্দা’।
সারা মাথা ড়েকে, কিভাবে সে ঘর থেকে বের হবেন! কোনোভাবে নিজেকে মানিয়ে তুলতে পারেন না! তিনি চলে গেলন লোকচক্ষুর অন্তরালে! তাকে আর কোথাও দেখা যায় না! দীর্ঘ দিন তার ‘মন ও দ্বীনে’র মধ্যে দ্বন্দ্ব চলতে থাকে! শেষ পর্যন্ত তার দ্বীন জয়ী হয়। তিনি হিজাব পরিধান করেন! তবে, কেন? কিভাবে তিনি জয় করে নিলেন তার আত্মাকে? তার কাছেই থাকবে সদোত্তর।
ডায়াম’স বলেন-
‘একবার একাকী সাগর পাড়ে হাঁটছি। এমন সময় আমার মন বলে ওঠে- ‘ডায়াম’স! এই বিশাল আকাশ-সাগরের মালিক তোমাকে হিজাব পরিধানের নির্দেশ দিয়েছেন। তুমি কিভাবে তার অবাধ্য হবে?’
আমার চোখ থেকে অজ্ঞতার পর্দা সরে গেল। আমি হুঁশ ফিরে পেলাম। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে নিলাম। আজ থেকে হিজাব পরিধান করবো! হিজাবহীন জীবনের এখানেই বিদায়!
২০০৯ সালে ফ্রান্সে যখন ‘হিজাব-বিতর্ক’ তুঙ্গে। ঠিক সে সময় হিজাব পরিহিতা ডায়াম’স টিভি পর্দায় ভেসে ওঠে! গায়েবি সিদ্ধান্তে হিজাব পরিহিতাদের পক্ষে শক্তিশালী মদদ হিসেবে ডায়াম’সের আগমন ঘটে! তিনি স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন- এটা তার ব্যক্তি স্বাধীনতা। তিনি যা ইচ্ছা পরতে পারে। কোনো সরকার বা ব্যক্তির তাকে বাধা দেওয়ার অধিকার নেই।
আল্লাহ তা’য়ালা ডায়াম’সের ইসলামকে কবুল করুন। তাকেসহ সকল মুসলিম নারীকে হিজাব গ্রহণের এবং হিজাবের পথে দৃঢ় পদ থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১০৯১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খুবই প্রীত হলাম জনাব। আন্তরিক শুকরিয়া। তবে পাশাপাশি আমার ভুলগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের অনুরোধ রইল। জাযাকাল্লাহু তা'য়ালা খাইরান আইদান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন