নবজীবনের পথে... পর্ব-৩

লিখেছেন লিখেছেন ভিনদেশী ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৬:০২:২১ সন্ধ্যা

ড. গ্যারি মিলর। এক কানাডিয়ান গণিতবিদ। পাশাপাশি একজন নিষ্ঠাবান খৃস্টান ধর্মপ্রচারক। নতুন চাকরি নিয়ে তিনি এসেছেন সৌদি আরবে। ইসলাম ধর্মের জন্মভূমিতে। একজন ধর্মপ্রচারক হিসেবে তিনি ইসলামের কথা অনেক আগে শুনেছেন। তবে ইসলাম সম্পর্কে জানার বা পড়ার সুযোগ তাঁর হয়ে উঠেনি।

আজ থেকে চৌদ্দ’শ বছর র্পূবে, এই আরব মরুভূমিতে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। তাই ইসলামকে জানার জন্য এরচে’ উত্তম সুযোগ আর হতে পারে না। তিনি সুযোগটি কাজে লাগালেন। পবিত্র কোরআন নিয়ে বসে গেলেন। কোনো নতুন বিষয় বা ব্যক্তি সম্পর্কে যখন আমরা শুনি। তখন কল্পনায় ঐ ব্যক্তি বা বিষয়টির একটি কল্পচিত্র আমাদের চোখে ভেসে ওঠে। বাস্তবতার সাথে সে চিত্রের মিল থাকুক বা নাই থাকুক। ড. মিলরের কল্পরাজ্যেও পবিত্র কোরআন সম্পর্কে একটি চিত্র ফুটে ওঠে।

কেমন সে চিত্র? চলুন তাঁর ভাষায় শুনে নেওয়া যাক।

ড. মিলর বলেন (মূল বক্তব্য) – আমার ধারণা ছিল। কোরআন মুহাম্মদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবনে প্রবাহমান সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যেমন – তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের মৃত্যু ইত্যাদিতে ভরা থাকবে। কোরআন পড়া শুরু করে আমি বুঝতে পারি, বাস্তবতা আমার ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত। আমি আশ্চর্য হয়ে দেখতে পেলাম, কোরআনে মেরির (মারিয়াম আলাইহাস্‌ সালাম) পবিত্রতা ও মর্যাদা তুলে ধরা হয়েছে! তাঁর নামে একটি সূরারও নাম করণ করা হয়েছে! পক্ষান্তরে মুহাম্মদের স্ত্রী-কন্যাদের কারো নামে সূরা নেই! যিশুখৃস্টের নাম কোরআনে পঁচিশবার উল্লেখ করা হয়েছে অথচ মুহাম্মদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নাম এসেছে মাত্র পাঁচবার! এ কেমন বিপরীত ব্যাপার! এমনও কি হতে পারে! বাস্তবতা তো তাই বলে!!!’

তিনি অবাক হলেন! হলেন হতবাক! আগ্রহ নিয়ে তিনি সামনে এগিয়ে গেলেন। তবে একস্থানে এসে থমকে দাড়ালেন! এ কি? এ তো কঠিন চ্যালেঞ্জ! কোরআন বলছে-



أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِندِ غَيْرِ اللَّهِ لَوَجَدُوا فِيهِ اخْتِلَافًا كَثِيرًا ﴿النساء: ٨٢﴾

‘তারা কি লক্ষ্য করে না কোরআনের প্রতি? এটা যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হত। তবে অবশ্যই তারা এতে অনেক বৈপরিত্য দেখতে পেত।’ (সূরা নিছা: ৮২)!!!


ড. মিলর এ আয়াত বারবার পড়ে দেখলেন! এ জীবনে তিনি এই প্রথম পড়ছেন। কোনো গ্রন্থ তার সত্যতার ব্যাপারে এমন চ্যালেঞ্জ ছুটে দিতে! এরূপ একটি কঠিন মূহূর্তে কেমন ছিল তাঁর অনুভূতি? জানতে মন চায়? চলুন তাঁর ভাষায় শুনা যাক।

ড. মিলর বলেন- ‘পৃথিবীতে এ পর্যন্ত এমন কোনো লেখকের জন্ম হয়নি। যিনি নিজ গ্রন্থে কোনো ভুল নেই দাবি করার সাহস দেখিয়েছেন! একমাত্র কোরআন ছাড়া! কোরআন শুধু এ দাবিই করেনি বরং পাঠককে বলেছে- দেখো! কোনো ভুল বের করতে পারো কিনা?’

এমন খোলা চ্যালেঞ্জ দেখে ড. মিলরের উৎসাহ আরো বেড়ে গেল। মনে হয়, তিনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন! দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়!

কোরআনে নিয়ে তাঁর গবেষণা জোর গতিতে চলতে থাকল। কিন্তু অন্য এক স্থানে এসে তিনি থমকে দাড়ালেন! এবার যেন তাঁর উদ্দেশ্যে কোরআন বলছে-



وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ ﴿الأنبياء: ٣٠﴾

‘এবং সব কিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করছি। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?’ (সূরা আম্বীয়া: ৩০)


কোরআনের এবারের আলোচনা তাঁর চির পরিচিত ও সম্পূর্ণ আধুনিক বিজ্ঞানের বিষয়! আজ থেকে চৌদ্দ’শ বছর র্পূবে আরব মরুভূমিতে অবতীর্ণ এই কোরআন, এসব পেল কোথায়? তিনি অবাক হলেন! বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়লেন! বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে ভিন্নভাবে দেখার চিন্তা করলেন! শেষ পর্যন্ত তিনি যা বললেন তা ছিল এই-

‘আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, প্রতিটি কোষের ৮০% উপাদন হলো ‘সাইটোপ্লাজম (Cytoplasm)’ নামক পদার্থ। আর সাইটোপ্লাজমের মূল উপাদন হল পানি। আজ থেকে চৌদ্দ’শ বছর র্পূবে একজন নিরক্ষর লোক কিভাবে বলে গেলেন প্রতিটি জীবের মূল উপাদান হল পানি? যদি তা ঐশীবাণী না হয়!’


ড. মিলর ভাবনায় পড়ে গেলেন! এ পর্যায়ে এসে তিনি নিজের মধ্যে কোরআনের সুস্পষ্ট প্রভাব অনুভব করলেন। কোরআন যেন তাঁকে বলছে- ‘মিলর! আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ছাড়া আমাকে আর কতো পড়বে? আমার প্রতি ঈমান নিয়ে আস। আমি তোমাকে কল্পনাতীত আরো অনেক বিষয় শিক্ষা দিব। এতো মাত্র শুরু! তুমি দেখবে, কীভাবে আমি তোমার পুঞ্জিভূত হাজারো প্রশ্নের সদোত্তর দিই!’

কোরআনের এমন সম্মোহনী ডাকে তিনি সাড়া দিলেন। ১৯৭৭ সালের কোনো এক শুভক্ষণে তিনি কোরআনের সঙ্গে একাত্বতা ঘোষণা দিয়ে ইসলামের সুশীতল ছাঁয়া তলে আশ্রয় নিলেন!



এবার কোরআনের দেখানো নতুন জীবনপদ্ধতি অনুসারে তিনি শুরু করলেন নবজীবনের পথচলা। নিজেকে কোরআনের একজন নিষ্ঠাবান প্রচারক হিসেবে নিয়োজিত করার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে নিলেন। বাকি জীবন তিনি কোরআনের মহত্ব অস্বীকারকারী, ইসলামের সত্যতা অস্বীকারকারীদের সঙ্গে বাহাছ-মোবাহাছা ও তর্ক-বিতর্ক এবং ইসলাম-কোরআনের প্রতি দাওয়াত ও আহবানে কাটিয়ে দিলেন।

বিশ্বখ্যাত মুসলিম মনীষী শাইখ আহমাদ দীদাতও তাঁর মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন।

আল্লাহ তা’য়ালা নিজ অনুগ্রহে ড. গ্যারি মিলরের ইসলামকে কবুল করুন। আমাদেরকেও জান্নাতে তাঁর সঙ্গে মিলিত হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।

ড. গ্যারি মিলর (কোরআন এক বিস্ময়কর গ্রন্থ)

বিষয়: বিবিধ

১০৬৭ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

184489
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৩
জেদ্দাবাসী লিখেছেন :

মাশাল্লাহ! অসাধারন উপস্তপনা আপনার । লেখাগুলো বই আকারে প্রকাশ করুন , অনেকের উপকার হবে।


যাজ্জাকাল্লাহ খায়ের

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৯
136560
ভিনদেশী লিখেছেন : ওইয়্যাকুম (আপনাকেও আল্লাহ তা'য়ালা উত্তম প্রতিদান দান করুন)।
গুরুত্বপূর্ণ উপদেশের জন্য আন্তরিক শুকরিয়া। ইনাশা-আল্লাহ এ ব্যাপারে পরে চিন্তা করে দেখব।
ধন্যবাদ।
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৭
136585
জেদ্দাবাসী লিখেছেন : ড. গ্যারি মিলর সাহেবের ছবির উপরে "কোনোআনের" শব্দটা একটা "র" দিয়ে টাইপিং ভুলটা ঠিক করে দিন । ধন্যবাদ
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:০৩
136593
ভিনদেশী লিখেছেন : আন্তরিক শুকরিয়া জনাব। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
184494
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪১
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : আল্লাহ তা’য়ালা নিজ অনুগ্রহে ড. গ্যারি মিলরের ইসলামকে কবুল করুন। আমাদেরকেও জান্নাতে তাঁর সঙ্গে মিলিত হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমী
পোস্টার জন্য অনেক ধন্যবাদ
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১১
136561
ভিনদেশী লিখেছেন : পড়ার ও মন্তব্যের জন্য আপনাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ জনাব। আল্লাহ তা'য়ালা সকল মুসলমানের জন্য কল্যাণের ফায়সালা করুন। আমীন।
184507
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫১
শেখের পোলা লিখেছেন : চমৎকার উপস্থাপনার গুনে সত্য বিষয়টি আরও প্রাঞ্জল হয়ে উঠেছে৷ জাজাকাল্লাহ৷
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৩
136564
ভিনদেশী লিখেছেন : উৎসাহমূলক মন্তব্যের জন্য আন্তরিক শুকরিয়া জনাব। আশাকরি একজন মুসলিম ভাই হিসেবে আমার ভুলগুলোর ব্যাপারে জানালেও খুশি হব। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২১
136571
শেখের পোলা লিখেছেন : সুরা আম্বিয়াঃ ৩০ আয়াতের নীচে যে প্যারা তাতে লিখেছেন 'ভিতশ্রদ্ধ' ওটা বীতশ্রদ্ধ হবে৷ ধন্যবাদ হয়তো টাইপে ভুল হতে পারে৷ আপনি অনুমতি দিলেন তাই বললাম৷
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:০১
136592
ভিনদেশী লিখেছেন : আন্তরিক শুকরিয়া জনাব।Good Luck Good Luck Good Luck
184534
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৩
মেঘ ভাঙা রোদ লিখেছেন : আল্লাহ তা’য়ালা নিজ অনুগ্রহে ড. গ্যারি মিলরের ইসলামকে কবুল করুন। আমাদেরকেও জান্নাতে তাঁর সঙ্গে মিলিত হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।
184571
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৫১
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম, জাজাকাল্লাহুল খাইরান, অনেক সুন্দর পোস্ট
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:১১
136620
ভিনদেশী লিখেছেন : ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়ারাহ্‌মাতুল্লাহ ওয়াবারাকাতুহু। ওইয়্যাকা (আপনাকেও আল্লাহ তা'য়ালা উত্তম বদলা দিন।
পড়ার ও সুন্দর উৎসাহমূলক মন্তব্যের জন্য আন্তরিক শুকরিয়া।
184619
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:৪১
সজল আহমেদ লিখেছেন : যাযাকাল্লাহু খাইরান।
০১ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৭
136996
ভিনদেশী লিখেছেন : ও-ইয়্যাকা (আপনাকেও)। পড়ার ও মন্তব্যের আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। Good Luck Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File