নবজীবনের পথে... পর্ব-২
লিখেছেন লিখেছেন ভিনদেশী ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৫:৫২:৪৫ বিকাল
মেরি ওয়াটসন। একজন ফিলিপাইনি নারী ধর্মপ্রচারক। আমেরিকায় থেকে উচ্চডিগ্রী নেওয়ার পর স্বদেশে ফিরে এসে “ধর্মতত্ত্ব” বিষয়ে আবার উচ্চডিগ্রী নেন। ফিলিপাইনের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে “ধর্মতত্ত্ব” বিষয়ের শিক্ষক নিযুক্ত হন। ধর্মপ্রচার, অধ্যাপনা এবং বিভিন্ন টিভিপ্রোগ্রামে খৃষ্টবাদের প্রচারসহ পরিরার-পরিজন নিয়ে বেশ সুখে কাটছে তার জীব!
একদিন তিনি খবর পেলেন তার এক ধর্মপ্রচারক বন্ধু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে! তিনি ছুটে গেলেন তাকে রক্ষা করতে! কিন্তু সে কি আর ফিরে আসার লোক! ‘দুনিয়া-আখিরাতে’র প্রতি যে ভিন্ন স্বাদ তিনি (এখন) অনুভব করছেন! তা ছেড়ে কি আগের কঠিন জীবনে ফিরে যাওয়া সম্ভব! না, তিনি অটল রইলেন ইসলামের উপর। এবং মানুষকে ইসলামের প্রতি আহ্বান করে যেতে লাগলেন।
ব্ন্ধুর এই অটল বিশ্বাস মেরিকে ভাবিয়ে তুলে। একজন খৃষ্টবাদের প্রচারক হয়ে কেন সে ইসলাম কবুল করতে গেল? ইসলামে এমন কী বিষয় আছে! যা তাকে আকর্ষণ করতে সক্ষম হলো? তাহলে কি এ ধর্ম আমাদের জানা ইসলামের চেয়ে ভিন্ন? এতে কোন গোপন রহস্য আছে কী? যা একজন ভিন্ন ধর্মের প্রচারককেও আর্কষণ করতে সক্ষম? কিভাবে অল্প সময়ের ব্যবধানে ইসলামের প্রতি তার এতো দৃঢ় বিশ্বাস তৈরি হলো? এ রকম হাজারো প্রশ্নরা তাদের মন তীরে এসে ধাক্কা খেতে লাগলো।
বেচারী মেরির কাছে এর কোন সদুত্তর নেই। কিন্তু মন যে মানছে না! সহস্য উৎঘাটনে দিগ্বিদিক ছোটোছুটি করছে! কার কাছে এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়া যাবে! ওহ্, আমার আরেক বান্ধবী ইতিপূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছে। তাকে জিজ্ঞেস করা যেতে পারে। যে ভাবা সে কাজ। তিনি বান্ধবীর কাছে গেলেন এবং মনের সব কথা খুলে বললেন। বান্ধবী তাকে এক ইসলামিক সেন্টারে নিয়ে গেল। ইসলামিক সেন্টারের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে খৃষ্টবাদের উপর তার দীর্ঘালাপ হয়। খৃষ্টবাদ সম্পর্কে তার গভীর জ্ঞান দেখে সেন্টারে দায়িত্বশীলগণ আশ্চর্য হলেন। তবে একটি বিষয় তাদের ভেবে তোলে, তা হলো ইসলামের ব্যাপারে মেরির ব্যাপক ভুল ধারণা! ইসলাম সম্পর্কে তার জ্ঞান একেবারে বাস্তবতা বর্হিভূত! আলোচনা শেষে তাকে ইসলাম সর্ম্পকে কিছু বই দেওয়া হয়। বইগুলো সে সঙ্গে নিয়ে যায় এবং মনোযোগ সহকারে পড়ে দেখে। এ প্রথম তিনি কোন মুসলিম লেখকের লিখিত ইসলাম সম্পর্কিত বই পড়ছেন! তিনি বইগুলোর এক একটি পাতা পড়ছেন আর আশ্চর্য হচ্ছেন। এতো দেখা যায় সম্পূর্ণ বিপরীত কথা। ইসলাম নারীকে ঘরে আটকে রাখে! তাদের পড়াশোনার সুযোগ দেয় না! ইসলামের শিক্ষা অনুসারে স্বামীরা স্ত্রীদের সঙ্গে খুবই খারাপ আচরণ করে! আরো কতো কিছু তিনি পড়েছেন! এতো দেখা যায় সম্পূর্ণ বিপরীত কথা! বই ক’টি পড়ে তাঁর মধ্যে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মালো, খৃষ্টান লেখকরা ইসলাম সর্ম্পকে সম্পূর্ণ ভুল তথ্য দিয়ে থাকে! যেন ইসলামের প্রতি মানুষের অন্তরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়!
এক সপ্তাহে তিনি ইসলাম সম্পর্কে আরো কিছু বই পড়লেন এবং ইসলাম কবুল করার সিদ্ধন্ত নিয়ে নিলেন! যে সত্যের সন্ধান তিনি পেয়েছেন! আর কি দেরি করা যায় না! এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিনি পূর্বপুরুষদের হাজার বছরের লালিত ধর্ম ত্যাগ করে ইসলামে ছায়া তলে আশ্র্রয় নিলেন! এখন তিনি একজন মুসলিমা। তিনি আর মেনি নন বরং খদীজা! সেই মহিয়সী নারী। যিনি প্রথম ইসলাম কবুলের সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। ইসলাম প্রচারে যার কঠিন অবদানের কথা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজীবন বলে গেছেন। তাঁর পবিত্র নামে নিজের নামকরণ করলেন! এবং শুরু করলেন এক নতুন জীবনধারা। যার সাথে পূর্বের জীবনের কোন মিল নেই।
এই পবিত্র জীবনের সন্ধান পাওয়ার পর কি তিনি খৃষ্টবাদের উপর অধ্যাপনা করতে পারেন? না, কখনো নয়। তাই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরি ত্যাগ করলেন। বাকী জীবন ইসলাম প্রচারে অতিবাহিত করার সিদ্ধান্ত নিলেন। ফিলিপাইনের এক ইসলামিক সেন্টারের মাধ্যমে তিনি ইসলাম প্রচারের কাজ চালিয়ে যেতে শুরু করলেন।
কিছুদিন পর তার ছেলে ক্রিস্টোফার ইসলাম কবুল করে এবং ‘উমর’ নাম গ্রহণ করেন! তিনি মহান আল্লাহ তা’য়ালার দো’য়া করছেন, যেন তার অন্য সন্তানরা ইসলাম কবুল করে ধন্য হয়। আল্লাহ তা’য়ালা তাওফীক দান করুন। আমীন।
এক বছর পর সৌদি আরবের ক্বসীম শহরের ‘ইসলামিক সেন্টারে’ ফিলিপাইনি ভাষার দা’য়ী (ইসলাম প্রচারক) হিসেবে তার ডাক আসে! সেই আরবের ডাক! যেখানে ইসলামের আগমন! যেখানে প্রথম প্রচার হয়েছে ইসলামের শিক্ষা! তাই আর দেরি নয়! তিনি পাড়ি জমালেন আরবভূমির উদ্দেশ্য! জাজীরাতু আরবের উদ্দেশ্যে! কা’বার উদ্দেশ্যে!
আল্লাহ তা’য়ালা তাকে কবুল করুন। আমাদের সকলকে ইসলামের উপর দৃঢ় পদ থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন।
Click this link
বিষয়: বিবিধ
১১২৫ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তুমি সূর্যকে দেখবে, যখন উদিত হয়, তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডান দিকে চলে যায় এবং যখন অস্ত যায়, তাদের থেকে পাশ কেটে বামদিকে চলে যায়, অথচ তারা গুহার প্রশস্ত চত্বরে অবস্থিত। এটা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্যতম। আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, সেই সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না।
হে আল্লাহ! আপনি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করুন। আমীন।
পড়ার এবং পবিত্র আয়াতটি অনুবাদসহ দেওয়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহু তা'য়ালা খাইরান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন