হিজাব... (মিশরীয় কথাশিল্পী মান্ফালুতীর বাস্তবতা সমৃদ্ধ কাল্পনিক কথোপকথন)
লিখেছেন লিখেছেন ভিনদেশী ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৩:০৮:১৩ রাত
আমার পরিচিত এক ভদ্রলোক ছিলেন। তার 'ধর্ম-কর্ম' কিছুই নীতি বিরুদ্ধ ছিল না। এক সময় সে ইউরোপে পাড়ি জমায়। কয়েক বছর পর আবার ফিরে আসে। এ সময়ে তার মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসে! এখন আমার বহু পরিচিত ভদ্রলোকটি নেই! ভিন্ন জগতের এক বাসিন্দা!
আগে তার চেহারা দেখলে মনে হতো যেন বাসররাতের নববধু... আর এখন! যেন বৃষ্টিরাতে ভেজা পাথরমুখ!
সে পাড়ি দিয়েছিল এক স্বচ্ছ ও পবিত্র আত্মা নিয়ে ... যে কিনা সদা ক্ষমা-মার্জনা দেখাতে ভালবাসত... আর এখন? এখন তার উপর যেন চেপে বসেছে কোন অনিষ্টকর বহিরাত্মা। যা সদা পৃথিবী ও তার অধিবাসীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। শুধু তাই নয়... আসমান ও তার স্রষ্টার বিরুদ্ধেও তার ক্রোধ যেন শেষ হয় না!
এক বিনয়ী-নিঃঅহংকারী আত্মা নিয়ে গেল... যে সবাইকে নিজের চেয়ে উত্তম ভাবতো। আর ফিরে এল এক ভয়ংকর অহংকারী সত্ত্বাতে কাঁদে নিয়ে। যে কিনা কারো বড়ত্ব মেনে নিতে নারাজ! ছোটদের প্রতিও তার নেই দয়াপ্রবণা!
বুদ্ধিদীপ্ত মাথায় গিয়েছিল... আর ফিরে এলো যেন এক ভাষ্কার্যের মাথা নিয়ে, যা দিয়ে অনবরত 'বাতাস' বইতে থাকে!
যাওয়ার মুহুর্তে তার কাছে 'স্বধর্ম ও স্বদেশ' ছিল দুনিয়ার সবচে' প্রিয়। আর এখন? এখন তার চোখে এ দুটির চেয়ে ঘৃণার পাত্র যেন আর কিছুই নেই!
আমার এতোদিনের ধারণা, 'পাশ্চাত্য ফেরৎ' এসব দুর্বল প্রকৃতির লোকগুলোর মধ্যে যে অদ্ভুত পশ্চিমা প্রভাব দেখা যায়। তা তাদের গায়ে মাখা কৃর্তিম রং। সূর্যের স্পর্শে এসে যা অতি দ্রুত খসে পড়বে। তাদের চোখে পাশ্চাত্যের যে অবয়ব, আয়নার সামনে দাড়াঁনো ব্যক্তির আয়নার ভেতর দেখা প্রতিকৃতির মতো। আয়না থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলেই যা মুহুর্তে অদৃশ্য হয়ে যায়।
এ আশা বুকে বেঁধে আমি ঐ বন্ধুর সঙ্গ ত্যাগ করিনি। পুব-সম্পর্কের সম্মান দেখিয়ে আমি তাকে মূল্যায়ন করে চলেছি।
এতটুকুন আশা বুকে ছিল যে, নিকট অতীতে সে আগের অবস্থানে ফিরে আসবে। তাই আমি নিরবে তার অদ্ভুত, বোকা, নির্বোধ ও সংশয়পূর্ণ সব আচার-আচরণ এবং দৃষ্ট-ভঙ্গি শয়ে গেলাম। অথচ তা আমাকে খুবই কষ্ট দেয়। তারপরও চোখ বুঝে সহ্য করেছি। এক রাতে সে আমার কাছে তার নিকৃষ্টতম চিন্তা-চেতনা' নিয়ে হাযির। আর এটাই ছিল আমার সাথে তার সর্বশেষ সাক্ষাত...
আমি তার ঘরে গিয়ে দেখতে পেলাম, সে মলিন মুখে বাকরুদ্ধাবস্থায় বসে আছে!
সালাম দিলাম।
সে ইঙ্গিতে সালামের উত্তর দিল।
জিজ্ঞেস করলাম- কী সমস্যা?
উত্তর দিল- 'গতরাত থেকে আমি এই মহিলাকে নিয়ে সীমাহিন যন্ত্রনায় ভুগছি। কিভাবে যে হাঁফছেড়ে বাচঁবো! ভেবে পাচ্ছি না! আমার কি দশা হবে ভেবেই পাচ্ছি না!
- কোন মহিলার কথা বলছ?
- মানুষ যাকে বলে আমার বউ আর আমি বলি 'আমার আশা-আকাঙ্কার পথে' বাধার পাথর!
- তোমার তো আশা-আকাঙ্ক্ষার শেষ নেই। নতুন করে আবার কোন আকাঙ্ক্ষার কথা বলছো?
- এ জগতে আমার একটি মাত্র আশা। আর তা- 'আমি শেষবারের মতো চোখ বন্ধ করে খুলব আর এ দেশে 'বোরকা' নামক কিছুর অস্তিত্ব দেখতে পাবো না!
- এটা অসম্ভব। এ ব্যাপারে তোমার মতের কোন মূল্যায়ন নেই।
- অনেকে আমার সঙ্গে একমত পোষণ করে। বোরকার ব্যাপারে তাদের একই মত। নারীরা নিজেদের মধ্যে যেমন খোলামেলা বসে। গল্প-গুজব করে। পুরুষদের সামনেও তারা তেমন খোলামেলাভাবে বসবে এবং আড্ডা দিবে! এতে সমস্যাটা কোথায়! কিন্তু আমাদের প্রাচ্যজগতটাই এমন যে, এখানে কেউ সাহস নিয়ে কোন নতুন বিষয়ে এগুতে পারে না। দুনিয়ার সব অক্ষমতা, দুর্বলতা এবং পরোভয় তার ঘাড়ে চেপে বসে! আমি সে ব্যক্তি হতে চাই যে, 'এই প্রচলিত সেকেলে কুটিরে প্রথম আঘাতটি হানবে!' যা যুগ-যুগ ধরে জাতির উন্নতি ও সফলতার পথে অন্তরায় হয়ে আছে! আমার হাতেই রচিত হবে এমন এক নবপ্রাসাদ যা পূর্বের কোন স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তাধারীর মাধ্যমে সম্ভবপর হয়নি!
এ উদ্দেশ্যে, আমি বিষয়টি আমার স্ত্রীর সামনে তুলে ধরেছি। কিন্তু সে বিষয়টাকে এমনভাবে 'ইনিয়ে-বিনিয়ে' বড় করে ফেলল, যেন আমি দুনিয়ার সবচে' বড় বিপদ সংক্ষেত নিয়ে তার সামনে উপস্তিত হয়েছি! তার মতে, 'পরপুরুষের সামনে এভাবে একবার গেলে লজ্জায়-শরমে সে কোনদিন মেয়েদের সামনে যেতে পারনে না!'
আমার বুঝে আসে না, এতে লজ্জা-শরমের কি আছে! এটা এক প্রকার নিচুতা, একঁগুয়েমি এবং বিচার-বুদ্ধির মৃত্যু ছাড়া কিছু না। যা স্রষ্টা এদেশের নারীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে! মৃত্যু পর্যন্ত নারীরা এ দুনিয়ার 'পর্দা আর ওড়না' নামক অন্ধকার কবরে বাস করবে। মৃত্যুর পর সাখোঁ পার হয়ে এপারের কবর থেকে ওপারের কবরে চলে যাবে...
আমাকে আমার বাসনা পূরণ করতেই হবে। এ অদ্ভুত-ভুঁতুড়ে মাথার প্রতিকারের ব্যব্স্থা করতেই হবে। আমার ইচ্ছা মতো হয়তো তা সুস্থ হয়ে উঠবে অন্যতায় সে মাথা আমি ভেঙে গুড়িয়ে দেব! এ ছাড়া তৃতীয় কোন পথ আমার জানা নেই...
চলবে
বিষয়: বিবিধ
১০৭৩ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন