এ কেমন পাঠ নিমগ্নতা!
লিখেছেন লিখেছেন ভিনদেশী ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৩:৫২:০০ রাত
আমরুল্লাহ আফানদী। এক কালের তুরস্কের শিক্ষামন্ত্রী ও তুর্কী ইতিহাসকোষের লেখক।
একজন পাঠপ্রেমিক আদমী। জীবনীকাররা তাঁর পাঠ নিমগ্নতার বহু ঘটনা লিখেছেন। আরবী সাহিত্যের বুড়ো সাধক শাইখ তানতাভী (রহ.) ও বিভিন্ন লেখায় তাঁর সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
একবারের ঘটনা। আফানদী সাহেব নৌকায় চড়ে চাকরীস্থলে যাচ্ছেন। সঙ্গে চির পরিচিত বন্ধু 'বই' সাহেব। নৌকায় উঠেই 'বইবন্ধু'র সঙ্গে একান্ত আলোচনায় ডুবে গেলেন। তাঁর পাশে বসেছে এক ইংরেজ ভদ্রলোক। এক সময় নিজের অজান্তে আফানদী সাহেবের হাত পাশের সিটে বসা ইংরেজ ভদ্রলোকের পকেটে চলে যায়!? ভদ্র লোকের পকেটে ছিল কাজু বাদাম। পাঠপ্রেমিক আফানদী জানেন না এটা তাঁর পকেট না। ইংরেজ ভদ্রলোকের পকেট। নৌকায় বসে পড়া এবং পড়ার ফাঁকে বাদাম খাওয়া। এতো এক শিল্প! তাই আমাদের আফানদী সাহেব দেরি করলেন না! শিল্প চর্চার প্রতি মনোযোগ দিয়ে বাদাম মুখে দিলেন! ইংরেজ মনে করলেন, এ লোক রসিকতা করছে। তাই তিনি জিজ্ঞেস করলেন- 'জনাব! বাদাম কেমন?'
আফানদী- খুবই স্বাদ!
এ বলে তিনি চালিয়ে যেতে লাগলেন! ইংরেজ বেচারা দেখলেন 'এ ভদ্রলোক আজ বাদামের গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়বেন!' ওই দিকে ঘরে বাদামের অপেক্ষায় বসে আছে তার শিশু বাচ্চারা। নৌকায় এতো জ্যাম, উঠে অন্য কোথায় গিয়ে বসবেন। সে ব্যবস্থাও নেই। কী করা যায়!
চোখেমুখে জ্ঞানের আভা ছড়িয়ে পড়ছে এমন একজন লোককে তিনি কী বলে বাদামগুলো রক্ষা করবেন খুঁজে পাচ্ছেন না! শেষ পর্যন্ত তিনি (আফানদী সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে) বললেন- 'বাদাম ছাড়া বাসায় গেলে বাচ্চারা কান্না করে। এদিকে আমার বাসার পাশে কোন দোকানও নেই'।
(পাঠবিভোর আফানদী) বলে উঠলেন- আশ্চর্য!
তারপরও খাওয়া বন্ধ করছেন না!
ইংরেজ মহা বিব্রতকর অবস্থায় পড়লেন। এ লোক তো একটি বাদামও রাখবে না মনে হয়।
যাক কি আর করা। লজ্জার মাথা খেয়ে এবার তিনি আরো স্পষ্ট ভাষায় বললেন- 'বাচ্চাদের জন্য সামান্য রাখবেন, জনাব!'
এ কথা শুনে আফানদী বললেন- অবশ্যই। এ বলে (বইয়ের দিকে তাকিয়েই) ইংরেজের পকেট থেকে কিছু বাদাম বের করে তার হাতে দিলেন। এবং বললেন- 'আপনার ছেলেদের জন্য!'
আর বাকীগুলো তিনি উদরে পুরলেন!
কতটুকু পাঠনিমগ্ন হলে এমন একটি (আশ্চর্যজনক) কাজ করা সম্ভব তা ভাবতেও অবাক লাগছে! কিন্তু তিনি সেভাবেই পড়তেন। তাই তাঁর মাধ্যমে রচিত হয়েছে তুর্কী ইতিহাস বিশ্বকোষ।
এ ছাড়াও পাঠ নিমগ্নতার ব্যাপারে তাঁর আরো বহু দুর্লভ ঘটনা আছে। ইনাশা-আল্লাহ পরে এক সময় আরো কিছু লিখার চেষ্টা করব।
আল্লাহ তা'য়ালা যেন এ জামানার পাঠকদের মধ্যেও (অবশ্য অন্যের পকেটে হাত দেওয়া ছাড়া!) পড়াশোনা করার এরূপ আগ্রহ তৈরি করেন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
৮৭৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন