তাকে শক্ত করে বাঁধো! তার মা খুবই ধনী মহিলা!

লিখেছেন লিখেছেন ভিনদেশী ২৫ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:০৮:৪২ রাত

বদর যুদ্ধ প্রায় শেষ। মক্কার দাম্ভিক কাফিরদের শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। আইম্যাতুল কুফুররা প্রায় সকলে নিহত। যারা জীবিত তাদের অনেকে প্রাণ রক্ষায় পালিয়েছে। বাকিরাসব বন্দী সাহাবায়ে কিরাম, রাদিয়াল্লাহু আনহুম, -এর হাতে।

যখন পরাজিতদের দলে দলে বন্দী করা হচ্ছে তখন একটি চমৎকার ঘটনা ঘটে! এ ঘটনার মূলে ছিলেন বিখ্যাত সাহাবী হযরত মুসআব বিন উমাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু -এর ভাই হযরত আবূ উযাইব বিন উমাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু। ঘটনাটি যখন ঘটে তখনও তিনি কাফির। ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে পরিচালিত কুরাইশের হিংসাত্মক যুদ্ধে তিনিও কাফির বাহিনীর এক যোদ্ধা। অবশ্য এখন পরাজিত যোদ্ধা!

চলুন আমারা তাঁর মুখে শুনি সেই চমৎকার গল্পটি।



عن أبي عزيز ابن عمير رضي الله عنه قال: ( مر بي أخي مصعب بن عمير ورجل من الأنصار يأسرني فقال له: شدَّ

يديك به، فإن أمه ذات متاع قال: وكنت في رهط من الأنصار حين أقبلوا بي من بدر، فكانوا إذا قدموا غداءهم

وعشاءهم خصوني بالخبز، وأكلوا التمر! لوصية الرسول صلى الله عليه وسلم إياهم بنا، وما يقع في يد رجل منهم كسرة من الخبز، رواه الإمام أحمد في المسند.


তিনি বলেন: "আমাকে যখন এক আনসারী লোক বন্দি করছিল তখন আমার পাশ দিয়ে হেটেঁ যাচ্ছিলেন আমার ভাই মুসআব বিন উমাইর। মুসআব আনসারী সাহাবীর উদ্দেশ্যে বললেন- ''তাকে শক্ত করে বাঁধো। তার মা বড় ধনবান নারী! (আবূ উযাইরের মা তিনি হযরত মুসআবেরও মা)।

আবূ উযাইর বলেন: আমাদের যখন বদর প্রান্ত থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে তখন আমি আনসারদের একটি দলের সঙ্গে ছিলাম। তাঁরা যখন দুপুর বা রাতে খাবার খেতো। আমাকে খেতে দিত রুটি আর তাঁরা খেত খেজুর (সে সময় আরবদের কাছে রুটি অনেকটা দুষ্প্রাপ্য ছিল) কারণ, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে আমাদের (বন্দিদের) সঙ্গে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। অথচ তাঁরা খাওয়ার জন্য এক টুকরো রুটিও পেত না!" মুসনাদে আহমাদ।

এমন চমৎকার একটি দৃশ্য দেখে কে প্রভাবিত না থাকে? আর যার সাথে এ দৃশ্যের অবতারণা তার ব্যাপারে একটু ভেবে দেখেন তো! কেমন ঠেকেছিল তার কাছে এ মো'য়ামালা! সবচে' লক্ষ করার বিষয় হলো, যে কাফিরগুলো নবীজী ও তাঁর সাহাবাদেরকে দীর্ঘ তের বৎসর ধরে মক্কায় অসহ্য জুলুম-নির্যাতন করেছে। যাদের কারণে নবীজী ও তাঁর সাথীদের প্রিয়ভূমি মক্কা ত্যাগ করতে হয়েছে। যারা তাঁদের সমস্ত ধন-সম্পদ ছিনিয়ে নিয়েছিল। এমনকি দেশ ত্যাগ করে মদীনা আসার পরও যারা নবীজী ও তাঁর প্রিয় সাথীদের ক্ষতির চিন্তায় রাত-দিন বিভোর থাকতো। সে পাষন্ডগুলো যখন তাঁর হাতে নিরিহাবস্থায় বন্দি হলো। তখনো তিনি আল্লাহ তা'য়ালা পক্ষ থেকে দেওয়া রহমত ও দয়া থেকে পিছু হটেননি। বরং তাদের সাথে ভাল এবং উত্তম আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন! (এমন ঘটনা নবীজীর পবিত্র জীবনে শতবার ঘটেছে। বরং সর্বদা তিনি এমন ধৈর্য ও রহমতের পরিচয় দিয়েছেন। যারা তাঁর সাথে দুঃব্যবহার করেছে তাদের সাথেও) এতকিছু পরও যারা তাঁর ব্যাপারে মিথ্যা রটনা করে বেড়ায় তাদের এ মিথ্যাই নিজেদের অজ্ঞতার প্রমান বহন করে তাদের ধিক্কার দেয়।

অন্যদিকে সাহাবায়ে কিরামও কেমন নবীজীর ভক্ত ছিলেন। নবীজী তাদের শুধু বন্দিদের সাথে ভাল আচরণের নির্দেশ দিয়ে ছিলেন। আর তাঁরা কিনা নিজেরা না খেয়ে কয়েদির আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন! এ কেমন দৃশ্য! হাজার বছর ধরে বহমান এ পৃথিবী কতোবার সৌভাগ্যবান হতে পেরেছে এমন একটি কাফেলায় সোহবতে!

সবচে' মজার ব্যাপার হলো, হযরত মুসআবের বিরল আচরণ! নিজের ভাইকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য নয় বরং শক্ত করে বাঁধার জন্য তিনি অন্যদের উৎসাহ দিচ্ছেন! আর বলছেন- 'তার মা খুব ধনবান নারী!"

নবীজীর সীরাত পাঠকদের না জানার কথা নয়, হযরত মুসআবের মায়ের ধন-সম্পদের কথা। কারণ, এ হযরত মুসআব তাঁর কাফির অবস্থায় মক্কার সবচে' সুন্দর এবং পোষাক-পরিচ্ছেদে উৎকৃষ্ট যুবক ছিলেন। তিনি যে পথ দিয়ে হেঁটে যেতেন সে পথে তাঁর কাপড়ের সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়তো। পরবর্তী সময়ে যারা এ পথ দিয়ে যেত তারা বুঝতে পারতো এ পথে মুসআব অতিক্রম করেছে। আর তাঁর ভাই আবূ উযাইর। তিনি তাঁর সহোদর। প্রিয় ভাই। যার সাথে বহুদিন ধরে দেখা হয়নি। তারপরও যখন ইসলামের স্বার্থ সামনে এসে গেছে। আপন-পরের কোন ব্যাপার আর বাকী থাকলো না!

আল্লাহ তা'য়ালা সূরা মুজাদালাতে তাঁদের এ বিরল আত্মত্যাগের স্বীকৃতি দিয়ে ইরশাদ করেন-


لَّا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ أُولَٰئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُم بِرُوحٍ مِّنْهُ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ أُولَٰئِكَ حِزْبُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ﴿المجادلة: ٢٢﴾


"যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা। তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে।" (৫৮: ২২)

এমন মুহাব্বত ও ভালবাসা। অনুগত্য ও আত্মত্যাগের কারণে আল্লাহ তা'য়ালা তাঁদের মাধ্যমে এ দ্বীনের খিদমাত নিয়েছেন। অর্ধশতাব্দীর ব্যবধানে একদল মরুচারীকে আল্লাহ তা'য়ালা পরিণত করলেন তখনকার পৃথিবীর সর্বোচ্চ শক্তিধর শাসকে!

কোথায় আমাদের সে পূর্বসুরীরা! কোথায় আমাদের সে দিনগুলো! আবার ফিরে আসবে তো!

وَمَا ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ بِعَزِيزٍ


আর তা আল্লাহ তা'য়ালর পক্ষে মোটেই কঠিন নয়। (১৪: ২০



বিষয়: বিবিধ

১১৯৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

166982
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:৫৫
বড়মামা লিখেছেন : সুন্দর ভালো লগলো আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৩:১২
121072
ভিনদেশী লিখেছেন : আপনার উৎসাহ পেয়ে আমার ও ভাল লাগছে। আপনাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ।
167174
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:২৬
আলোকিত ভোর লিখেছেন : ধন্যবাদ Rose
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:৩৪
121218
ভিনদেশী লিখেছেন : পড়ার ও মন্তব্যের জন্য আপনার প্রতিও রইল শুকরিয়া।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File