আল্লাহ তা'য়ালার সন্তুষ্টি যখন উদ্দেশ্য!
লিখেছেন লিখেছেন ভিনদেশী ১১ নভেম্বর, ২০১৩, ১০:২৪:১৪ রাত
রাজধানী বাগদাদে একটি হত্যাকান্ড ঘটে গেল! অদ্ভূত রকমের হত্যাকান্ড! ইতিপূর্বে এমন ঘটনা আর ঘটেনি। নিহতের পরিবার আদালতে মামলা করেছে। বিচারের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি নিজে এ মামলায় রায় দিবেন। কারণ, আজকের হত্যাকান্ডে নিহত ব্যাক্তি ইহুদি সম্প্রদায়ের লোক। তারা সংখ্যালঘু। ইতিপূর্বে সংখ্যালঘুদের কোন লোক মুসলমানের হাতে নিহত হয়নি বাগদাদে। তাই বিষয়টাকে খুবই গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে সরকার। যদি এ ঘটনার সাথে সাম্প্রদায়িক কোন যোগসাজশ থাকে! তাহলে এ সমস্যাকে কঠিন হস্থে ধমন করতে হবে। ভবিষ্যতে যেন কেউ এমন সাহস না পায়। ইসলামি আইনানুসারে রাষ্ট্রের সব নাগরিক সমানাধিকার প্রাপ্ত। আইনের চোখে মুসলিম-অমুসলিম কোন পার্তক্য নেই। তাই ইসলামি ফৌজদারী নীতি অনুসারে জেনেশুনে ইচ্ছাকৃত কোন ব্যক্তিকে হত্যা করলে হত্যাকারীকে হত্যা করা হয়। কিন্তু এ মামলায় যেহেতু হত্যাকারী মুসলিম আর নিহত ব্যক্তি অমুসলিম তাই অনেকে বিষয়টাকে ভিন্নভাবে দেখার চেষ্টা করছেন। একজন কাফিরের পরিবর্তে ইসলামি রাষ্ট্রে একজন মুসলিমকে হত্যা করা হবে কিনা?
প্রধান বিচারপতি আবূ ইউসূফ (রহ.) নির্ধারিত সময়ে আদালয়ে উপস্থিত হলেন। বিচারকর্ম শুরু হয়ে গেছে। কাজী উভয়পক্ষের দলীল-প্রমাণ খুব ধীরে সুস্থে শুনলেন। এরপর ঘাতকের বিরুদ্ধে হত্যার রায় ঘোষণা করলেন। প্রধান বিচারপতি রায় দিয়ে আদালত ত্যাগ করলেন। এদিকে রায় নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে।
দেশের জ্ঞানী-গুণীদের মধ্যে অনেকে কাজী আবূ ইউসূফের এ রায়ের সমালোচনা করলেন। তাঁদের চোখে রায়টি ভুল ছিল! তাই তাঁরা বিচারপতির সাথে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। ইমাম আবূ ইউসূফ আলোচনায় সম্মত হলেন। উভয়পক্ষ যার যার মতামত কোরআন হাদীসের আলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করলেন। বিরুদ্ধ পক্ষ বললেন- আপনার এ রায় ভুল। কারণ, নবীজী ইরশাদ করেছেন- "কোন মুসলিমকে কাফের হত্যার দায়ে হত্যা করা যাবে না" বুখারী শরীফ, হাদীস: ৬৫১৭।
ইমাম আবূ ইউসূফ তার মত তুলে ধরে বলেন-
আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কোরআন মাজীদে ইরশাদ করেন- "এবং আমি তাতে (তাওরাতে) তাদের জন্য বিধান লিখে দিয়েছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান ও দাঁতের বদলে দাঁত। আর যখমেও (অনুরূপ) বদলা নেওয়া হবে।" সূরা মায়িদা: ৪৫।
যেহেতু হত্যার কারণে নিহত ব্যক্তির প্রাণ বিনাশ হয়েছে তাই কোরআন মজীদের বিধানানুযায়ী ঘাতকেরও প্রাণ বিনাশ করা হবে।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- "যে ব্যাক্তি কোন মু'য়াহিদ বা আশ্রয়প্রাপ্ত ব্যক্তিকে হত্যা করলো, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। বুখারী শরীফ: ২৯৯৫।
ইসলামি আর্ন্তজাতিক আইনানুসারে যে কোন মুসলিম ইসলামি রাষ্ট্রের নাগরিক। সে হিসেবে আশ্রীত লোক অমুসলিম। যদি তাকে হত্যার কারণে জান্নাত হারাম হয়। তাহলে মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিক অমুসলিমকে হত্যাকারীও এ হাদীসে আওতাভুক্ত।
তিনি আরও বলেন- যে হাদীসে ‘নবীজী’ কাফেরের বদলায় মুসলমানকে হত্যা করা যাবে না বলেছেন। সে কাফের হলো, যে মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। তাকে কোন মুসলমান হত্যা করলে হত্যাকারীকে তার বদলায় হত্যাযা করা যাবে না। তাই উপরোক্ত মামলাটি এ হাদীসের অন্তরভুক্ত নয়।
বিরুদ্ধপক্ষের অনেকেই বিচারপতির এ সূক্ষ ব্যাখ্যায় তাঁর সাথে একাত্বতা ঘোষণা দিলেন। তারপরও অনেকে একমত হতে পারেন নি। তাঁরা আবূ ইউসূফের পিছু নিল। কবি-সাহিত্যিক গুষ্ঠির অনেকেও বিচারপতির বিরুদ্ধে চলে গেল। তাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে কবিতা ইত্যাদি লিখা শুরু করলো। এক কবি তার কবিতায় আবূ ইউসূফকে সম্বোধন করে বললেন- হে (কাফিরের বদলায়) মুসলমান হত্যাকারী!
আবূ ইউসূফের সে দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি যা ইসলাম সম্মত তাই করেছেন। এ বিচার কারো মনোপূত না হলে তাঁর করার কিছু নেই। আল্লাহ তা'য়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দেশে শান্তি-সৃংখলা রক্ষায় তিনি বিচার করেছেন। এতে কেউ সন্তুষ্ট হতে না পারলে সে তার ব্যপার।
তবে তাঁর সম্পর্কে মানুষের বিভিন্ন মন্দ কথা-বার্তা তাঁর কানে পৌঁছতে লাগলো। এতে তিনি কিছুটা ব্যাথিত হলেন। এদিকে আল্লাহ তা'য়ালা ইচ্ছায় ঘটনা রটে গেল। নিহত ব্যক্তি দেশের বৈধ নাগরিক ছিল না! ঘটনা যদি বাস্তব হয়ে থাকে তাহলে বিচার পাল্টে যাবে! হত্যাকারী, মুসলিম ব্যক্তির, হত্যার রায় মওকুফ হয়ে যাবে! যথারীতি তদন্ত শুরু হলো। শেষে প্রমানিত হলো। নিহত ব্যক্তি অবৈধ বসবাসকারী ছিল।
ইমাম আবূ ইউসূফ তাঁর হত্যার রায় উঠিয়ে নিলেন!
একদিকে ন্যায় বিচারের মাধ্যমে আল্লাহ তা'য়ালার সন্তুষ্টির লাভ করলেন। অন্যদিকে ঘাতকের হত্যার রায় মওকুফ হয়ে যাওয়ায় বিরুদ্ধচারণকারীদের মুখও বন্ধ হয়ে গেল!
কে এই ইমাম আবূ ইউসূফ?
তাঁর পুরো নাম: ইয়াকুব ইবনে ইব্রাহিম। ১১৩ হিজরীতে জন্ম। বিশ্বখ্যাত ইমাম আবূ হানীফার হাত ধরে ফিকহের ময়দায়ে আগমন। ইমাম আবূ হানীফার মৃত্যুর পর তিনি তাঁর স্থলাবিষিক্ত নির্বাচিত হয়েছিলেন। খলীফা হারুনুর রশীদের শাসনামলে তিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ইসলামী ইতিহাসের প্রথম প্রধান বিচারপতি তিনি। বিচারকার্যে তাঁর সূ্ক্ষ বুদ্ধি এবং ফিকহে ইসলামিতে তাঁর অসম দক্ষতা খুব অল্প সময়ে তাঁকে খলীফার শ্রদ্ধাভাজন করে তুলে। খলীফা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যপারেও এ মহান মনিষীর পরামর্শ নিতেন। ১৮২ হিজরীতে তিনি বাগদাদে ইন্তেকাল করেন। রেখে 'আল খারাজ'সহ বহু মূল্যবাদ গ্রন্থাদী। রহিমাহুল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
১২৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন