মাওলার শুকর!
লিখেছেন লিখেছেন ভিনদেশী ১১ নভেম্বর, ২০১৩, ০১:২৩:৩৯ রাত
সকাল নয়টায় মুহাদারা বা দারস। আটটা বিশ মিনিটে বাস ছাড়বে হোস্টেল থেকে। খুব দ্রুত নাস্তা সেরে নিলাম। বাস স্টপিজে এসে দেখি প্রথম বাস চলে যাচ্ছে। দ্বিতীয় বাস এখনো এসে পৌঁছেনি। তাই অপেক্ষা করার পালা। সাধারণত সবগুলো বাস এক সাথে উপস্থিত হয়। যানযটের কারণে আজ হয়তো একটু ব্যতিক্রম। এদিকে অফিসের কোন দায়িত্বশীলকেও দেখা যাচ্ছে না। যাক্ কি আর করার অপেক্ষা ছাড়া। আটটা চল্লিশের দিকে বাস এলো। ঝটপট উঠে পড়লাম। মাদারিসুল ফিকরিল ইসলামি (স্কুলস অব ইসলামিক থট) নামের মাদ্দার দারস। ড. মুহাম্মদ আল মা'সূমী দারস দেন। বৎসরের শুরুতে আমার আরদ বা প্রজেন্টেশন ছিল। বিষয় ছিল ইমাম মালিক রহ. -এর মাজহাবের মূলনীতি নিয়ে। যেদিন আরদ করেছি সেদিন থেকে কি এক অদ্ভুত কারণে তিনি আমার ব্যপারে একটু বেশি খোঁজ-খবর রাখেন! কারণ আল্লাহ তা'য়ালাই ভাল জানেন। একদিন অনুপস্থিত থাকলে পরের দিন দারসে উপস্থিত হয়েই আমার তালাশে হলের এদিন-সেদিক থাকাবেন। আমি নিচু হয়ে থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু কাজ হয় না! দেখেই বলে উঠবেন- ''আলহামদুলিল্লাহ আলাস সালামা!'' মানে তুমি নিরাপদে পৌঁছায় আল্লাহ তা'য়ালার শুকর! এরপর অনুপস্থিতির কারণ জিজ্ঞেস করবেন। একবার তো যথারীতি দারসের সব ছাত্রকে দায়িত্ব দিয়ে দিলেন আমার ব্যপারে খোঁজ-খবর নিতে! ঐ দিন বিকেলে আমার অন্য দারস ছিল তাই জামিয়াতে (বিশ্ববিদ্যালয়ে) গেলাম। পথে এ মাদ্দার ছাত্র-বন্ধুদের মাঝে যার সাথেই দেখা্ হয় সেই বলে- "ডক্টর তোমাকে খুঁজতে ছিল। আমাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন তোমার খোঁজ-খবর নিতে!" আমি তো একেবারে থ্! জামিয়ায় সাধারণত কেউ অনুপস্থিত থাকলে শিক্ষকরা সে ব্যপারে জিজ্ঞেস করেন না। কিন্তু এ লোক রীতিমতো লোক লাগিয়ে দিলেন আমার পেছনে! যেন হিফজ্ খানা থেকে পালিয়ে গেছি আর সবাই আমার তালাশে ঘুরছে! যাক্ সে কথা। বাস জামিয়ায় গিয়ে পৌঁছলো নয়টা ১৫ মিনিটের দিকে। তার মানে দারস শুরু হয়ে গেছে আরো পনের মিনিট পূর্বে! এখন দারসে উপস্থিত হলেই জেরা শুরু হয়ে যাবে! খুবই অস্বস্তি লাগছে! যাক্ তারপরও দু'একবার দুয়া'দুরুদ পড়ে বিচারকরের সামনে উপস্থিতির মতো অবস্থা নিয়ে দরজা খুললাম। আশ্চর্য শাইখ নেই! সব ছাত্ররা নিচের দিক হয়ে কি যেন লিখছে। আমারতো খুশিতে আটখানা অবস্থা! দ্রুত মাঝামাঝি একজায়গায় বসে গেলাম। পাশের ভাইয়ের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলল- তিনি বাহিরে গেছেন। এক মিনিটের কাজ দিয়ে গেছেন। এক মিনিটের কাজ মানে শিক্ষক দারসে একটি প্রশ্ন দিবেন। ছাত্রদের যতদ্রুত সম্ভব উত্তর দিয়ে কাগজ জমা দিতে হবে। তাড়াতাড়ি প্রশ্নটা লিখে উত্তর লিখতে শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর শাইখ উপস্থিত হলেন। আমি নিচের দিয়ে থাকিয়ে লিখতেই আছি! যেন তাঁর প্রবেশের ব্যপারটা লক্ষই করিনি! প্রশ্ন ছিল- ''মুসলিম ইতিহাসে তা'বীল বা কোরআন হাদীসের বাহ্যিক অর্থ পরিহার করে কোন কোন সময় অন্যার্থ গ্রহন করার কারণ কি?'' তিনটি নুক্বতা বা পয়েন্ট লিখেছি মাত্র। তিনি কথা বলে উঠলেন। মনে হয়, কাগজ জমা দিতে বলবেন। না, তা বলেননি। বরং উল্টো বললেন-
"যাদের শেষ হয়নি তাড়াতাড়ি শেষ করে কাগজ নিজের কাছে রেখে দাও! দারস শেষে যাওয়ার সময় জমা দিয়ে যাবে।" উহ্! মনে মনে আল্লাহ তা'য়ালার শুকরিয়া আদায় করলাম। তারপর তিনি আজকের দারসের আলোচনায় ব্যস্থ হয়ে পড়লেন। মনে হয় আজকের মতো আমার জেরা বা বিচার মওকুফ হয়ে গেছে। আগামি দারসে আশাকরি এ বিষয়ে আর জিজ্ঞেস করবেন না। কারণ, দারসের মাঝে এক ছাত্রের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে আমাকে তিনি একটি প্রশ্ন করেছিলেন। জিজ্ঞেস করেছিলেন-
"দর্শনে ফারাগ বা খালি মানে কি?"
উত্তর অবশ্য দিতে পারিনি! কারণ, তিনি আমাকে উত্তেরর সুযোগ না দিয়ে নিজেই আলোচনা শুরু করে দিলেন। আলোচনা শেষ করতে করতে দারস শেষ! দারস শেষে ছাত্রদের জ্যামের মাঝে কাগজ জমা দিয়ে দ্রুত প্রস্থান করলাম! মনে মনে খুব খুশি হলাম! যাক্ আজকের মতো মাফ পাওয়া গেল।
শুকর আপনার হে মাওলা!
বিষয়: বিবিধ
১২৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন