বহুপরিচিত সেই জ্ঞানী ব্যক্তিটির সাথে নতুনভাবে পরিচয়!

লিখেছেন লিখেছেন ভিনদেশী ০৭ নভেম্বর, ২০১৩, ০৪:৩০:১৪ রাত

ইমাম মুহাম্মদ ইবনুল হাসান আশ-শায়বানী রহ. (১৩১-১৮৯ হিজরি)। ইসলামী ফিকহের এক দিকপাল। সেই ছোটবেলা থেকে এ মহান ব্যক্তিত্বের নাম শুনে আসছি। ফিকহে ইসলামীর এক বড় ইমাম। ইমাম আবূ হানিফা রহ. -এর হাতে গড়া ছাত্র। খুবই ধনী পরিবারের ছেলে। ইমাম আবূ ইউসূফের পর যিনি ইমাম আবূ হানিফার সবচে' প্রিয় ছিলেন। যার হাতে হয়েছে ফিকহে হানাফীর সঙ্কলন। খলীফা হারুনুর রশীদ যাকে প্রথমবার দেখে তাঁর জ্ঞান ও বিচক্ষণতায় প্রভাবিত হয়েছিলেন। যার হাতে পরবর্তী সময়ে ইমাম শাফেয়ী রহ. -এর মতো জ্ঞানের পাহাড়সম ব্যক্তিগুলো শিষ্যত্ব বরণ করা করেছিলেন। ফিকহে হানাফীতে যিনি স্বীয় শাইখ আবূ হানীফা রহ. -এর দু'তৃতীয়াংশ রায়ে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন (বলা হয়ে থাকে)! আরো কতো কিছু! এর সব কিছুই শতসিদ্ধ কথা। তবে আধুনিক কালের গুণিজনেরা বিশেষতঃ অমুসলিম আইনবিদরা এ লোকটাকে একটু ভিন্নভাবে চিনতে শুরু করেছেন। তাঁরা ইমাম মুহাম্মদকে চিনে 'আধুনিক আর্ন্তজাতিক আইনের' একজন সফল প্রণেতা হিসেবে। জেনেভা কনভেনশনের প্রথম 'চার চুক্তি' এবং পরবর্তী সময়ের সংশোধনীসহ যতগুলো ধারা 'বিশ্বশান্তি'র লক্ষে প্রণিত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে পশ্চাত্বের জ্ঞানীজনেরা অবাক হয়ে লক্ষ করলেন 'মুহাম্মদ' নামের এক মুসলিম আইনবিদ এর চেয়ে সুন্দর এবং সূক্ষভাবে এ আইনগুলো কোরআন মজীদ এবং হাদীস শরীফের আলোকে বিশদভাবে উল্লেখ করেছেন। তাও আবার আজ থেকে তেরশত বছর আগে! তাঁদের বিশ্বাস হলো না! জামানার জ্ঞানী-গুণীরা দিশেহারা হয়ে পড়লেন! একি! কে এই লোক? কি তাঁর পরিচয়? কার হাতে গঠিত হলেন? কিভাবে গঠিত হলেন? কি তাঁর প্রণিত এ আইনের ভিত্তি? কোথা হতে তিনি এসব সংগ্রহ করলেন!? আরো কতো প্রশ্ন! যা তাঁদের ধৈর্যের সীমাতিক্রম করে যায়! তাঁরা নেমে পড়েন এ লোকের পেছনে। তাঁকে জানতে হবে। আলাদাভাবে তাকে পড়তে হবে। দেখতে হবে কে তাঁর পেছনে। কে তাঁর সামনে। তাওরাত,তালমুদ, ইঞ্ছিল, যাবুর, জাস্টিনিয়ান কোড, হামুরাবি কোড, কুমপোশিয়াস কোডসহ আরো যতো কোড আছে তা থেকে এ লোক এসব ধারা সংগ্রহ করেছেন কিনা সবকিছু খুড়িয়ে খুড়িয়ে দেখতে হবে। যেমন দরকার তেমন কাজ। তাঁরা কাজে নেমে পড়লেন। বহুসময় খরচ করে তাঁরা মুহাম্মদ (ইবনুল হাসান) -এর সময়কার ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক ব্যবস্থা সবকিছু ধৈর্য সহকারে পড়লেন। বিশেষভাবে বড়লেন তাঁর 'আস্‌ সিয়ারুল কবীর' নামক কিতাবটি। কারণ, এতেই তিনি রেখে গেছেন গুপ্তধন! তাঁরা অবাক হলেন। হতবাক হলেন। তারপর স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হলেন। একজন তো তাঁর এক কিতাব সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলে বসেন - 'এই যদি হয় তোমাদের ছোট মুহাম্মদ (মানে ইমাম মুহাম্মদ) গ্রন্থের অবস্থা। তাহলে তোমাদের বড় মুহাম্মদ (মানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কিতাবটা (কোরআন মাজীদ) কেমন হবে?' এখন তাঁরা তাকে চিনে 'ফাদার অব ইন্টারন্যাশনাল ল' হিসেবে। জার্মানিতে তাঁর নামে একটি জাদুঘরের নাম করন করা হয়েছে। তাকে নিয়ে শুরু হয়েছে জ্ঞানী-গুনীদের আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের কন্ফারেন্স। এ পযন্ত তাঁর জীবনী এবং 'সিয়ারুল কাবির' গ্রন্থ -এর উপর লিখিত হয়েছে বহু মাস্টার্স-ডক্টোরেটের থিসিস।

এ কোর্সে আমি অন্যন্য বিষয়ের সাথে 'ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল ল' নামে একটি বিষয় নিয়েছি। এ বিষয়টির কল্যাণে (আল্লাহ তা'য়ালার দয়া ও করমে) বহুদিনের জানা 'আমাদের সেই ইমাম মুহাম্মদ'কে আবার নতুনভাবে জানা হলো। চেনা হলো। এ মাদ্দার সম্মানিত শিক্ষক ড. সা'দ উদ্দীন দাদ্দাশ। আলজেরিয়ান এ জ্ঞানী লোকটি দরসে ইমাম মুহাম্মদের নাম আসলে অন্য রকম হয়ে পড়েন। যতবার তাঁর আলোচনা আসবে ততবার তাঁকে নিয়ে কিছু না কিছু বলবেন। মনে হয় তিনি এমনটা নিয়ম করে নিয়েছেন!

আর আমরা! বিশেষতঃ আমার মতো যারা সেই ছোটবেলা থেকে ফিকহের কিতাবে অসংখ্যবার -'ওয়া-খালাফা মুহাম্মদ' মানে এ মাসয়ালায় ইমাম মুহাম্মদের দ্বিমত রয়েছে শুনে আসছে। তারা তো পুলকিত হই এই ভেবে যে- যাক এখনতো তিনি (ইমাম মুহাম্মদ রহ.) একাই লড়ছেন। পৃথিবীর গুণীজনেরা শুধু অবাক বিস্ময়ে দেখছেন। এখানে আর ওয়াখাফা ফুলান বা অমুকের দ্বিমত আছে সে আলোচনা তেমন একটা আসছে না!

এ বিষয়টা বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় পবিত্র কোরআনের স্বর্ণীল বাণী - ''তাঁদের সকলের উপর আছেন একজন সর্বজ্ঞানী" (সূরা ইউসূফ: ৭৬)।

বিষয়: বিবিধ

১৩২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File