হিজরি বর্ষপঞ্জি! কে? কখন? কেন প্রবর্তন করেছিলেন?

লিখেছেন লিখেছেন ভিনদেশী ০৩ নভেম্বর, ২০১৩, ০৭:৩৯:০৪ সন্ধ্যা

শতের হিজরির কোন এক দিনের কথা, বসরার গবর্নর আবূ মূসা আশয়ারীর (রা.) হাতে সবেমাত্র রাজধানী মদীনা থেকে খলীফার একটি চিঠি এসে পৌঁছল! তিনি মনোযোগ সহকারে চিঠিটিতে চোখ বুলাচ্ছেন, মনে হয় তিনি তাতে কিছু একটা খোঁজছেন। না, চিঠিটির কোথাও যে প্রেরণের তারিখ উল্লেখ নেই!! তারিখ না থাকায় চিঠিটি কবে লেখা হয়েছে তা বুঝা যাচ্ছে না! (একটু পর) আবূ মূসা আশয়ারী (রা.) কাগজ-কলম নিয়ে বসলেন, চিঠি লিখবেন মুসলিম জাহানের খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) -এর কাছে। চিঠিতে তিনি খলফিার সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন। (কয়েক দিন পর) রাজধানী মদিনায় বসে সবেমাত্র আবূ মূসার প্রেরিত চিঠিটি পড়া শেষ করলেন খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব, আর মনে মনে বললেন- আসলেইতো বিষয়কটি খুবই গুরুত্ববহ! এতোদিন এ বিষয়টি কারো নজরে আসেনি! কেন? ওহ্ হ্ আমরা তো ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা প্রবাহ, যেমন- হস্তি বাহিনির মক্কা আক্রমন সাল, বিদায় হজ্বের বছর ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে নিত্যপ্রয়োজনিয় কাজ চালিয়ে যেতাম, তাই হয়তো বিষয়টি কারো দৃষ্টিতে আসেনি, ওমর মনে মনে জওয়াবটি আওড়ালেন। কিন্তু বিশাল মুসলিম রাজ্যের পক্ষে সর্বসম্বত সিদ্ধান্ত ব্যতীত কোন ঘটনা প্রবাহকে কেন্দ্র করে চলা কি সম্ভব? না, না। সকলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি '‌‌‌‌বর্ষপঞ্জিকা' প্রণয়ন করা উচিত। জরুরি ভিত্তিতে তিনি 'মাজলিসুশ শুরা' বা 'এডভাইজরি কমিটি'র বৈঠক আহবান করলেন। (একটু পর) সকলে উপস্থিত। প্রথমে হযরত ওমর (রা.) সভার কারণ উল্লেখ করে বিষয়টি সকলের সামনে তুলে ধরলেন এবং তাদের প্রত্যেকের মতামত চাইলেন। একে একে সব সদস্যই স্ব-স্ব রায় পেশ করলেন। কেউ বললেন- নবীজীর (স.) জন্ম তারিখকে লক্ষ্য করে কালেন্ডারটি হতে পারে। আবার কারো মতে পঞ্জিকাটি নবীজীর 'নবুয়াত'কে কেন্দ্র করে হতে পারে। আরো বিভিন্ন রায়। এবার কথা বললেন হযরত আলী (রা.) তিনি বললেন- 'আমার মতে পঞ্জিকাটি নবীজীর (স.) মদীনা হিজরাতকে কেন্দ্র করে হতে পারে। কারণ, মদীনা হিজরতের কল্যাণে ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রচারের সুযোগ হয়েছে, ফলে ইসলাম চর্তুদিকে দ্রুত গতিতে প্রসার লাভ করেছে। শেষোক্ত মতটি সবার মনঃপুত হলো! কিন্তু প্রশ্ন থেকে গেল কোন মাস দিয়ে শুরু হবে এই 'বর্ষপঞ্জি'? সিদ্ধান্ত হলো যেহেতু জিলহাজ্ব মাসে (মুসলিম বর্ষপঞ্জির দ্বাদশ মাস) হাজীরা পবিত্র হজ্বব্রত শেষ করে ঘরে ফিরে এসে নতুনভাবে কাজ-কর্মে যুক্ত হয়, তাই এর পরের মাস 'মুহাররম' হবে নতুন মুসলিম বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস। সরকারি-বেসরকারি সব কাজেই নব প্রবর্তিত এ বর্ষপঞ্জি কার্যকর হবে। এভাবে পৃথিবীতে আগমন হলো মুসলিম বর্ষপঞ্জির! আমাদের দু'এক দিনের মধ্যেই ১৪৩৫ তম নববর্ষে পদার্পণ করতে যাচ্ছি! তাই সকলের প্রতি নববর্ষের আন্তরিক শুভচ্ছো! ! নতুনভাবে সংকল্প করার চেষ্টা করছি- ইনশা-আল্লাহ আগত বছরটি যেন হয় আমার জীবনের একটি কর্মময় বছর, যাতে থাকবে না কোন পরাজন এবং আত্মসর্মপণ। আর তাই আজ থেকে চেষ্টা করব সময়ের প্রতি যত্নবান হতে যেন হেলায়-খেলায় মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট হয়ে না যায়। প্রিয় বন্ধু! তুমি কি আমার সাথে যুক্ত হবে জীবন গঠনের এ সংকল্পে? যেন সবাই মিলে আবার পিরিয়ে আনতে পারি হারানো ঐতিহ্য ও ঐশ্বর্য? বন্ধুরা! আমি ও তুমি কি পারব এ প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে? বলো- ‌'ইনশা-আল্লাহ। আর একটা কথা, আজ থেকে আমরা যেন আমাদের হিজরি র্বষপঞ্জি ব্যবহার করতে না ভুলি। মনে থাকবে তো? আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন, আমীন।

বিষয়: বিবিধ

১১৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File