তিনি যা বললেন...
লিখেছেন লিখেছেন ভিনদেশী ২৮ অক্টোবর, ২০১৩, ১১:২৪:২৫ রাত
সমসাময়িক আরববিশ্বের প্রখ্যাত আলিম ড. আয়েজ আল ক্বারনী। আমার প্রিয় লেখকদের মধ্যে তিনি অন্যতম। আজ কাতার ইউনির্ভাসিটির 'ইবনে খালদুন' হলে তাঁর দারস ছিল। ভিড় হওয়ার সম্ভাবনা ছিল তাই সময় মতো চলে গেলাম। মোটামোটি মধ্যখানে একটি জায়গা পাওয়া গেল! আস্তে-আস্তে ভিড় বাড়তে থাকে। হলের মধ্যখানে পর্দা দিয়ে একপাশে ছাত্রি এবং অন্যপাশে ছাত্রিদের বসার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরস্পরের যেন দেখা না হয় তাই এ ব্যবস্থা। এক সময় বিশাল 'ইবনে খালদুল' হয় ভর্তি হয়ে যায়! ঠিক সময়ে তিনি 'পড় তোমার প্রভুর নামে' পবিত্র আয়াত দিয়ে দারস শুরু করেন। আলোচনার শিরোনামও ছিল এটি। অতঃপর দুঃখ প্রকাশ করে বলেন- 'আশ্চর্যের বিষয় হলো, যে উম্মাতের কিতাবের প্রথম শব্দ 'পড়' তাঁরা আজ পড়ে না! পড়তে তাঁদের ভালো লাগে না! পড়লেও এমন সব গল্প-উপন্যাস পড়ে যা অনেক ক্ষেত্রে সর্বনাশার পথে ঢেলে দেয়।' আমাদের পূর্বপূরুষরা মহান আল্লাহ তা'য়ার উপর দৃঢ বিশ্বাস নিয়ে পড়তো। তাই আল্লাহ তা'য়ালা তাঁদেরকে তাওফীক দিয়েছিলেন একটি সোনালী ইতিহাস উপহার দিতে। মুসলিম স্পেনের প্রতিটি ঘরে একটি পাঠাগার ছিল আবশ্যকীয়। মুসলমানরা পড়তো, লিখতো, জানতো, জানাতো, জানা-জ্ঞানের পথ বেয়ে অজানার পথ খুঁজে বের করতো। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় তাদের ছিল অবাধ বিচরণ। আপনি চাইলে, ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজ্ঞান, সমাজ, রাজনীতি যে কোন বিষয়ে পড়াশোনা করতে পারেন। ইসলাম কোন প্রকার জ্ঞানকে ছোট করে দেখে না। তবে মনে রাখতে হবে আপনার পথচলা যেন শুরু হয় কোরআনের মধ্য দিয়ে। জীবনে চলার পথে 'কোরআন এবং নবীজীর জীবনী' যেন হয় আপনার পাথেয়। তিনি প্রশ্ন তোলে বলেন- 'এমন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে আমরা কী করবো? যারা বিশ্বস্রষ্টার প্রতি ইমান আনে না? নিজেরা সঠিক পথে চলায় ব্যর্থ! তাদের মাধ্যমে আমরা কি উপকার পেতে পারি? আল্লাহ তা'য়ালা কোরআন মাজীদ শুরু করেছেন- 'পড়' দিয়ে। কিন্তু কি পড়বো? উত্তর: এই খোলা আসমান, এই বিস্তৃত জমি, সৃষ্টির আজব-আজব বিষয়গুলো অন্তরচক্ষু দিয়ে পড়া। এবং সৃষ্টির রহস্য উৎঘাটনের চেষ্টা করা। এক সাথে আমাদের 'লিখিত কিতাব' এবং ‘বিস্তৃত সৃষ্টিজগত’ দু'টিই পড়তে হবে। যাতে মহান আল্লাহ তা'য়ালার বড়ত্ব, মহত্ব, মহানুভবতা কিছুটা হলেও অনুধাবন করা যায়। তিনি বলেন- 'আমরা আজ নিজেদের পবিত্র গ্রন্থ থেকে উপকৃত হওয়ার চেষ্টা করিনা? ' আমার কাছে অস্ট্রেলিয়ান এক লেখিকার একটি বই (বইটির নাম তিনি উল্লেখ করেছিলেন) আছে, যাতে তিনি লিখেছেন- 'আরবদের (মুসলমানদের) ধর্মগ্রন্থে ধৈর্যের কথা আশিবারের বেশি উল্লেখ করা হয়েচে'! সে তাঁর জাতিকে ধৈর্যের পরামশ্য দিচ্ছে আমাদের কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে! আমরা কোথায়? আজ আমাদের জানা নেই নবীজীর, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, কে? অতচ, মাইকেল এইচ হার্ট তাঁর লিখিত গ্রন্থ 'দি ১০০' -এ পৃথিবীর সবচে' গুণিজনদের শ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করেছেন নবীজীকে। আরো কতো কথা যে, তিনি বললেন!!
ড. ক্বারনীর লেখা 'আশিক' বা 'বইপ্রেমিক' আগে পড়েছি। আজ বইপ্রেমিকের আলোচনা শুনে প্রেমের দাস্তান অনুভবের চেষ্টা করলাম। কতো গভীর সে প্রেম! কতো নিভীড় সে প্রেম! যে প্রেম নেই পঙ্কিলতা। নেই কোন শরীয়তের বিরুদ্ধাচারণ!
কথার ফাঁকে ফাঁকে বিপুল সংখ্যক কোরআন মাজীদের আয়াত, নবীজীর হাদীস, কবিতাংশ, বিভিন্ন গ্রন্থ, বুদ্ধিজীবী, ও জ্ঞানীদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রায় একঘন্টা ধরে জ্ঞানের যে তুফান বইয়ে দিলেন। তা আমি কেবল চেয়ারে হেলান দিয়ে ডান গালে হাত রেখে অনুভবের চেষ্টা করেছি মাত্র।
একটি অনুরুধের মাধ্যমে তিনি আলোচনা শেষ করেন- আর তা হলো, আল্লাহ তা'য়ালার স্মরণ যেন আমরা কখনো ভুলে না যাই। কারণ, জীবনে চলার পথে প্রতিটি মানজিলে তিনিই আমাদের একমাত্র সহায়ক। বিষেশতঃ সময়ের ভাংতি অংশগুলো নষ্ট না করে। সেগুলো ছোট-ছোট দো'য়া-আদি'য়ার মাধ্যমে কাছে লাগানো।
আল্লাহ তা'য়ালা আমাদেরকে ইহকাল-পরকালে কবুল করুন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১১০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন