হযরত ওমর (রা.) ও তার বিচারপতি নিয়োগ কাহিনী!

লিখেছেন লিখেছেন ভিনদেশী ২২ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:২৭:২৪ রাত



কা’ব বিন ছূর আজদী। হযরত ওমর রা. এর বিচারপতিদের একজন। ইসলাম পূর্বে তিনি ছিলেন একজন ধর্মপরায়ণ খৃষ্টান। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তিকালের ইসলামের ছায়াতলে প্রবেশ করেন। ১৮ হিজরী সনে হযরত ওমর রা. তাকে বসরার বিচারপতি নিযুক্ত করেন। দীর্ঘ বার বছর যাবৎ তিনি বসরার বিচারপতি হিসেবে কাজ করেছেন। এ দীর্ঘ সময়ের বিচারকার্যে তার দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তা, কালের জ্ঞানীদের হয়রান করে তুলে। সামন্য ধারণা নিতে তার দু’টি চিত্র তুলে ধরলাম-

প্রথম চিত্রঃ

বসরার বিচারালয়ে বসে আছেন হযরত কা’ব বিন ছূর। লোকেরা যার যার মত বিভিন্ন সমস্যা-সমাধান ও বিচারের জন্য উপস্থিত হচ্ছেন। তিনি একের পর এক সমাধান দিয়ে যাচ্ছেন। এক সময় দু’ব্যক্তি উপস্থিত হলো। তাদের একজন অন্যজনকে জমি বিক্রি করেছে। খরিদদার জমি ক্রয়ের পর দেখল যে, জমিটি পাথুরে তাই তিনি জমি ফেরত দিতে চান। সমস্যা হলো বিক্রেতা এতে সম্মত নয়। তাই বিচারপতি দরবারে আসা। বিচারপতি কা’ব তাদের দু’জনের কথা শুনার পর ক্রেতার উদ্দেশ্যে বললেন- ‘মনে করো, জমিটা ক্রয়ের পর তুমি দেখতে পেলে যে, তা খনিজ সম্পদে ভরপূর। তাহলে কি তুমি তাকে জমি ফেরৎ দিতে? ক্রেতা বলল- না জনাব। এ পর্যায়ে বিচারপতি বললেন- ‘অনরূপ জমি পাথুরে হওয়ার কারণে তুমি তা ফেরৎ দেওয়ার অধিকার রাখ না।

দ্বিতীয় চিত্রঃ

কা’ব বিন ছূর বসে আছেন হযরত ওমরের মজলিসে, এমন সময় এক লোক এসে বলল - হে আমীরুল মুমিনীন! আমার জমিতে একটা ঝর্ণা আছে। লোকেরা সে ঝর্ণা দিয়ে তাদের জমি সেচ দেয়। তাদের জমির ‘করগুলো’ কি আমাকে নেওয়ার অনুমতি দিবেন? হযরত ওমর বললেন- যাও, তা তোমার জন্য।’ তখন কা’ব বললেন- ‘ হে আমিরুল মুমিনীন! জমির করগুলো তো সে পাওয়ার যোগ্য নয়!’ হযরত ওমর বললেন- কেন?

কা’ব উত্তরে বললেন- কারণ, সে সেচ্ছায় মানুষকে পানি ব্যবহারের অনুমতি দেয় না, বরং পানি উপচে পড়ে তার জমি অতিক্রম করে অন্যের জমিতে চলে যায় তাই অন্যরা তার পানি ব্যবহারের সুযোগ পায়। অন্যথায় আপনি তাকে নির্দেশ দিন, মানুষের জমি থেকে পানি বন্ধ করে রাখতে, যদি পারে তাহলে সে ‘কর’ নেওয়ার অধিকার রাখে অন্যথায় না।’

হযরত ওমর লোকটির উদ্দেশ্যে বললেন- ‘তুমি কি পানি বন্ধ করতে পারবে?

উত্তরে সে বলল- না, তা সম্ভব নয়।

তখন হযরত ওমর বললেন- ‘তাহলে তুমি ‘কর’ আদায়ের অধিকার রাখ না।

---------------------------------------------------------------

এবার শুনুন তার বিচারপতি পদে মনোনয়ণের গল্প!


একদিন হযরত ওমর তার দরবারে বসে আছেন। এমন সময় এক মহিলা উপস্থিত হলেন। মহিলা এসে হযরত ওমরের সামনে তার স্বামীর খুবই প্রশংসা করলেন। প্রশংসা ভাষা ছিল এরকম- ‘হে আমিরুল মুমিনীন! আমার স্বামী খুবই খোদাভীরু লোক, তিনি সারাদিন রোজা রাখেন এবং সারারাত ইবাদত বন্দেগী করে কাটান!’

হযরত ওমর মহিলার জন্য দোয়া করলেন এবং তিনি চলে যেতে আরম্ভ করলেন। উপস্থিত লোকদের মাঝে হযরত কা’ব বিন ছূর ও ছিলেন। তিনি বললেন- হে আমিরুল মুমিনীন! আপনি মহিলাকে সাহায্য করেন!

হযরত ওমর বললেন- কিসের সাহায্য?

হযরত কা’ব বললেন- ‘মহিলা আপনার কাছে স্বামীর প্রশংসা করেনি! বরং স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন!

হযরত ওমর হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন- তা কিভাবে?

উত্তরে কা’ব বললেন- ‘যে মহিলার স্বামী দিনের বেলায় সর্বাবস্থায় রোজা রাখেন আর রাত্রি বেলায় ইবাদত করেন। তিনি স্ত্রীর যৌবিক চাহিদা কখন পূরণ করেন? আর মহিলা আপনাকে একথাই বুঝাতে চেয়েছেন!

হযরত ওমর মহিলাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন। দেখা গেল হযরত কা’ব -এর কথাই সঠিক। তখন হযরত ওমর কা’বকে বললেন- তার স্বামী বিচারটা তাহলে তুমিই করে দাও।

হযরত কা’ব বললেন- মহিলার স্বামী প্রতি চারদিনের তিন দিন ইচ্ছা মতো ইবাদত করতে পারবে। বাকী একদিন তার স্ত্রীর জন্য বরাদ্দ করতে হবে।

হযরত ওমর বললেন- তা কিভাবে?

তিনি বললেন- আল্লাহ তা’য়ালা পুরুষকে (সকল স্ত্রীর মাঝে সমতা বঝায়ের শর্তে) চার স্ত্রী গ্রহনের অনুমতি দিয়েছেন। মনে করুন এ লোক যদি চারটি বিবাহ করত তাহলে তার এ স্ত্রী চার দিনের একদিন পেত। তাই আমরা মনে করলাম, সে যেন চার বিবাহিত। তাই তার এই স্ত্রী চার দিনের একদিন অবশ্যই পাবে!”

সমাধান শুনে হযরত ওমর হতবাক হয়ে গেলেন। এবং সাথে সাথে বলে উঠলেন- “যাও , তোমাকে বসরায় বিচারপতি নিযুক্ত করলাম!”

--------------------------------------------------------------

হিজরী ৩৬ সনে এ মহান বিচারপতি শাহাদাত বরণ করেন।

বিষয়: বিবিধ

২০৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File