ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালের অপর নাম কসাইখানা
লিখেছেন লিখেছেন ইব্রাহীম খলিল ২৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ০২:১৩:৪১ দুপুর
রাজধানী ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে অহরহ। অ্যাপোলো হাসপাতালে ব্যবসায় পরিণত হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা। সরকারি কোনো তদারকি না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। চিকিৎসাসেবা দেওয়ার নামে এ হাসপাতালে হচ্ছেটা কি?
ঘটনা-১ : জরায়ুতে টিউমার ধরা পড়ার পর চার বছর আগে নীলফামারির সৈয়দপুর উপজেলার বাঁশবাড়ী এলাকার আবদুল মজিদ মণ্ডলের মেয়ে রিপা সরকারকে ভর্তি করা হয়েছিল ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে। সেখানে অস্ত্রোপচারে টিউমার অপসারণের পর রিপাকে ছাড়পত্র দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কিছুদিন পর আবার পেটে ব্যথা শুরু হয় রিপার। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কোনো রোগ ধরা পড়ছিল না। সর্বশেষ ২৮ জুন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুরের আইডিয়াল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যেটি অপসারণ করা হয়েছে, সেটি আসলে এ্যাপোলো হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় পেটের ভেতর রেখে দেওয়া কাপড় (মপ)।
ঘটনা-২ : কয়েক মাস আগের ঘটনা। ঠাণ্ডা, সর্দি, জ্বর ও মাথাব্যথা নিয়ে হিউবার্ট রয় নিন্টু (৪৫) ভর্তি হন অ্যাপোলো হাসপাতালে। ভর্তির পর চিকিৎসকরা তাকে ইনজেকশন দেন। এতে তার অবস্থার অবনতি ঘটে। শরীর ফুলে যায়। এরই মধ্যে দুই দফা স্ট্রোক করেন তিনি। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখার ১২ দিন পর মৃত্যু ঘটে তার। কিন্তু মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরও ৭০ হাজার টাকা মূল্যের আরেকটি ইনজেকশন পুশ করা হয় নিন্টুর শরীরে। রোগীর স্বজনদের কাছে চিকিৎসা-ব্যয় হিসেবে বিল ধরিয়ে দেওয়া হয় সাড়ে ৫ লাখ টাকার। পুরো টাকা না দেওয়া হলে লাশ দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্বজনদের অভিযোগ, নিন্টুর মৃত্যু হয়েছে ভুল চিকিৎসায়। তারা হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। বাড্ডা থানায় একটি জিডিও করা হয়।
ঘটনা-৩ : ২০১১ সালের আগস্টের মাঝামাঝি একজন ঊধর্্বতন সেনা কর্মকর্তার এক মেয়েকে অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি করা হয় এখানে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওই রোগীর শরীরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু শনাক্ত করা হয়। এর ভিত্তিতে চিকিৎসা চলার একপর্যায়ে রোগীর মৃত্যু ঘটে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক এক কর্মকর্তার সূত্র ধরে বিষয়টি অবহিত হন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ্যাপোলো হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট ভুল বলে অভিহিত করা হয়।
ঘটনা-৪ : বেসরকারি ফার্মের একজন চাকুরে হৃদরোগের উন্নত চিকিৎসা নিয়ে বাঁচার আশায় শেষ সম্বল বিক্রি করে ভর্তি হন ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে। খরচের তালিকা অনুযায়ী দৈনিক নির্দিষ্ট একটি অঙ্কের টাকা বিল আসার কথা ভাবেন তিনি। আংশিক সুস্থ হয়ে ওঠেন। প্রয়োজন না হলেও তাকে দেওয়া হয় লাইফ সাপোর্ট। রাখা হয় আইসিইউতে। কেন আইসিইউতে রাখা হলো, চিকিৎসকের কাছে পেলেন না এর সদুত্তর। এক মাস পর তাকে ধরিয়ে দেওয়া হয় ১৩ লাখ টাকার বিল।
ঘটনা-৫ : নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক রোগীর স্বজন জানান, তার বড় ভাই মারা গেছেন এ্যাপোলো হাসপাতালে। যেদিন রাত ১০টায় মারা গেছেন বলে ডাক্তাররা নিশ্চিত করেন, সেদিন সকালের দিকেই তিনি ভেতরে গিয়ে দেখেছেন রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস নেই। বিষয়টি তিনি ওই সময় উপস্থিত চিকিৎসককে জানালেও তারা ভেনটিলেটর না খুলে আরও পর্যবেক্ষণে রাখার অজুহাত দেখান এবং রাতে মৃত্যুর কথা ঘোষণা করেন। বিল পরিশোধের সময় দেখা যায়, ওই বাড়তি সময়টুকুর বিল যোগ করা হয়েছে।
ঘটনা-৬ : ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে উকিল নোটিস পাঠান রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) মেয়র শরফুদ্দিন আহমদ ঝন্টু। তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত
হয়ে দীর্ঘ ১৯ দিন চিকিৎসা নেন। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকা বিল করে ছাড়পত্র দেয়।
লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, এ্যাপেলো কর্তৃপক্ষ মেয়র ঝন্টুকে এক মাস বিশ্রাম নেয়ার কথা বললে তিনি তা করেন। এরমধ্যে আরো দুই বার এ্যাপোলেতে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে আসেন। কিন্তু মেয়রের ডান হাত ব্যথা করতে থাকে। পরে রংপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে এক্সরে করলে দেখা যায় ডান হাতটি এখনো ভাঙা আছে। তারা ওই হাতের কোনো চিকিৎসা করেনি। চিকিৎসা ছাড়াই তারা মেয়রকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিয়েছে।
ঘটনা-৭ : গত ১১ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে ঢাকার পান্থপথের কাছে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত একটি জাতীয় দৈনিকের প্রধান ফটো সাংবাদিক জিয়া ইসলামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১৩ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরে পাঠানো হলেও তার মাথার খুলি রয়ে গিয়েছিল ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে। সিঙ্গাপুরের গ্লেনইগলস হাসপাতালের চিকিৎসকরা বিষয়টি নজরে আনার পরে ১৩ দিন পর সেই খুলি আরেক রোগীর সঙ্গে পাঠানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, নিউরো সার্জারির রোগীর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মাথার খুলি বা খুলির অংশ অপসারণের প্রয়োজন হলে তা শরীরের সঙ্গেই সংযুক্ত রাখতে হয় বা হাসপাতালের ফ্রিজে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখতে হয়। কিন্তু হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে রোগীকে স্থানান্তরের সময় তা রোগীর সঙ্গে দিয়ে দিতে হয়। এক্ষেত্রে খুলি পাঠানোর বিষয়টি হয়তো ভুলেই গিয়েছিল ঢাকার অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষ!
এই ঘটনা গুলু কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আমার পরিবারও এদের অপচিকিৎসার শিকার। কতিপয় ভারতীয় অখ্যাত ডাক্তার আর বাংলাদেশের মেরুদণ্ডহীন কিছু চিকিৎসক অ্যাপোলোর সহায়ক। বারবার বিভিন্নভাবে আ্যাপোলোর বিরুদ্ধে রোগীরা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করলেও নির্লিপ্ত সরকার।
সুত্রঃ
১। বাংলা ট্রিবিউন
২। বাংলানিউজ২৪
বিষয়: বিবিধ
১৪৭১ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
রোগীর চিকৎসা নিয়ে প্রতারণা করতে এদের তুলনা নেই । সরকারী হাসপাতালের নোংরা পরিবেশ ও অব্যবস্থাপনার কারণে এরকম ফাইভ স্টার টাইপের হসপিটালগুলো গজিয়ে উঠছে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন