ধর্মের হিল্লা বিয়ে এবং নারীর যৌনপুলক।
লিখেছেন লিখেছেন ভিক্টোরিয়া ২৬ মে, ২০১৩, ১১:২৫:৩৭ সকাল
এবার আমরা দৃষ্টি দেব আরও একটি বিবাহপ্রথার ওপর। অনেকেই হয়ত এ ব্যাপারে কিছু না কিছু জেনে থাকবেন - কারণ গ্রামবাংলায় এই নির্মম প্রথাটি এখনও এই একবিংশ শতাব্দীতেও বহাল তবিয়তে আছে এবং অনেক পরিবারে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাপারটা হচ্ছে এই প্রকার:
যখন স্বামী তার স্ত্রীকে ইসলামী পন্থায় স্থায়ী (অর্থাৎ তিন তালাক) দিয়ে দিলো, তারপর সেই স্ত্রী তার ভূতপূর্ব স্বামীর জন্য সম্পূর্ণ হারাম হয়ে যাবে। স্বামী আর কিছুতেই সেই স্ত্রীর সাথে পুনরায় স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না; এমনকি সেই স্ত্রীকে বিবাহও করতে পারবে না। তবে এর মাঝে হেরফের আছে। তা হচ্ছে এই যে, ঐ তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে অন্য কোনো পুরুষের সাথে বিবাহে বসতে হবে। তারপর তাদের মাঝে যৌনসঙ্গম হতে হবে। এরপর এই দ্বিতীয় অস্থায়ী স্বামী মহিলাটিকে তিন তালাক দেবে। মহিলাটি তিন মাসের ইদ্দত করবে এবং যদি সে গর্ভবতী না হয়, তখনই তার ভূতপূর্ব স্বামী তাকে আবার বিবাহ করতে পারবে। যদি মহিলাটি অস্থায়ী স্বামী দ্বারা গর্ভবতী হয়ে পড়ে, তবে এব্যাপারে ইসলামী কায়দা পালন করতে হবে, আমি সে প্রসঙ্গে এখন যাছ্ছি না। অনেক ইসলামপন্থী এ ব্যাপারে খুব উৎফুল্লতা প্রকাশ করেন এই বলে যে: দেখুন, ইসলাম কতনা ন্যায় বিচার করছে। এই হিল্লা প্রথা মহিলাকে আরও একটি সুযোগ দিল অন্য স্বামীর ঘর করার। ইসলামীরা এও বলেন যে, এই হিল্লা প্রথার জন্যই পুরুষেরা যত্রতত্র তালাক দেওয়া থেকে বিরত থাকবে।
কিন্তু ইসলামীদের এই সব আবোলতাবোল কতই না হাস্যকর। স্বামী দিল স্ত্রীকে তালাক, কিন্তু তার ভুক্তভোগী স্ত্রীকে কেন আবার বিবাহ করতে হবে এক বেগানা পুরুষকে যদি তার ভূতপূর্ব স্বামী চায় তার পূর্বের স্ত্রীর সাথে একটা সমঝোতা করে নিতে? কিসের বাধা এতে? কেনই বা ভূতপূর্ব স্ত্রীকে আবার যৌনসম্পর্ক স্থাপন করতে হবে অন্য এক পুরুষের সাথে? এটা কি স্ত্রীকে সাজা দেওয়া হল না? এই সাজা তো স্বামীরই পাওয়া উচিত ছিল। কারণ সেই তো তালাক দিয়েছিল।
যাই হোক, আমরা এখন দেখব কোরান ও হাদিস কী বলছে হিল্লা বিবাহ সম্পর্কে।
কোরান সুরা বাকারা আয়াত ২৩০ (২:২৩০):
"তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয় বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করতে কোন পাপ নেই, যদি আল্লাহ্র হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হল আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা, যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়"।
এখানে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল যে, হিল্লা বিবাহে অস্থায়ী স্বামীর সাথে মহিলাকে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হতেই হবে। তা না হলে এই হিল্লা বিবাহ সহিহ হবে না। যদি নামকা ওয়াস্তে এই হিল্লা বিবাহ, যা সাধারণত মসজিদের ইমাম অথবা কর্মচারীর সাথে হয়ে থাকে, তবে তা মোটেই সিদ্ধ হবে না। এই আইন যেহেতু কোরানে লিখিত, তাই বিশ্বের কারও সাধ্যি নাই যে এই আইনের রদবদল করে। এর রদের জন্য দুনিয়ার সমগ্র মুসলিম নারীরা জীবন দিয়ে ফেললেও কারও কিছু করার নেই। এটা হচ্ছে এমনই পরিস্থিতি।
হিল্লা বিবাহের ব্যাপারে দেখা যাক একটি হাদিস।
মালিকের মুয়াত্তা: হাদিস ২৮. ৭. ১৮
"ইয়াহিয়া—মালিক—ইয়াহিয়া ইবনে সাইদ—আল কাশিম ইবনে মুহাম্মদ থেকে। ইয়াহিয়া বললেন রসুলুল্লাহর স্ত্রী আয়েশা (রঃ) কে বলা হল: এক স্বামী তার স্ত্রীকে স্থায়ীভাবে তালাক দিয়েছে। সেই স্ত্রী অন্য এক পুরুষকে বিবাহ করল। সেই পুরুষ মহিলাকে তালাক দিয়ে দিল। মহিলাটির আগের স্বামী তার তালাক দেওয়া স্ত্রীকে পুনরায় বিবাহ করতে পারবে কি না? বিবি আয়েশা উত্তর দিলেন ততক্ষণ হবে না যতক্ষণ না সে মহিলাটি ঐ পুরুষটির সাথে যৌন সঙ্গমের মিষ্টি স্বাদ উপভোগ করেছে"। এই হচ্ছে হিল্লা বিবাহের মর্মকথা।
মুসলিম নারীদের যৌনসঙ্গম উপভোগ করার অধিকার আছে কি?
আমরা দেখেছি, শারিয়া আইন বলছে চাহিবামাত্র স্ত্রীকে তার দেহদান করতে হবে স্বামীকে। কিন্তু এই নিয়মটা স্ত্রী তার স্বামীর ওপর প্রয়োগ করতে পারবে না। একজন মুসলিম স্ত্রীকে অপেক্ষা করতে হবে, কখন তার স্বামী তার (স্ত্রীর) যৌনক্ষুধা মেটাতে প্রস্তুত - অর্থাৎ স্ত্রী চাইলেই স্বামীর কাছে যৌনসঙ্গম আশা করতে পারবে না। স্ত্রীর তীব্র যৌনক্ষুধা জাগলেও সে তা মুখ ফুটে স্বামীকে জানাতে পারবে না। যৌনউপভোগের একমাত্র নায়ক ও পরিচালক হচ্ছে স্বামী। স্ত্রী হচ্ছে মেঝেতে পড়ে থাকা চাটাই। স্বামী সেই চাটাইয়ে বীর্যপাত করলেই যৌনসঙ্গম সমাপ্ত হয়ে গেল। মোটামুটি এইই হল ইসলামী যৌনসঙ্গম। এখানে নারীর ভূমিকা নিতান্তই নগণ্য - একেবারেই নেই বলা চলে। যেখানে স্বামীকে যৌনসঙ্গমের কত ব্যবস্থা দিয়েছে শরিয়া আইন, যেমন এক সাথে চার স্ত্রী, অসংখ্য যৌনদাসী, অগণিত যুদ্ধবন্দিনী…ইত্যাদি; সেখানে স্ত্রীকে সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করতে হচ্ছে মাত্র একজন পুরুষের ওপর - তার স্বামী, আর কারও ওপর নয়। কোনো মুসলিম নারীর কি এমন বুকের পাটা আছে যে, শারীয়া আইন অমান্য করে তার ইচ্ছামত যৌনক্ষুধা মেটাবে? এই কাজ করলে যে তাকে পাথর মেরে হত্যা করা হবে!
আসুন আমরা এখন দেখি শারিয়া আইন কি বলছে মুসলিম নারীদের যৌন ক্ষুধা নিয়ে।
শারিয়া আইন এম ৫.২ (উমদাত আল সালিক, পৃঃ ৫২৫, ইমাম গাজ্জালী হতে):
স্বামী তার স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করবে চার রাতে এক বার। কেননা স্বামীর হয়ত চার বিবি থাকতে পারে। স্ত্রীকে এর জন্য এই দীর্ঘ অপেক্ষা করতেই হবে। যদি সম্ভব হয় তবে স্বামী এর চাইতে অধিক অথবা কম সঙ্গমও করতে পারে। এমন ভাবে স্ত্রীর সঙ্গমের চাহিদা মিটাতে হবে যেন স্ত্রী চরিত্রবতী থাকে, তার যৌন ক্ষুধা আর না জাগে। এর কারণ এই যে, স্বামীর জন্য এটা বাধ্যতামূলক যে তার স্ত্রী যেন সর্বদা চরিত্রাবতী থাকে।
বিষয়: বিবিধ
৩৯৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন