কারখানা মালিকরা দায়ী, দাবি রানার

লিখেছেন লিখেছেন রোহান ২৯ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:৩৪:১১ সকাল



ভবন ধসের পাঁচ দিনের মাথায় রোববার বিকালে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব সদর দপ্তরে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এই দাবি করেন।

যশোরের বেনাপোলের একটি বাড়ি থেকে গ্রেপ্তারের পর হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয় যুবলীগ নেতা রানাকে। পরে উত্তরায় র‌্যাব সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের সামনে আনা হয় তাকে।

র‌্যাব প্রধান মোখলেসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ভবন ধসে এত প্রাণহানির জন্য রানাই দায়ী।

তবে রানা সাংবাদিকদের বলেন, “আমি মালিকদের কোনো ‘ফোর্স’ করিনি, বরং মালিকরা আমাকে ফোর্স করে বলেছিলেন, একদিন গার্মেন্ট বন্ধ রাখলে তাদের (গার্মেন্ট মালিকদের) অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে, শিপমেন্ট বাতিল হয়ে যাবে।”

মোখলেসুর রহমান বলেন, রানাই শ্রমিকদের কাজ করতে ‘বাধ্য’ করেছিল।

সাভার বাসস্ট্যান্ডে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন রানা প্লাজায় গত মঙ্গলবার ফাটল দেখা দিলে শ্রমিকেরা আতঙ্কে বেরিয়ে এসেছিল। তখন শিল্প পুলিশ ও বিজিএমইএ কর্মকর্তারা ওই কারখানায় গিয়েছিলেন। তারা প্রকৌশলীদের দ্বারা পরীক্ষার আগ পর্যন্ত ওই ভবনে কাজ বন্ধ রাখতে সম্মতও হন।

কিন্তু পরদিন বুধবার সকালে ভবনে থাকা পাঁচটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ শুরু হয়, আর এর মধ্যেই ধসে পড়ে ৩৫ হাজার বর্গফুট এলাকাজুড়ে নির্মিত ওই ভবনটি।

শ্রমিকরা অভিযোগ করেছে, তারা কাজে যেতে না চাইলেও তাদের ‘বাধ্য’ করেছিল মালিক পক্ষ। অন্যদিকে এই মামলায় গ্রেপ্তার কারখানা মালিকদের দাবি, ভবন মালিক রানার ‘চাপেই’ তারা কারখানা চালু রেখেছিলেন।

ভবন ধসের জন্য কারখানাগুলোতে ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহারকে দায়ী করে রানা বলেছেন, এই বিষয়ে বিভিন্ন সময় তিনি কারখানা মালিকদের নোটিসও দিয়েছিলেন।

তিন বছর আগে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া রানা প্লাজা ইমারত নির্মাণ আইন অনুসরণ করে হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। ধসের পর মামলাও করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। দায়িত্বে অবহেলার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাভার পৌরসভার দুই প্রকৌশলীকেও।

রানা প্লাজা ধসের পর বাজার রোডে সোহেল রানার মালিকানাধীন আরেকটি ভবনেও ফাটল দেখা দিয়েছে। পারিবারিকভাবে অর্থশালী না হলেও অল্প বয়সে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার পেছনে রানার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাকে মূল কারণ মনে করছেন স্থানীয়রা।

সাভার পৌর যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পরিচয়ে কিছু দিন আগেও পোস্টারে এলাকা ছেয়ে ফেলেন রানা, ওই পোস্টারে ছবি ছিল স্থানীয় সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদেরও।

ভবন ধসের সময় রানাও ছিলেন এর নিচতলায়, তবে সামনের ওই অংশটি ধসে পড়েনি। তখন জনরোষের ভয়ে বের হচ্ছিলেন না রানা। এক পর্যায়ে মুরাদ জং এসে রানাকে বের করে নিয়ে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।

তবে রানা দাবি করেছেন, দুর্ঘটনার পর তাকে ভবনের নিচ থেকে স্থানীয়রাই উদ্ধার করেছিলেন, মুরাদ জং নয়।

রানার পেছনে মুরাদ জংয়ের মদদ রয়েছে বলে বিএনপি নেতারা দাবি করে এলেও সংসদ সদস্য তা নাকচ করে আসছেন।

রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইলে রানা বলেন, আগে তিনি ছাত্রলীগের ‘সাধারণ সম্পাদক’ (সাভার পৌর) ছিলেন, পরে যুবলীগের ‘কনভেনর’ ছিলেন।

পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়কের পদটিতে কীভাবে এলেন- জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি রানা।

রানা সাভারে মাদক চক্রের অন্যতম হোতা বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

সাভারের আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফউদ্দিন খান ইমু এর বোরাতে জানা যায়, রানার শ্বশুর সাভার পৌর যুবদলের আহ্বায়ক। মূলত শ্বশুরের প্রভাব খাটিয়েই সে সময় মাদক ব্যবসায় আসে।

২০০৯ সালের পর মুরাদ জংয়ের সঙ্গে রানার ঘনিষ্ঠতা হয় বলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় একাধিক নেতা জানান।

বিএনপি অভিযোগ করেছে, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা রানাকে পালাতে সহায়তা করেছেন।

কোনো মহল বা কেউ আশ্রয় দিয়ে রানাকে পালাতে সহযোগিতা করেছিল কি না- জানতে চাইলে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক জিয়াউল আহসান বলেন, “না। কেউ আশ্রয় প্রশ্রয় দিলে তার বেনাপোলে যাওয়ার আগে তিন-চার জায়গায় অবস্থান করতে হত না।”

র‌্যাব জানিয়েছে, ভবন ধসের পর স্থানীয় এক হাসপাতালে ছিলেন রানা। এরপর তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং বুধবার রাত কাটান মোহাম্মদপুরে এক বন্ধুর বাসায়। এরপর রানা চলে যান মানিকগঞ্জে, সেখান থেকে ফরিদপুর হয়ে বেনাপোল যান তিনি।

যশোর র‌্যাবের অধিনায়ক মেজর জাহিদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, রানা বেনাপোলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।



বিষয়: বিবিধ

১২২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File