সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা সংযোজন করা গ্রহণযোগ্য ছিল না : সংসদে আইনমন্ত্রী

লিখেছেন লিখেছেন রোহান ২৯ এপ্রিল, ২০১৩, ০৯:৫৬:১৪ সকাল



আইনমন্ত্রী ব্যরিষ্টার শফিক আহমদ বলেছেন, সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস সংযোজনকরা গ্রহনযোগ্য ছিল না। এটি যুক্ত করা সংবিধানের মৌলিক স্তম্ভ এবং গণতন্ত্র বিরোধী। গণতন্ত্রের মুল কথা হচ্ছে ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। এটা ইসলামেরও শিক্ষা। কারণ ইসলামে ধর্মের ব্যাপারে জোর জবরদস্তি নেই। তিনি বলেন, সামরিক শাসনকর্তা মেজর জিয়াউর সামরিক ফরমান বলে সংবিধানের মুল স্তম্ভ ধর্মনিরপেক্ষতা পরিবর্তন করে ধর্মীয় আবরণ বসিয়ে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস যুক্ত করেছিলেন। এটা গ্রহনযোগ্য ছিলনা। এখন ধর্মনিরপেক্ষতাকে নষ্ট করার জন্য ধর্মীয় উসকানী দিয়ে মন্দির প্যাগোডায় আক্রমণ করা হচ্ছে, মন্দির ভাংগা হচ্ছে। এদিকে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে আইন মন্ত্রী বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে দেশে বিদেশে কারো প্রশ্ন করার কোন অধিকার নেই। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও জাতিকে কলংকমুক্ত করার জন্য এ বিচার করা হচ্ছে।

সংসদে রোববার প্রশ্নোত্তর পর্বে গতকাল পৃথক দুটি সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন। বিকালে ভারপ্রাপ্ত স্পিকার শওকত আলীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়্

সংরক্ষিত মহিলা আসনের বেবি মওদুদের সম্পূর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে আইন মন্ত্রী সংবিবধানে আস্থাহর ওপর আস্থা ওবিশ্বাসের কথা সংবিধানে স্থাপন করার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দায়ি করে বলেন, আমাদের সংবিধাণের প্রস্তাবনায় পরিস্কারভাবে উল্লেখ আছে যেসব অআদর্শের ভিত্তিতে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র -দেশ পরিচালনার মুলনীতি। অনুচ্ছেদ ১২ তে পরিস্কারভাবে আছে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি কিভাবে বাস্তবায়ন হবে। কিন্তু সামরিক শাসন কর্তা জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমান বলে ১২ অনুচ্ছেদ বাদ দেন। তিনি রাষ্ট্রীয় চারমুলনীতিতে চারটি মুলনীতির স্থলে পরিবর্তন করে আল্লাহর ওপর আস্থা বিশ্বাস রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি করেন। তিনি এর মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায় একটা ধর্মীয় আবরণ দেন যেটা গ্রহনযোগ্য ছিল না। এটা সংবিধানের মৌলিক স্তম্ভ বিরোধী এবং গণতন্ত্রের সাথে সাংঘর্ষিক। গণতন্ত্রে বলা হয়েছে ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। এটা ইসলামেরও শিক্ষা । কারণ ইসলামে ধর্মের ব্যাপারে জোর করতে নিষেধ করা হয়েছে। এখন ধর্মনিরপক্ষতার যে নীতি সেটা নষ্ট করার জন্য ধর্মীয় উস্কানী দিয়ে মন্দিরে, প্যাগোডায় হামলা করা হচ্ছে, মন্দির ভাংচুর করা হচ্ছে। এমন কি বায়তুল মোকাররম মসজিদে ঢুকে আগুন দেয়া হয়েছে। যারা এসব ধবংসাত্মক কাজ করতে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে। তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে যারা দোষী প্রমানিত হবে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা হবে।

যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গ

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে দেশ বিদেশে অপপ্রচার মোকাবিলায় সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে- সরকারি দলের ধীন্দ্রে দেবনাথ সম্ভুর এক প্রশ্নের জবাবে আইন মন্ত্রী ব্যরিষ্টার শফিক আহমেদ বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেশীয় আইনে দেশীয় ট্রাইব্যুনালে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে হচ্ছেনা। যদিও কেউ কেউ বলছে ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে হচ্ছে সেজন্য বিদেশী আইনজীবীদের আসতে দেয়া হচ্ছেনা কেন।

তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে অপপ্রচার চালানোর অংশ হিসেবে ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি মীর কাসেম আলীর নাম উল্লেথ করে আমেরিকায় তিনি ২৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে লবিষ্ট নিয়োগ করেছেন বলে জানান। এসংক্রান্ত মন্ত্রীর কাছে আছে বলেও জানান তিনি। এসব ব্যাপারে মার্কিন ও জামার্নী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সৌদি রাষ্ট্রদূতের সাথে আইনমন্ত্রীর বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমি তাদেরকে সুনির্দিষ্টভাবে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। তারা আশ্বস্ত হয়েছেন। তিনি তাদেরকে ৪১ বছর পর কেন যুদ্ধাপরাধের বিচার করছেন তার ব্য্যাখ্যায় ৪টি কারণ উল্লেখ করার কথা জানিয়ে বলেন, মাফ করার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসা, কেউ ্আইনের উর্ধে নয় এটা বুঝানো, ক্ষতিগ্রস্তের ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জাতিকে কলংকমুক্ত করার জন্য এই বিচার করা হচ্ছে। এছাড়া আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ইশতিহারেও বিষয়টিঅন্তভূক্ত ছিল বলেও তিনি বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের জানিয়েছেন বলে জানান। মন্ত্রী বলেন, ১৯৭৩ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়েছিল। কিন্তু ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যারা ক্ষমতায় আসেন তারা সেই বিচার বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তাদের গাড়ীতে পতাকা দিয়েছিলেন। বিদেশী আইনজীবী আসতে না দেয়া প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের বলেছেন, প্রত্যেক দেশের নিজস্ব আইন আছে। বাংলাদেশে বার কাউন্সিলের আইন অনুযায়ী বাংলাদেশী নাগরিক এবং বার কাউন্সিলের সার্টিকেট ছাড়া কেউ এদেশে আইন পেশায় লিপ্ত হতে পারবেনা। যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য ইকোনমিষ্ট পত্রিকাকে দায়ী করে বলেন, এই পত্রিকা সৌদি গেজেটেও যুদ্ধাপরাধকে প্রশ্নতোলার জন্য লেখা প্রকাশে প্রভাবিত করতে চেয়েছিল। মন্ত্রী সৌদিরাষ্ট্রদূতের সাথে বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বলেন, সৌদি রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন- এই বিচারে তাদের কোন আপত্তি নেই। মাওলানা আবুল কালাম আজাদের রায়ের পর দূতাবাসে রায়ের কপি পাঠানোর পর জার্মান ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত সন্তোষ প্রকাশ করেছে বলেও তিনি জানান। তারা বিচার সুষ্ঠু হয়েছে বলেও জানিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, বিচারের মান নিয়ে প্রশ্ন করার অবকাশ দেশে বিদেশে নেই। এই বিচার নিয়ে কারো প্রশ্ন তোলার অধিকার নেই

বিষয়: রাজনীতি

১২৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File