আমার আমি। পর্ব ১
লিখেছেন লিখেছেন দিদারুল হক সাকিব ১৪ মার্চ, ২০১৭, ০৮:২১:১৯ রাত
আমি জানি আমাকে দিয়ে লেখালেখি হবে না। তাও মাঝে মাঝে ভাবি জীবনের গল্পগুলো লিখে রাখি। সবসময় তো আর লেখার সুযোগ হয়ে উঠে না। সময়,সুযোগ করে লিখতে বসলেই দু-তিন লাইন লিখে আর লিখতে ইচ্ছে করে না। আসলে ইচ্ছে করে না তা নয়, ধৈর্য থাকে না। ধৈর্য থাকলেও মাথা আর কাজ করে না।
ফাইনাল প্রফ শেষ করে বাসায় আসলাম। অফুরন্ত সময় বলা চলে। খাই-দাই, ঘুরি-ফিরি আর ঘুমাই। এছাড়া আপাঃতত আর কোন কাজ নাই বললেই চলে। আব্বু আম্মুর সাথে ফাইনাল প্রফের গল্প করি।
মেডিকেলে ফাইনাল প্রফটাই সবচে কঠিন।এক একটি রাত সত্যিই বিভীষিকার মত ছিল। প্রতিটি পরীক্ষার আগের রাতে ঘুম হতো না। মনে পড়ে মেডিসিন ভাইভার দুদিন আগ থেকে ভাত খেতে পারছিলাম না :( প্রতিবেলা মিল দেই,দু-এক লোকমা খাওয়ার পর আর খেতে পারতাম না। হুদাই ভাত নষ্ট করতাম :(। শেষে বাধ্য আপেল,কমলা আর জুস খেয়ে থাকতে হতো। এতো এতো মানসিক অত্যাচার আর কখনো সহ্য করতে হয়নি। জীবনে যারাই ফাইনাল প্রফের অত্যাচার একবার সহ্য করেছে তারা কখনো চাইবে না তাদের চরম শত্রুও ফাইনাল প্রফে খারাপ করুক। এ এক ভীষণ মানসিক অত্যাচার, বলে লিখে আমি বুঝাতে পারবো না।
এখনো মনে হয় এইতো সেদিন মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিলাম। দেখতে দেখতে পাঁচটি বছর কেটে গেলো টেরই পেলাম না। সময় কত দ্রুত বয়ে যায়! পাঁচ বছর আগের কথা চিন্তা করলে মুখ থেকে একটি শব্দই বেরিয়ে আসে "আলহামদুলিল্লাহ"। আল্লাহতালা আমার জন্য সবকিছু এতো সহজ করে দিয়েছেন যে শোকর আদায় না করে পারছি না। (আল্লাহতালা সবকিছু আরো কঠিন করে দিলেও আমি আল্লাহর শোকর করতাম, কারন মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করে আল্লাহতালা কোন কিছুই কারো জন্য কঠিন করে দেন না। তিনি শুধুমাত্র ঈমানের পরীক্ষা নেন)
কখনো ভাবি এতো সহজে সবকিছু শেষ করতে পারবো। ভর্তির আগে যেটা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম,ভর্তির পর সেই টাকা পয়সা নিয়ে আমাকে তেমন একটা ভাবতে হয়নি। প্রথম মাসের কথা মনে থাকবে সারাজীবন। কত খরচ! এই কিনো সেই কিনো, এই ফি সেই ফি! কত কি! হোস্টেলে মিল চালু হওয়ার আগের কয়েকটা দিন একবেলা ভাত খেতাম। সকালে কলেজে যেতাম,১১ টার দিকে নাস্তা করতাম। বাসায় ফিরে গোসল দিয়ে একটা ঘুম দিতাম। ঘুম থেকে উঠে সন্ধ্যায় একসাথে রাতের খাবার খেতাম। ভর্তির প্রথম মাস থেকে টিউশনি শুরু করে দিলাম। জীবনের প্রথম টিউশনিটা দিয়েছিল ডাঃ সামিউল আলম ভাই। কখনো কখনো দু-তিনটা টিউশনিও করাতাম। প্রথম কয়েকটা মাস অনেক কষ্টে ছিলাম।একে তো দাদা-দাদিকে ছেড়ে কক্সবাজার আসা তার উপর টাকা পয়সার চিন্তা তো ছিলই। ওয়াসরুমের দরজা বন্ধ করে, পানির ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে কাঁদতাম। কয়েকমাস পরে জানতে পারলাম ৫ বছরের জন্য সরকারী স্কলারশিপ পেয়েছি (বছরে ৩৫০০ টাকা!!)। বিভিন্ন ব্যাংকে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত ডাচ-বাংলা ব্যাংক(২৫০০/মাস) চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকা(২০০০/মাস) ৫ বছরের জন্য মনোনীত করলো।আলহামদুলিল্লাহ্।
কখনো বড় কোন খরচ লাগলে দাদা তো ছিলই বটবৃক্ষের মতো। বাসা থেকে টাকা পয়সা আনাতাম না। ফার্স্ট ইয়ারে বোনস কিনার জন্য ৬০০০ টাকা দিয়েছিল আম্মু,আমি জানি তখন টাকা পয়সার কতটা কষ্ট ছিলো ফেমিলিতে। ওটাই প্রথম ওটাই শেষ টাকা নেওয়া।আর কখনো আম্মুর কাছে টাকা চাই নি। উল্টো বাসার প্রতিটি কাজে কন্ট্রিবিউট করার চেষ্টা করতাম। ছোট বোনটাকে ইন্টারের পড়াশুনার খরচ দিতাম,ভার্সিটি কোচিংএ ভর্তি করালাম,সিইউতে ভর্তি করালাম। সবকিছু মিলে আলহামদুলিল্লাহ ভালোই ছিল দিনগুলো।
ফাইনাল প্রফ দিয়ে সাময়িক বেকার আছি বলা চলে। পাশ-ফেল নিয়ে আপাঃতত ভাবছি না। আল্লাহতালা কপালে পাশ লিখে রাখলে পাশ করবো। তবে পাশ করাটা খুবই দরকার,আমার জন্য যতটা না আমার ফেমিলির জন্য তার চেয়ে বেশি। যাহোক উপরওলার সিদ্ধান্তকে মেনে নিবো। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আল্লাহতালা আমার চেয়ে অনেক বেশি ভালোবাসেন। সুতরাং যা কিছু হবে সবই আমার মঙ্গলের জন্যই হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৫৮৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ডাক্তারি পেশাটা যতটানা অর্থ উপার্জনের জন্য, তাঁর চেয়ে অধিক বেশি মানবতার সেবায় নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করা।
আশা করি আপনি আসল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হবেন না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন