"বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম"-এর বিকৃত গাণিতিক রূপ ৭৮৬ লিখা বিদআত
লিখেছেন লিখেছেন দিদারুল হক সাকিব ০৮ মে, ২০১৪, ০২:৫৫:০৮ দুপুর
আরবী অক্ষরের (হরফের) গণিতের মান দিয়ে কোড নম্বর লিখার পদ্ধতিটির আবিষ্কারক হচ্ছেন গ্রিসের প্রখ্যাত গণিত-বিশারদ (জ্যামিতিক) পিথাগোরাস। তিনি ছিলেন ইয়াহুদী। মুসলিমের প্রকাশ্য শত্রু। আরবি অক্ষরের মানের হিসাব কষে বিধর্মী কর্তৃক “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” এর যে সংখ্যা বা মান নির্ধারণ করা হয়েছে তা হলো ৭৮৬।
কুরআনের প্রতি হরফের জন্য একটি নির্দিষ্ট মান নির্ধারণ করা হয়েছে যাকে বলা হয় ‘আবজাদ’ মান। মাদরাসা পাঠ্য পুস্তক ‘বাকুরাতুল আদব’ এর পঞ্চম পৃষ্ঠায় এবং المعجم الوسيط নামক অভিধানে উল্লেখিত নিম্ন নমুনায় আরবি অক্ষরের গাণিতিক বা ‘আবজাদ’ মানের চিত্রটি লক্ষ্য করুন।
ابجد
ابجد هوز حطى كلمن
سعفص قرشث شخذ ضظغ
ا ب ج د ه و ز ح ط ى ك ل م ن
١ ٢ ٣ ٤ ٥ ٦ ٧ ٨ ٩ ١٠ ٢٠ ٣٠ ٤٠ ٥٠
س ع ف ص ق ر ش ت ث خ
٦٠ ٧٠ ٨٠ ٩٠ ١٠٠ ٢٠٠ ٣٠٠ ٤٠٠ ٥٠٠ ٦٠٠
ذ ض ظ غ
٧٠٠ ٨٠٠ ٩٠٠ ١٠٠٠
আরবি বাক্য লেখার পদ্ধতিতে একটি অক্ষরের সাথে অন্য একটি অক্ষর মিলিয়ে লেখা হলে ঐ শব্দটি পাঠ করার সময় শব্দটির বাম পাশে হরকতবিহীন একটি আলিফ যোগ করে এক আলিফ টেনে পাঠ করতে হয়। আর অক্ষরটি বামের অক্ষরের সাথে মিলিয়ে লিখলে হরকতবিহীন আলিফকে ছোট আকারে ‘যবর’ যোগ করে অক্ষরের উপর দিলেও এক আলিফ টেনে পাঠ করতে হয়। উক্ত ছোট আলিফকে খাড়া যবর বলে। আলিফের গাণিতিক মান হচ্ছে ১। অক্ষরের উপর দেয়া ছোট আলিফের অর্থাৎ খাড়া যবরের মানও হচ্ছে ১।
রসূল (সঃ) তার জীবদ্দশায় “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” এর সংখ্যা নির্ণয়ক কোন মান লিখে যাননি। এ ছাড়া তিনি তার সাহাবীগণ (রাঃ) এদের কাউকে লিখতে অনুমোদনও দেননি। সুতরাং “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” এর পরিবর্তে ৭৮৬ সংখ্যাটির ব্যবহার করা নি:সন্দেহে একটি বিদ‘আত।
এবার আসুন, লক্ষ্য করি যে, কেন ৭৮৬ লেখা হচ্ছে। পিথাগোরাসের প্রবর্তিত অক্ষরের মান তথা ‘আবজাদ’ মান বসিয়ে দেখা যাক بِّسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” এর মান কত হয়?
ب س م ا ل ل ه ا ل ر ح
৮ ২০০ ৩০ ১ ৫ ৩০ ৩০ ১ ৪০ ৬০ ২
م ن ا ل ر ح ى م
৪০ ১০ ৮ ২০০ ৩০ ১ ৫০ ৪০
অর্থাৎ
২+৬০+৪০+১+৩০+৩০+৫+১+৩০+২০০+৮+৪০+৫০+১+৩০+২০০+৮+১০+৪০=৭৮৬
পাঠকবৃন্দ! পিথাগোরাসের আবিষ্কৃত আরবি অক্ষরের গাণিতিক মান বসিয়ে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” এর কোড নম্বর পাওয়া গেল ৭৮৬ । আবার আপনারা আরবিতে “হরে কৃষ্ণা” هرىكرشنا লিখে উহার আবজাদ মান প্রয়োগ করুন। দেখতে পাবেন যে, এর কোড নম্বর বা আবজাদ মান দাড়াচ্ছে ৭৮৬।
ه ر ى ك ر ش ن ا
১ ৫০ ৩০০ ২০০ ২০ ১০ ২০০ ৫ =৭৮৬
অর্থাৎ ৫+২০০+১০+২০+২০০+৩০০+৫০+১=৭৮৬
এক্ষণে মনে প্রশ্ন জাগবে যে, তাহলে আমাদের দেশের অনেক মাদরাসা, স্কুল, কলেজ, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ক্যাশমেমো, ভাউচার, চাঁদার রসিদ, পোস্টার, সাইনবোর্ড, অফিসিয়াল প্যাড ইত্যাদি নানাবিধ দলীল বা কাগজ-পত্র তথা তাবিজের শিরোনামে যে ৭৮৬ কোড নম্বর লিখা হয়ে আসছে এর অর্থ কি? মুসলিম ভাই বোনেরা আৎকে উঠবেন না!
এবার চিন্তা করে দেখুন, আল্লাহকে স্মরণ করতে গিয়ে না বুঝে বিধর্মীদের সবক নেয়া “আবজাদ” মান ব্যবহার করে আমরা নিজেদের অজান্তে কত বড় পাপের কাজ করে যাচ্ছি। অতএব সাবধান থাকুন এবং যাছাই-বাছাই না করে সংখ্যা তত্ত্বের হিসাব না জেনে দ্বীনি ব্যাপারে সংখ্যার ব্যবহার করবেন না, বরং আরবি শব্দ ব্যবহার করুন নতুবা নিজ ভাষায় লিখুন। মনে রাখবেন, রসূল (সঃ) বলেছেন-
সাওয়াবের উদ্দেশে দ্বীনের মধ্যে সংযোজিত প্রতিটি নতুন বিষয়ই বিদ‘আত, প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা এবং প্রতিটি ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম। (মুসলিম, মিশকাত-১৪১, নাসাঈ-১৫৭৭)
বিষয়: বিবিধ
৩২২৩ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক সুন্দর হয়েছে ... আপনার কাছ থেকে এমন পোষ্ট বেশী বেশী আশা করি ।
এই আবজাদ ব্যাপারটার শুরুতে-ই মূলোৎপাটন করলে হয়তো এভাবে বিস্তার লাভ করতে পারতো না । আমি জানি না, তখন উলামারা এর বিরুদ্ধে কি কোনো অবস্থান নিয়েছিলেন ।
আমার কাছে ইংরেজীতে লেখা একটি ইসলামী ম্যাগাজিনের প্রবন্ধে (২০০৫ সালে প্রকাশিত) এই বিষয়টি বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে যে, আসলে আবজাদ মান অনুসারে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম”-কে প্রকাশ করতে চাইলে সেটা প্রকৃতপক্ষে হবে ৭৮৭ ।
ঐ প্রবন্ধে এর ইতিহাস আলোচনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে যে, বর্ণমালার (alphabet) প্রতিটি অক্ষরের (letter) জন্য গাণিতিক মান আরোপ করার শৈলীর (art of numerology) পেছনে পিথাগোরাসকে কৃতিত্ব দেয়া হয় । পিথাগোরাসের এই জ্ঞান-কে ব্যবহার করে ইহুদীরা তাদের হিব্রু বর্ণমালার ২২টি অক্ষরের উপর গাণিতিক মান আরোপ করে তাদের ধর্মগ্রন্থের নিগূঢ় অর্থ উদ্ধার করার প্রয়াস চালায় । এটা তখন থেকে কাবালিষ্ট জিমেট্রিয়া (Qabalist Gemetria) নামে অভিহিত হতে থাকে । কিছু অত্যুৎসাহী মুসলিম ধর্মবেত্তা এই জিমেট্রিয়া সম্বন্ধে জ্ঞানার্জন করে এর সাথে আরো ৬টি অক্ষর যোগ করে আরবী বর্ণমালার জন্য গাণিতিক মান নির্ধারণপূর্বক এটাকে আবজাদ নাম দিয়ে মুসলিম সমাজে এর প্রচলন শুরু করে । [দ্রষ্টব্যঃ Dictionary of Islam by Thomas Patrik Hughes]
যাহোক, আপনি বলেছেন, সুতরাং এই আবজাদ-ও কি আরেকটি বিদআত নয় ? ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন