ইসলাম কি বিজ্ঞান সম্মত নাকি বিজ্ঞান ইসলাম সম্মত???

লিখেছেন লিখেছেন দিদারুল হক সাকিব ২৭ এপ্রিল, ২০১৪, ০৪:০৭:০৬ বিকাল



প্রথমেই বলে রাখা ভালো ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান,ইসলামে কোন অপূর্ণতা নাই।পক্ষান্তরে বিজ্ঞান অপূর্ণ,সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হয়।বিজ্ঞানের যে বিষয়টি কে আপনি আজ সত্য বলে জানবেন হয়ত কিছুদিন পর সেটিই মিথ্যা প্রমানিত হবে।

অ্যারিস্টটল যখন বললেন সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে, তখন তা নিয়ে লোকে আপত্তি করে নি, কারণ চোখের দেখায় এটাই সত্য বলে মনে হয়। কিন্তু কোপারনিকাস যখন বললেন পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে, তখন ঘোর আপত্তি শুরু হল। কারণ এ কথা মানুষের সহজাত প্রবণতার বিরুদ্ধে যাচ্ছে। কিন্তু যখন ব্রুনো, গ্যালিলিওরা এর স্বপক্ষে যুক্তি দিলেন তখন মানুষ দেরিতে হলেও সত্যকে মেনে নিতে বাধ্য হল।

বিজ্ঞানের রূপ এটাই। বিজ্ঞান সত্যের অনুসন্ধান করে, সত্যের মানদণ্ড নির্ধারণ করে না। অ্যারিস্টটল যা বলেছিলেন তখন সেটাই ছিল বিজ্ঞান, আজ আইনস্টাইনের কথাকে আমরা সত্য মানি, কাল হয়তো দেখা যাবে তা ছিল ভুল। যে জিনিস পরিবর্তনশীল তা থেকে বিশুদ্ধ জ্ঞান আহরণ সম্ভব নয়।

সুতরাং আল্লাহ্‌র থেকে আগত জ্ঞান তথা আল কোরআন পূর্ণ,অপরিবর্তনশীল আর মানুষের স্বতঃলব্ধ জ্ঞান অপরিপূর্ণ। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ইসলামের ভিত্তি যুক্তি নয়; বিজ্ঞান নয়, বিশ্বাস। কাজেই বিজ্ঞান বা যুক্তি ইসলামের পক্ষে যাক বা যাক, সেসবকে আমরা কেয়ার করি না। এটাই ঈমানের প্রথম এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কথা।

রাসূল (সা) এর মিরাজের ঘটনা অবিশ্বাসীরা এককালে ‘অবাস্তব’ বলে উড়িয়ে দিলেও আইনস্টাইনের থিওরি অফ রিলেটিভিটি আজ এই ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে সমর্থ হয়েছে। তার মানে এই না যে, আধুনিক বিজ্ঞান এই ঘটনাকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলে আমরা তাতে বিশ্বাস আনতাম না। আগেই বলেছি, ইসলামের ভিত্তি বিজ্ঞান নয়, বিশ্বাস। আবু বক্বর (রা) কে মক্কার কাফিররা মিরাজের ঘটনার উল্লেখ করে বলল-“এখন কি তুমি এই অবাস্তব গাঁজাখুরি কাহিনীও বিশ্বাস করবে??” আবু বক্বর কিন্তু বলেননি-“নিশ্চয়ই এর পেছনে কোন যুক্তি আছে”, তিনি বলেছেন-“রাসূল (সা) যদি এই কথা বলে থাকেন, তবে আমি তা বিশ্বাস করলাম”।

এটাই ঈমানের মূল কথা। আমরা যেন আল্লাহ্‌র বিধানকে নিজেদের মত করে প্রমাণের চেষ্টা করে না বলি-“এটা যুক্তিযুক্ত কাজেই আমি বিশ্বাস করলাম”।

বরং আমরা বলব-“আল্লাহ বলেছেন কাজেই এটা শতভাগ সঠিক, এর পেছনে যুক্তি খুঁজে পাই আর না ই পাই”।

ইসলামের ভিত্তি যদি বিজ্ঞানই হত তাহলে মিরাজের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে এর উপরে কাফিররা ঈমান আনত, তাই নয় কি? কিন্তু তবু ওরা বলবে, ওই বোরাক আবার কীরকম জন্তু !! অমনটা তো কোনদিন দেখিনি !!

যেহেতু ইসলাম পূর্ণ আর বিজ্ঞান অপূর্ণ, তাই ইসলামের ক্ষেত্রে “বিজ্ঞানসম্মত” কথাটা অর্থহীন। “বিজ্ঞানসম্মত” মানে বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত। এখন কথা হল যেটা নিজেই অপূর্ণ সেটা একটা পূর্ণ বিষয়কে প্রমাণ করার কে??? সুতরাং ইসলাম বিজ্ঞান সম্মত নয় বরং বিজ্ঞানই ইসলাম সম্মত।

একটা উদাহরণ দেই। আমিনুল বাংলাদেশের একজন ফুটবলার।জাফরুল্লাহ সারাফাত যদি ধারাভাষ্যএ বলে-“মেসির মধ্যে আমিনুলের ছায়া খুঁজে পাই”।

কথাটা ব্যাপক হাস্যরসিকতার উদ্ভব করবে। কারণ আমিনুলের চেয়ে মেসি অনেক উচুমানের খেলোয়াড় কাজেই মানদণ্ডটা আমিনুলের খেলা না, মেসির খেলাই হওয়া উচিত। তাই নয় কি??? এটা কি মেসির অপমান নয়? ঠিক তেমনি সত্যের মাপকাঠি ইসলাম এবং পক্ষান্তরে বিজ্ঞান অপূর্ণাঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও “ইসলাম একটি বিজ্ঞানসম্মত ধর্ম” বলাটা মেসির মধ্যে আমিনুলের ছায়া খুঁজে পাওয়ারই নামান্তর।

বিষয়: বিবিধ

১৬৫৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

213939
২৭ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:২৮
আহ জীবন লিখেছেন : আমরা বলব-“আল্লাহ বলেছেন কাজেই এটা শতভাগ সঠিক, এর পেছনে যুক্তি খুঁজে পাই আর না ই পাই”।
213960
২৭ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০১
হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে লিখেছেন : যেহেতু ইসলাম পূর্ণ আর বিজ্ঞান অপূর্ণ, তাই ইসলামের ক্ষেত্রে “বিজ্ঞানসম্মত” কথাটা অর্থহীন। “বিজ্ঞানসম্মত” মানে বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত। এখন কথা হল যেটা নিজেই অপূর্ণ সেটা একটা পূর্ণ বিষয়কে প্রমাণ করার কে??? সুতরাং ইসলাম বিজ্ঞান সম্মত নয় বরং বিজ্ঞানই ইসলাম সম্মত।

সহমত
213980
২৭ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩১
শেখের পোলা লিখেছেন : অত্যন্ত বাস্তব সত্য কথাটা যুক্তি দিয়ে বোঝানোর জন্য ধন্যবাদ৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File