কম্পিউটার হঠাৎ রিস্টার্টের কারণ সমূহ!

লিখেছেন লিখেছেন আমরা করবো জয় ১৯ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:৫৫:৪৬ দুপুর

কম্পিউটার ব্যবহার করে নানান কারণে। আমার মতে যারা কম্পিউটার ব্যবহার করেন তাদের মধ্যে শতকরা ৯৯.৯ মানুষ তাদের কম্পিউটারকে ভালোবাসেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে কম্পিউটার মাঝে মাঝে এমন সব আচার-আচরণ করে যেগুলো সত্যই আমাদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাড়ায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কারণ হচ্ছে কম্পিউটার হঠাৎ রির্স্টাট নেওয়া। মুলত এটি বিভিন্ন কারনে হয়ে থাকে। ইনসাআল্লাহ আজকের এই পোষ্টে কম্পিউটার রিস্টার্ট এর কারণ সম্পর্কে আপনাদের কিছুটা জানানোর চেষ্টা করবো।

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম। কম্পিউটার ব্যবহার করতে কে না ভালোবাসে। ছোট

• কম্পিউটারের অভ্যন্তরীণ অতিরিক্ত তাপমাত্রা কম্পিউটার রিস্টার্টের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। এতে প্রসেসর তাপমাত্রা অপসারণ করতে পারে না। প্রসেসর একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রার পর তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বন্ধ করে দেয়। ফলে কম্পিউটার রিস্টার্ট হয়। তাই কম্পিউটারের আশপাশে পর্যাপ্ত খোলা জায়গা রাখা ভালো, যাতে গরম হাওয়া বের হয়ে যেতে পারে।

• RAM এর কারণেও কম্পিউটার রিস্টার্ট করতে পারে। ধরুন যে RAM কম্পিউটারে লাগানো আছে তা আপনার মাদারবোর্ড সাপোর্ট করে না, স্পিড ম্যাচ হচ্ছে না কিংবা RAM এর চিপ নষ্ট থাকতে পারে। এসব কারণে কম্পিউটার রিস্টার্ট হতে পারে।

• হার্ডডিস্কে ব্যাড সেক্টর পড়লে এবং সেখান থেকে ডাটা রিড করার চেষ্টা করলে কম্পিউটার রিস্টার্ট কিংবা হ্যাং হতে পারে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য স্ক্যানডিস্ক দিয়ে স্ক্যান করে ব্যাড সেক্টর ফিক্স করা যায়। হার্ডডিস্ক অতিরিক্ত গরম হয়ে গেলেও কম্পিউটার রিস্টার্ট হতে পারে। অনেক সময় হার্ডডিস্কে এরর থাকে। এটিও রিস্টার্টের একটা কারণ।

• ইউএসবি ডিভাইস কম্পিউটারে যুক্ত করলে কম্পিউটার রিস্টার্ট হয়। তবে বেশিরভাগ সময় এই কাজ করার আগে অপারেটিং সিস্টেম অনুমতি চাইবে। তবে ওই ডিভাইসটি সমস্যাযুক্ত হলে কম্পিউটার বারবার রিস্টার্ট হবে।

• বিভিন্ন কারণে অপারেটিং সিস্টেম ক্র্যাশ করে ফলে অপারেটিং সিস্টেম চালু হতে পারে না এবং নতুন করে চালু হওয়ার চেষ্টা করে। তাছাড়া কোনো জটিল সমস্যা হলেও অপারেটিং সিস্টেম রিস্টার্ট হতে পারে।

• বিভিন্ন হার্ডওয়্যার সঠিকভাবে কানেক্টেড না থাকলে বা লুস কানেক্টেড থাকলে কিংবা সমস্যাযুক্ত থাকলেও কম্পিউটার রিস্টার্ট হতে পারে।

• বিভিন্ন ভাইরাসের জন্যও কম্পিউটার রিস্টার্ট হতে পারে। তাই ভালো একটা এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা জরুরি।

• প্রয়োজনে কোন দক্ষ কম্পিউটার এক্সপার্ট এর কাছে আপনার কম্পিউটারটি নিয়ে যান।

কম্পিউটার পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট এর টুকটাক

ভাই, কি কম্পিউটার কিনলেন ? কনফিগারেশন কি ? প্রশ্ন টি করলেই আমরা আমাদের কম্পিউটার এর সকল হার্ডওয়্যার এর কথা বলি, কখনও বা আবার ডিটেলসও বলে দেই, কিন্তু একটা জিনিষের কথা আমরা কখনই বলি না। আমি নিজেও বলি না। আমরা সব সময় খুবই অবজ্ঞা করে থাকি। এমন কি হেভি পাওয়ার ফুল কম্পিউটার নিলাম,কিন্তু যে জিনিষ টির কথা বলছি, তার সম্পর্কে কোন কিছু কিন্তু চিন্তাই করছি না।

কি ধরতে পারছেন আমি কিসের কথা বলছি? ঠিক ধরেছেন, আমি কম্পিউটার এর সবচাইতে সবচাইতে এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন হার্ডওয়্যার, পাওয়ার সাপ্লাই এর কথা বলছি। আজকে আমার এ পোস্ট টিতে কম্পিউটার এর পাওয়ার সাপ্লাই নিয়ে শেয়ার করব।

পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট বা পিএসইউ(PSU) এর বেসিক কাজ হচ্ছে আমাদের বিদ্যুৎ লাইনের থেকে ইলেক্ট্রিসিটি সংগ্রহ করে তাকে কনভার্ট করা। আমাদের বিদ্যুৎ এর লাইনে থাকে ২২০ থেকে ২৪০ ভোল্ট (নর্থ আমেরিকা, সাউথ আমেরিকার কিছু অংশে, জাপান এবং তাইওয়ান এ কিন্তু ১১০ থেকে ১১৭ ভোল্ট ) এবং তা AC মুডে থাকে। আমাদের কম্পিউটার এর পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট টি এই বিদ্যুৎ কে ১২, ৬ এবং ৩.৩ ভোল্ট- DC, তে কনভার্ট করে।

রেটিংঃ

যদিও আমরা সবাই জানি ওয়াট (watt) কি, তার পরেও আসুন অনেক দিন আগের জানা টাকে একটু ঝালাই করে নেই;

ওয়াট = ভোল্টেজ x এম্পেয়ার (W= V x A)

সাধারনত সব ধরনের কম্পিউটার এর কাজের জন্য সব ধরনের পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট এর দরকার হয় না। যেমন;

• যে সমস্ত কম্পিউটার এ শুধু মাত্র টুক টাক কাজ করা হয়, (ইন্টারনেট সার্ফিং, মুভি দেখা, খুবি ছোট গেম খেলা, মাইক্রোসফট অফিস এ কাজ করা) তাদের জন্য ৩০০ ওয়াট এর একটি পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট যথেষ্ট।

• মাঝারি ধরনের একটি গেমিং পিসির জন্য পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট হওয়া উচিত, ৫০০ থেকে ৮০০ ওয়াট এর।

• হাই এন্ড পিসি র জন্য দরকার ৮০০ থেকে ১৪০০ ওয়াট এর পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট।

• খুবি শক্তিশালি সার্ভার (বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গেমিং সার্ভার) এর জন্য ২ কিলো ওয়াট এর পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট লাগতে পারে।

ছোট একটি অংকঃ

ধরুন আপনি একটি পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট কিনতে বাজারে গেলেন। দোকানদার আপনার সামনে দুটি পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট রেখে বললেন, আপনি যেটা নিতে চান। একই দাম দুইটার।

আপনি পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট এর গায়ে দেখলেন, দুটোর দুই ধরনের রেটিং করা, একটি তে লিখা আছে। “peak rating of 550 watts at 25°C, with 25 amps (300 W) on the 12 volt line”

অপরটিতে লিখা আছে, “ continuous rating of 450 watts at 40°C, with 33 amps (400 W) on the 12 volt line”

আপনি বলুন কোনটি নেবেন ? আমি কিন্তু দ্বিতীয় টি নিবো, কেন জানেন? দেখুন ২য় টি আপনাকে সবসময় ৪৫০ ওয়াট সাপ্লাই করতে পারে, যেখানে প্রথম টি আপনাকে সর্বোচ্চ (সব সময় নয় কিন্তু) ৫৫০ ওয়াট দিতে পারে।

কার জন্য কত ওয়াট দরকারঃ

• নরমাল এজিপি কার্ডঃ ২০ থেকে ৩০ ওয়াট।

• পিসিআই কার্ডঃ ৫ ওয়াট

• SCSI পিসিআই কার্ডঃ ২০ থেকে ২৫ ওয়াট।

• ফ্লপি ডিস্ক ড্রাইভঃ ৫ ওয়াট

• নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ডঃ ৪ ওয়াট

• সিডি রম ড্রাইভঃ ১০ থেকে ২৫ ওয়াট।

• র্যা মঃ ১০ ওয়াট (প্রতি ১২৮ মেগাবাইটের জন্য)

• ৫৪০০ আর পি এম হার্ড ড্রাইভঃ ৫ থেকে ১১ ওয়াট

• ৭২০০ আর পি এম হার্ড ড্রাইভঃ ৫ থেকে ১৫ ওয়াট

• মাদারবোর্ড (সিপিউ, র্যা ম ছাড়া)ঃ ২০ থেকে ৩০ ওয়াট।

গঠনঃ

বেশির ভাগ পি এস ইউ স্কোয়ার শেপ, মেটাল বক্সের মধ্যে থাকে। সাধারনত দৈর্ঘ ৮৬ মিলিমিটার; প্রস্থ ১৫০ মিলিমিটার; এবং উচ্চতা ১৪০ মিলিমিটার;

কানেক্টরঃ

কমবেশি সাত ধরনের কানেক্টর দেখাযায় এখনকার দিনের এ টি এক্স পাওয়ার সাপ্লাই এ। এগুলো হচ্ছে,

২৪ পিন এ টি এক্স (P1)ঃ মাদারবোর্ড এ পাওয়ার সাপ্লাই করে থাকে। সবচাইতে বড় এই কানেক্টরটি তে মোট ২৪ টি পিন থাকে, আসুন দেখে নেই এই ২৪ টি পিনের কোনটি কি কাজ করে,

টিপসঃ ছোট্ট একটা টিপস বলি, আপনার পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট কাজ করছে কি না, জানার জন্য, ২৪ পিন এ টি এক্স কানেক্টর টির সবুজ এবং কালো রঙ এর পিন দুটি কে সর্ট করে দিন। এবার পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট টি চালু করে দেখুন, ফ্যান ঘুরছে ? ঘুরলে আপনার পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট টি কাজ করছে। (বিঃ দ্রঃ এটি একটি খুবি প্রাথমিক পরীক্ষা।)

৪ পিন মোলেক্স (4 pin molex): কম্পিউটার এর বিভিন্ন পেরিফেরাল কে চালাবার জন্য এই ৪ পিন এর কানেক্টর টি ব্যবহার করা হয়। যেমন, হার্ড ড্রাইভ, সিডি / ডিভিডি রম ইত্যাদি। লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে, হলুদ রঙ এর তারে +১২ ভোল্ট, লালে +৫ ভোল্ট, এবং কালো হচ্ছে গ্রাউন্ড।

৪ পিন এফ ডি ডি কানেক্টরঃ এই কানেক্টর টী শুধু মাত্র ফ্লপি ডিস্ক ড্রাইভ এ পাওয়ার সাপ্লাই দেয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।একে অনেক সময়, মিনি মোলেক্স বলেও ডাকা হয়। এখানেও লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে, হলুদ রঙ এর তারে +১২ ভোল্ট, লালে +৫ ভোল্ট, এবং কালো হচ্ছে গ্রাউন্ড।

৪ পিন, পি৪_১২ভোল্টঃ এই পিন্ টি এ টি এক্স পি এস ইউ এর নতুন সংযোজন।একে পি৪ পাওয়ার কানেক্টর বলেও ডাকা হয়। পেন্টিয়াম ৪ প্রসেসর থেকে এর যাত্রা শুরু। পেন্টিয়াম ৪ প্রসেসর এর জন্য আলাদা ভাবে ১২ ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রদান করাই এর কাজ।

সিরিয়াল এ টি এ পাওয়ার কানেক্টরসঃ আমাদের কম্পিউটার এর সাটা হার্ড ড্রাইভ এবং সাতা সিডি/ ডিভিডি রমের জন্য একটি স্পেশাল ধরনের ১৫ পিনের পাওয়ার কানেক্টর। এই ১৫ পিনের মধ্যে, ৩.৩ , ৫ এবং ১২ ভোল্ট সাপ্লাই হয়।

৬ পিন পিসিআই এক্সপ্রেস পাওয়ার কানেক্টরঃ আধুনিক যুগের গ্রাফিক্স কার্ড গুলো যে অনেক বেশি পরিমান বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, তাতো আমরা আগেই জেনে গেছি।আধুনিক বেশ কিছু গ্রাফিক্স কার্ড এর জন্য এই ৬ পিন পিসিআই এক্সপ্রেস পাওয়ার কানেক্টর, যা গ্রাফিক্স কার্ড কে আলাদা ৭৫ ওয়াট পর্যন্ত পাওয়ার দিতে সক্ষম।

৬ পিন আউক্স পাওয়ার কানেক্টরঃ এই পাওয়ার কানেক্টর টির, সাধারন কম্পিউটার এ তেমন একটা কাজে না লাগলেও বিভিন্ন ধরনের এক্সপেনশন কার্ড এ এই ধরনের পাওয়ার কানেক্টর ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

কিছু তথ্যঃ

• আপনি জানেন কি, একটি পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট এর গড় আয়ু কত ? খুব বেশি না, মাত্র ১ লক্ষ্য ঘন্টা বা ১১ বছর (প্রায়)। তবে এটা নির্ভর করে, আপনি আপনার কম্পিউটার এর পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট এর কিভাবে যত্ন নিচ্ছেন। পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট টি কি বেশি গরম করে ফেলছেন ? ঠিক মতন এর গরম বাতাস যেন বের হয়ে যায়, সে দিকে লক্ষ্য রাখছেন ? এর ফ্যানে যেন ধুলা বালি না জমে তা দেখছেন তো ? ইত্যাদি।

• যে কম্পিউটার সিস্টেম এ ঠান্ডা বাতাস চলাচলের সব রকমের ব্যবস্থা আছে, সেই কম্পিউটার এর পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট টি ততো ভালো থাকে।

• আধুনিক পাওয়ার সাপ্লাই গুলো এমন ভাবে তৈরী যে, আপনার কম্পিউটার কে সাট ডাউন করে রাখলেও আপনার কী বোর্ড এর কী বোর্ড পাওয়ার অন (Key Board Power ON – KBPO), Wake- On- LAN, Wake-On- Ring , পদ্ধতিতে চালু করে ফেলতে পারবেন।

আজ তাহলে এ পর্যন্তই থাক। আপনাদের কাছে কেমন লাগল এই পোস্টটি আশা করি জানাতে ভুলবেন না।

**তথ্য এবং ছবি গুলো ইন্টারনেট থেকে নেয়া হয়েছে।

বিষয়: বিবিধ

১৩৭২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File