কাতারের যোগাযোগ ও ট্রাফিক সিস্টেম: প্রযুক্তির বিস্ময়
লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর আ ফ ম খালিদ হোসেন ২১ মে, ২০১৫, ০৪:৪৭:৪৭ বিকাল
কাতারে ১০দিন অবস্থানকালীন একটি বিষয় আমি বিস্ময়ভরে লক্ষ্য করেছি, তাহলো যোগাযোগ ও ট্রাফিক সিস্টেম। আইনের কঠোর প্রয়োগ যে সুফল বয়ে আনে কাতারের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা তার দৃষ্টান্ত। পুরো ব্যবস্থা সম্পূর্ণ আধুনিক, স্বয়ংক্রিয় ও ডিজিটাল।প্রতিটি গাড়ীর গতিবিধি প্রযুক্তির মাধ্যমে মনিটর করা হয়। শহর থেকে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত সব রোড পরিকল্পিতভাবে তৈরী। ৫টি হা্ইওয়ে রাজধানী দোহার সাথে সংযুক্ত।দোহার সাথে সংযুক্ত ৪লাইন বিশিষ্ট ৩০০কিলোমিটার সড়ক রয়েছে।১.৪৮বিলিয়ন রিয়াল ব্যয় করে রেলপথ নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। পরবর্তী পর্যায়ে এ রেলপথকে উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থা (GCC)এর অন্তর্ভূক্ত বাহরাইন, কুয়েত, সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের ১.৯৪০ কি.মি. সড়কের সাথে যুক্ত করা হবে।
উপসাগরে দোহা অত্যন্ত জনবহুল এলাকা। প্রায় প্রতিটি পরিবারে প্রাইভেট গাড়ী রয়েছে। আগে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ প্রাণ হারাত। ২০১০ সালে ২২৬ যাত্রী প্রাণ হারায়। হাইটেক ক্যামেরা ও রাডার Detector এর মাধ্যমে পুরো দেশের ট্রাফিক সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ২০০৯ সালে ট্রাফিক লঙ্ঘন আইন চালু হয়। নতুন আইনে ট্রাফিক বিধি ভঙ্গকারীদের জরিমানা, জেল ও লাইসেন্স বাতিলের ব্যবস্থা রাখা হয়। লালবাতি জ্বলে উঠলে সড়কের লাল চিহিৃত রেখা অতিক্রম করলে ১০হাজার থেকে ৫০হাজার রিয়াল জরিমানা অথবা ৩বছর জেল।কিছু কিছু ক্ষেত্রে উভয় দণ্ড প্রদান করা হয়। গাড়ী চালানোর সময় ড্রাইভার মোবাইল ব্যবহার করলে ৩হাজার থেকে ১০হাজার রিয়াল জরিমানা। এ ছাড়া অনুমোদিত লাইসেন্স ছাড়া গাড়ী চালালে, উল্টোপথে গাড়ী চালালে, অকারণে হর্ণ বাজালে, নির্ধারিত গতির বেশী গাড়ী চালালে, ১০বছরের কম বয়সী শিশুকে সামনের সীটে বসালে, সরকারী অফিসার, পুলিশ, সিভিল ডিফেন্স, ও এ্যম্বুলেন্সকে সাইড না দিলে, দু’টো গাড়ীর মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ ফাঁক না রাখলে, সীটবেল্ট না বাঁধলে ১০ থেকে ৫০হাজার রিয়াল জরিমানা গুণতে হয় অথবা ৩মাস জেল ভোগ করতে হয়।
কাতারে নিবন্ধিত ৪চাকার গাড়ীর সংখ্যা প্রায় ১০লাখ। ২০১২সালে ছিল ৮লাখ ৭৬হাজার ০৩৯টি এবং এবং প্রতিবছর বৃদ্ধি পায় ১৩হাজার ৭৭৩টি। মহিলাদের গাড়ী চালাতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। কোন প্রাইভেট গাড়ীর আগে পেছনে প্রতিরক্ষাসূচক লৌহদণ্ড নেই।অভ্যন্তরীণ রাস্তার ধারে অথবা বাড়ীর সামনে গাড়ী পার্কিং করার ব্যবস্থা আছে।হাজার হাজার গাড়ী রাস্তার ধারে পড়ে আছে, এমনকি অনেক প্রবাসী এভাবে বাসার সামনে অথবা রাস্তার নিরাপদ রাস্তার ধারে গাড়ী ফেলে ৩/৪মাসের জন্য দেশে চলে আসেন, চুরির কোন ভয় নেই, আশ্চর্য !
কাতারে রিক্সা, টমটম, নসিমন, করিমন, ভটভটি, সিএনজি, ঠেলাগাড়ী, ভ্যানগাড়ী নেই।সাইকেল ও মোটর বাইকের সংখ্যাও কম।এগুলো ছোটরোডে অথবা বাসার গলিতে চলাচল করতে দেখা যায়। আইনের কঠোর প্রয়োগের ফলে দিনেতো বটেই গভীর রাতেও চালকগণ ট্রাফিক আইন মেনে চলতে অভ্যস্ত। হায় আমাদের দেশটা যদি এ রকম হত!
বিষয়: বিবিধ
২৮১৮ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাইজানন, মরহুম ডাঃ ইসরার আহমাদ সাহেবের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি সম্পর্কে আপনার একটি লেখা,তাঁর বয়ানুল কোরআনের বাংলা অনুবাদ, যা আমি গ্রন্থাকারে করেছি তাতে সংযুক্ত করেছি৷ ছাপার আকারে এখনও হয়নি৷ আশাকরি আপনার আপত্তি নাই৷ আপত্তি থাকলে জানাবেন৷ ধন্যবাদ৷
জাযাকাল্লাহ খায়ের
করলে কিছুটা কমবে। এট লিষ্ট ১২ থেকে ১৬ লেইনে উন্নতি করতে হবে। যেহেতু বাংলাদেশ
ঘন বসতি দেশ। এছাড়া কোন জেনারেল সলুশন নেই। AASHTO নিয়ম অনুযায়ী বলছি।
আসলে নিয়ম মেনে চলার বিষয়টা আদায় করা যায় যেখানের নিয়মের বিপরীত চললে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা থাকে! আমাদের দেশে নিয়ম আজ কারাগারে শৃংখলিত, তবে ট্রাফিক পুলিশদের দেখবেন রাসতায় গাড়ি থামিয়ে পরিবহন থেকে বিনা কারনে চাঁদা উঠাবে! এর বিপরীতে আইন থাকলেও সেটাও আজ কারাগারে!
চমৎকার পোস্টটির জন্য শুকরিয়া!
সম্ভবত আপনার সফর নামা বিডি অনলাইনে আজকেই পড়লাম! ভালো লেগেছে!
মন্তব্য করতে লগইন করুন