নবপ্রজন্মের মাঝে নাস্তিক্যবাদের বিস্তৃতি: এক অশনি সঙ্কেত!

লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর আ ফ ম খালিদ হোসেন ১৬ মে, ২০১৩, ১১:১৯:৫৮ রাত



বিগত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে নাস্তিক্যবাদ, ধর্মহীনতা ও ধর্মের প্রতি কটাক্ষ, উপহাস ও মহানবী (সা.)-এর প্রতি বিদ্রুপ এক শ্রেণীর মানুষের পেশা ও নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্মাবমাননার এ কালব্যাধি নবপ্রজন্মের মাঝে বিস্তৃতি লাভ করছে ক্রমশ। অন্য কোন ধর্ম বা ধর্মীয় গুরু নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। ইসলাম, পবিত্র কুরআন, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.), মাদরাসা শিক্ষা, দাড়ি, টুপি, বোরকা তাদের প্রধান টার্গেট। এ কাজের জন্য তারা ব্লগ, ফেসবুক ও ওয়েবসাইট, নাটক ও সিনেমাকে বেছে নেয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় আন্তর্জাতিক ইহুদীবাদ (Zionism) তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এক শ্রেণীর তরুণদের বেছে নিয়েছে। মাদক ব্যবসায়ী নকুলা বাসিলকে ৫০ লাখ আমেরিকান ডলার দিয়ে ইহুদীরা Innocence of Muslim নামক সিনেমা তৈরী করে ইউটিউব-এ ছেড়ে দেয়। মহানবী (সা.)-কে অপমান করার যে উদ্যোগ ইহুদী ব্যবসায়ীরা নিয়েছিল, প্রচন্ড প্রতিবাদের মুখে তা ভেস্তে যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপে বাংলাদেশে ইউটিউব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এবার ইহুদীচক্র নতুন কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নেমেছে, হাত করেছে নবপ্রজন্মের প্রতিনিধিদের। ইহুদীদের এ চক্রান্ত নতুন নয়। এটা পুরনো খেলা, কেবল কৌশল পাল্টায়। এক শ্রেণীর চিহ্নিত ইলেকট্্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত কতিপয় সাংবাদিক ও সুশীল সমাজ অর্থের বিনিময়ে এ কার্যক্রমকে সহায়তা করে। ইসলাম নিন্দাকে তার নাম দিয়েছে ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা (Freedom of Expression) । এ পরিস্থিতির জন্য আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাও অনেকাংশে দায়ী। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মবিবর্জিত শিক্ষা পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের ধর্ম সম্পর্কে উদাসীন করে তুলছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে ধর্মদ্রোহী বানাচ্ছে। কোন ব্যক্তি বিশেষ নাস্তিক হতে পারেন কিন্ত তিনি আস্তিকদের ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করতে পারেন না। এটা সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের নামান্তর।

আশ্চর্যজনকভাবে লক্ষ্যণীয় যে, আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারত বা মিয়ানমারে ধর্মাবমাননার এ বেদনাদায়ক প্রবণতা নেই বললে চলে। ভারতে সনাতন ধর্ম এবং মিয়ানমারে বৌদ্ধ ধর্ম আহত হয় এমন কর্মকান্ড থেকে নবীন প্রবীণ সবাই সযত্নে দূরে থাকেন। বরং নাটক ও সিনেমার কোন না কোন পর্যায়ে দেব দেবীর পূজা ও মন্দির প্রদর্শন করে দর্শকদের ধর্মীয় আকর্ষণ সৃষ্টির প্রয়াস চালানো হয়।

কিভাবে বা কোন পন্থায় আমাদের দেশে ধর্মাবমাননার ভয়ংকর খেলা রোধ করা যায় তা নিয়ে সচেতন ও দেশপ্রেমিক মানুষকে ভাবতে হবে, বের করতে হবে কার্যকর পন্থা। রাষ্ট্রযন্ত্র নাস্তিক্যবাদী ব্লগার ও নেটওয়ার্ক এক্টিভিস্টদের পাশে দাঁড়ালে সমাজে ভয়ংকর বিভাজন তৈরী হবে। কোটি কোটি ধর্মপরায়ণ মানুষ বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠতে পারে এবং ছড়িয়ে পড়তে পারে প্রতিশোধের দাবানল। দেশের ১৫ কোটি মানুষের হৃদয়ে জীবন্ত রয়েছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অকৃত্রিম ভালবাসা ও অবিচ্ছিন্ন আনুগত্য। সরকারী, বেসরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী, মন্ত্রী, সচিব, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, দেশপ্রেমিক বর্ডার গার্ড, কোস্ট গার্ড, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী, পুলিশ, র্যা ব সদস্যদের মধ্যে লাখ লাখ নবীপ্রেমিক রয়েছেন। দেশে বিদ্যমান ধর্মাবমাননার আইন অপর্যাপ্ত ও প্রয়োগে শৈথিল্যের কারণে ধর্মের প্রতি বিদ্রুপ ও কটাক্ষ ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। এ প্র্যাক্টিস বেশীদিন চলতে দেয়া যায় না। আইন কেউ হাতে নিয়ে বিদ্রুপকারীদের বিচার করুক তা আমাদের কাম্য নয়। আমরা চাই রাষ্ট্রীয় আইনে উপযুক্ত আদালতের মাধ্যমে ধর্মাবমাননাকারীদের বিচার হোক। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক। যে কোন মূল্যে মানুষে মানুষে সৌহার্দ্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের বজায় রাখতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের কালোহাত গুড়িয়ে দিতে সব ধর্মের সব স্তরের মানুষকে ইস্পাত কঠিন শপথ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১৯৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File