শীতকালীন ফল জলপাইয়ের গুণ

লিখেছেন লিখেছেন এহতেরামুল হক ২১ নভেম্বর, ২০১৩, ০৭:৫১:২৮ সন্ধ্যা



যুদ্ধে শান্তির প্রতীক হলো জলপাইয়ের পাতা এবং মানুষের শরীরের শান্তির দূত হলো জলপাইয়ের তেল বা অলিভ ওয়েল। আরবিতে জয়তুন নামে ডাকা হয়। ভেষজ গুণে ভরা এই ফলটি লিকুইড গোল্ড বা তরল সোনা নামেও পরিচিত। গ্রীক সভ্যতার প্রারম্ভিক কাল থেকে এই তেল ব্যাবহার হয়ে আসছে রন্ধন কর্মে ও চিকিৎসা শাস্ত্রে। আকর্ষণীয় এবং মোহনীয় সব গুণ এই জলপাইয়ের তেলের মধ্য রয়েছে।বিজ্ঞানীরা বলেন, জলপাই তেলে এমন উপাদান রয়েছে, যেগুলো আমাদের শরীরকে সুস্থ এবং সুন্দর রাখে।জলপাই তেল পেটের জন্য খুব ভালো। এটা শরীরে এসিড কমায়, লিভার পরিষ্কার করে। যাদের কোষ্টকাঠিণ্য রয়েছে, তারা দিনে এক চা চামচ জলপাই তেল খেলে উপকার পাবেন। জলপাই তেল গায়ে মাখলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বক কুচকানো প্রতিরোধ হয়। প্রতিদিন দুই চা চামচ জলপাই তেল ১ সপ্তাহ ধরে খেলে তা দেহের ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরল কমায় এবং উপকারী এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়ায়।

খাবারে জলপাই তেল ব্যবহার করলে কোলন বা মলাশয় ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়। এটা পেইন কিলার হিসাবেও কাজ করে। গোসলের পানিতে চার ভাগের এক ভাগ চা চামচ জলপাই তেল ঢেলে গোসল করলে রিলাক্স পাওয়া যায়। মেয়েদের রূপ বাড়াতে এটা অনেকটা কার্যকর।

ইসলাম ধর্মেও জলপাইয়ের তেল খাওয়া এবং ব্যবহারের গুরত্ব দেয়া হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, “কুলু আয যাইতু ওয়াদ দাহিনু বিহি, ফা ইন্নাহু মিন শাজারাতিন মুবারাকাতিন” অর্থ- তোমরা এই তেলটি খাও, তা শরীরে মাখাও।”জলপাই শীতকালীন ফল। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এই ফলটি পাওয়া যায়। আমাদের দেশে সবুজ জলপাই সহজলভ্য। পৃথিবীর অনেক দেশে কালো জলপাই জন্মে। জলপাইয়ের পাতা ও ফল দুটোই ভীষণ উপকারী। জলপাইয়ের রস থেকে যে তেল তৈরি হয় তার রয়েছে যথেষ্ট পুষ্টিগুণ।প্রচণ্ড পরিমাণে টক এই ফলে রয়েছে উচ্চমানের ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই। এই ভিটামিনগুলো দেহের রোগজীবাণু ধ্বংস করে, উচ্চ রক্তচাপ কমায়, রক্তে চর্বি জমে যাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে হূৎপিণ্ডের রক্তপ্রবাহ ভালো রাখে। ফলে হূৎপিণ্ড থেকে অধিক পরিশোধিত রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছায়, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে। ত্বকের কাটাছেঁড়া দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে। উচ্চরক্তচাপ ও রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে এর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

সেদ্ধ জলপাইয়ের চেয়ে কাঁচা জলপাইয়ের পুষ্টিমূল্য অধিক। এই ফলের আয়রন রক্তের আরবিসির কর্মশক্তি বৃদ্ধি করে।জলপাইয়ের খোসায় রয়েছে আঁশজাতীয় উপাদান। এই আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়, কোলনের পাকস্থলীর ক্যানসার দূর করতে রাখে অগ্রণী ভূমিকা।জলপাইয়ের পাতারও রয়েছে যথেষ্ট ঔষধি গুণ। এই পাতা ছেঁচে কাটা, ক্ষত হওয়া স্থানে লাগালে কাটা দ্রুত শুকায়। বাতের ব্যথা, ভাইরাসজনিত জ্বর, ক্রমাগত মুটিয়ে যাওয়া, জন্ডিস, কাশি, সর্দিজ্বরে জলপাই পাতার গুঁড়া জরুরি পথ্য হিসেবে কাজ করে।মাথার উকুন তাড়াতে, ত্বকের ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাকজনিত সমস্যা দূর করার জন্য এই পাতার গুঁড়া ব্যবহূত হয়। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে জলপাই পাতার গুঁড়া ও জলপাইয়ের তেল ব্যবহারে হাড় ও মাংসপেশির ব্যথা কমে।জলপাইয়ের তেল কুসুম গরম করে চুলের গোড়াতে ম্যাসাজ করলে চুলের পুষ্টি ও বৃদ্ধি ভালো হয়, চুলের ঝরে যাওয়া তুলনামূলকভাবে কমে।সর্দি-কাশি হলে শরীর একেবারে রোগা-পাতলা হয়ে যায়। এই রোগে রান্নায় জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। কারণ এই তেলের ফ্যাট খুব সহজে হজম করা যায়। এই তেল কডলিভার অয়েলের চেয়েও ভালো কাজ করে। তা ছাড়া কডলিভার অয়েলের বদলে জলপাইয়ের তেলও কাঁচা খেতে পারলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। কাঁচা খেতে অসুবিধা হলে কমলালেবুর রস বা অন্য যেকোনো ফলের রসের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

বিষয়: বিবিধ

২৪৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File