আল্লাহ যে গুনাহ ক্ষমা করেন না।

লিখেছেন লিখেছেন আমি ডানপন্থী ১৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০৪:৪৪:৫৬ বিকাল

বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. । যিনি ছিলেন ক্ষীণ দেহী অথচ জ্ঞানে উচ্চ মর্যাদার অধিকারি। তিনি ইরশাদ করেন, একদিন রাসূল সা. বললেন, আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ সম্পর্কে অবগত করব? যে গুনাহ আল্লাহ কিয়ামতের দিন ক্ষমা করবেন না। সাহাবীগণ বললেন,অবশ্যই বলুন। রাসূল সা.বললেন,আল্লাহর সাথে শরীক করা।

শরীক এমন গুনাহ যার কোনো ক্ষমা নেই। ইরশাদ হয়েছে- “নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না।” তিনি এ ছাড়া অন্যান্য পাপ ক্ষমা করেন, যার জন্য বান্দা ক্ষমা চায়।

আল্লাহ শিরককারী ব্যতীত যাকে খুশি ক্ষমা করবেন। কেউ বাধা দিতে পারবে না। হাদিসে এসেছে,হে বনি আদম! তুমি আমার কাছে যা চাও,যা কামনা কর, আমি কবুল করি। হে আদমসন্তান! যদি তুমি আসমান পরিমাণও গুনাহ কর,অতঃপর আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর,আমি ক্ষমা করে দেব। আমি বাদশাহর বাদশাহ। আমাকে বাধা দেবার কে আছে, যাকে আমার পরওয়া করতে হবে। তবে শিরকের গুনাহ ব্যতীত।

আদম আ. থেকে শুরু করে শেষ নবী মুহাম্মদ সা.পর্যন্ত সকল নবীই ’ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-র দাওয়াত দিয়েছেন। প্রত্যেক নবী স্বীয় উম্মতকে একথায়ই বুঝিয়েছেন,আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। নবীদেরকে হত্যা করা হয়েছে। আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে। পাগল বলে গালি দেওয়া হয়েছে। সবই তারা সহ্য করেছেন। আজীবন এ বিশ্বাসের উপর অবিচল রয়েছেন। একচুল পরিমাণও এ-বিশ্বাস থেকে সরে আসেন নি। এখানেই কুফরের সাথে বিরোধ। আর কোনো বিরোধ নেই। রাসূল সা. এর আমানতদারী ও সত্যবাদীতার ব্যাপারে মক্কার কাফেরদের পূর্ণ আস্থা ছিল, বিশ্বাস ছিল। তবে যখন তিনি মূর্তিপূজা পরিহার করতে বললেন, বিরোধিতা শুরু হলো। এটাই নিয়ম। সত্যের বিপক্ষে কুফর সর্বদা ঐক্যবদ্ধ হয়। সত্যকে প্রতিহত করার লড়াইয়ে নামে।

ওহি নাযিল হওয়ার পর খাদিজা রা. রাসূল সা. কে নিয়ে ওয়ারাকা ইবনে নাওফেলের কাছে যান। ওয়ারাকা ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেন আপনার কাওম আপনাকে বের করে দেবে। এটা প্রত্যেক নবীর ক্ষেত্রেই হয়েছিল। সত্যের বিরোধিতা সব যুগেই ছিল। আর কাফেরদের সাথে মুসলমানের বিরোধের কারণ হলো, তারা শিরক করে। মুসলমান শিরক করে না। মুসলমান যদি তাওহীদের বিশ্বাস ত্যাগ করে আল্লাহর নাফরমানী করতে লাগে, তবে তাদের সাথে কোনো বিরোধ থাকবে না।

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর মধ্যে তিনটি কথা রয়েছে -

প্রথম কথা হলো, দিল থেকে বিশ্বাস করা যে আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে, “জেনে নাও, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই।” দ্বিতীয় কথা হলো, ইবাদত একত্ববাদের বহি:প্রকাশ। অতএব আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করা চলবে না। কাউকে সিজদা করা যাবে না। ইবাদত কেবল আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। এটাকে বলে তাসদিক বিল আরকান বা বাহ্যিক আচরণের মাধ্যমে সত্যায়ন। ইরশাদ হচ্ছে, “আমি নূহকে স্বীয় জাতির নিকট প্রেরণ করলাম সে বলল, হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোনো ইলাহ নেই “

অন্যান্য নবীদের ব্যাপারে একই রকম বর্ণনা এসেছে। তৃতীয় কথা হলো। কেবল আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা। রাসূল সা. ইরশাদ করেন, পৃথিবীতে আগত ও অনাগত সকল মানুষ যদি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে আর আল্লাহ সব পূরণ করে দেন, তবে আল্লাহর খোদায়িত্বে এর সামান্য প্রভাবও পড়বে না। খাজানার মালিক আল্লাহ। তাই দেয়ার মালিকও আল্লাহ। রাসূল সা. আমাদের শিখিয়েছেন, সাহায্য চাইলে আল্লাহর কাছে চাও। বলার থাকলে আল্লাহর কাছে বলো।

বদরের ময়দানের একটি ঘটনা। কুরাইশের লোকেরা শান-শওকাতের সাথে অগ্রসর হচ্ছে। রাসূল সা. মাত্র তিন শত তেরো জন নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। কুরাইশদের বড়-বড় সর্দারদের দেখে তিনি বললেন, আজ মক্কা তার সাহসী সন্তানদেরকে বের করে দিয়েছে। অতঃপর আল্লাহর দরবারে শিশুর মতো কাঁদতে শুরু করলেন। দুনিয়াতে যদি অন্য কারো নিকট চাওয়ার থাকত তবে রাসূল সা. তাদের নিকট চাইতেন।

হিন্দুরা রামের কাছে চায়। লক্ষ্মীর কাছে চায়। সীতার কাছে চায়। মুসলমান কেবল আল্লাহর কাছে চায়। তাদের বিশ্বাস, আল্লাহই কেবল দেয়ার ক্ষমতা ও অধিকার রাখেন। ছোট বড় সবকিছুই তিনি দেন। এটাই কালিমার মৌল ধারণা। ঈমানের দাবি শুধু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-র শব্দমালাই মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয় বরং এর আওতাধীন অনেক দাবি ও শর্ত রয়েছে। সে দাবি হচ্ছে মুসলমানের সবকিছু উৎসর্গিত হবে আল্লাহর জন্য। সে পরিপূর্ণভাবে ইসলামের আনুগত্য করবে।

হাদিসে এসেছে, রাসূল সা.এর নিকট আব্দুল কায়েস প্রতিনিধি দল আসলে তিনি তাদেরকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-র এর সঙ্গে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ-ও শিক্ষা দিলেন। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর অর্থ হলো যখন মুহাম্মদ সা. কে রাসূল হিসেবে বিশ্বাস করলাম তখন তার আনিত সবকিছু সন্দেহাতীতভাবে সত্য বলে জানলাম; কেননা রাসূল কখনো মিথ্যা ও ভুল বলতে পারেন না। আমাদের বুঝে আসুক বা না আসুক।

একদিন সকালে রাসূল সা. বললেন. কী আশ্চর্য এক ঘটনা ঘটে গেল কাল রাতে। আমি হাতিমে কাবায় শুয়ে আছি। দু’জন ফেরেশতা এসে আমার সিনা বির্দীর্ন করল। আমার কলব জমজম দ্বারা ধুয়ে তাতে ইমান ও হেকমত পূর্ণ করে দিল। অতঃপর বোরাকে চড়িয়ে বায়তুল মোকাদ্দাসে নিয়ে গেল। এরপর পর্যায়ক্রমে আরশে আজীমের সন্নিকটে পৌঁছলাম। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আমাকে দান করা হলো।

মক্কার সবাই এ-ঘটনা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিল। কিন্তু সিদ্দীকে আকবর রা. বললেন যদি সারা দুনিয়ার মানুষ একথা অস্বীকার করে তবুও আমি তা সত্য বলে মানব। কারণ তা নবী মুহাম্মদ সা. এর কথা। মুহাম্মদ সা. এর জবান থেকে কখনো মিথ্যা বের হতে পারে না। এমন অসংখ্য বিষয় রয়েছে যা আমাদের চিন্তা ও যুক্তির বাইরে অথচ তা ঈমানের অংশ। কায়মনোবাক্যে যা মেনে নেওয়া আবশ্যক।

দ্বিতীয় বড় গুনাহ পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। প্রথম গুনাহ ছিল স্রষ্টার নাফরমানী করা। আর দ্বিতীয় গুনাহ সৃষ্টির মধ্যে পিতা-মাতার নাফরমানী করা। এখনকার ছেলে- মেয়েদেরকে এমন ধরনের কিছু স্কুল-কলেজে পড়ানো হয় যেখানে বাবা-মার মর্যাদা শেখানো হয় না। যে সভ্যতার পেছনে মানুষ ছুটছে সে সভ্যতায় বাবা-মার কোনো মর্যাদা নেই। অথচ পবিত্র কুরআনের একাধিক স্থানে শিরকের সাথে-সাথে পিতা-মাতার ব্যাপারে বর্ণনা এসেছে। যেমন, সূরা বাকারায় এসেছে। “আমি যখন বনি ইসরাইলের নিকট থেকে এ অঙ্গীকার গ্রহণ করি তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার সদাচার কবে…।”

বিষয়: বিবিধ

২২০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File