হেফাজত তরিকায় পরাশক্তি, সেক্যুলার ও ইসলাম (প্রথম কিস্তি)

লিখেছেন লিখেছেন নয়া অভিযাত্রী ১৯ মে, ২০১৩, ১০:২৪:২০ রাত

৬ মে মধ্যরাতে মতিঝিলে আলেম-ওলামাদের হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী রাজনীতির কলঙ্কজনক ইতিহাসে যোগ হলো মানবতা বিরোধী ক্ষমাহীন জঘন্য আরো এক নয়া গণহত্যা। সংঘটিত এ হত্যাযজ্ঞ দেশের মানুষকে হতবিহবল ও বেদনায় কাতর করেছে। মূলত মহানবীর (সা.) ইজ্জ্বত ও ইসলামের মর্যাদা রক্ষায় ১৩ দফা দাবী আদায়ের জন্য ৫ মে সারাদেশ হতে অগনিত তৌহিদি জনতা মতিঝিলের শাপলা চত্বরে এসে জড়ো হয়েছিলেন। অধিকাংশরাই জায়নামাজ, তসবীহ, পানির বোতল, আর মুখে আল্লাহ আকবার ধ্বনিতে মুখোর ছিল। আগত লাখো লাখো তৌহিদি জনতার ঢল সহ্য করতে পারেনি এ সরকার। বলাবাহুল্য একদল আলেম যখন জিকির করতে করতে বিবি এভিনিউর পাশ দিয়ে আসতেছিলো পূর্বপরিকল্পনামাফিক হঠাৎ করে হিংস্র দানবের ন্যায় আক্রমন করে সরকারী দল আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী। সাপের মত পিটিয়ে হত্যা করা হয় এক আলেমকে এবং আহত করা হয় অনেক আলেমকে। এছাড়া পুলিশের রাবার বুলেট,টিয়ারশেল ও লাঠিতো ছিলোই। এসব আলেমদের কেউ কেউ সমাবেশস্থলে আসলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপরও তারা সর্ব্বোচ্চ সংযমের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে। পরবর্তীতে হেফাজতের দাবী পূরনের কথাতো দুরের বিষয় আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের উসকানি মূলক বক্তব্য ও হুংকারে তৌহিদি জনতা দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে না ফেরার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরপরেই গভীর রাতে ঘুমন্ত,জিকিররত নিরীহ,নিরস্ত্র লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ জনতার ওপর সেক্যুলার লেবাসধারী ইসলাম বিদ্বেষী এই সরকার যৌথবাহিনী ও তাদের পোষ্য ক্যাডার বাহিনী দ্বারা নৃশংস,নির্মম,বর্বর,অমানবিক এই হত্যাকান্ড চালায়। সেখানে কত লোক শহীদ হয়েছে তা আড়াল করতে ট্রাক ভর্তি করে লাশ গুম করা হয়েছে। বিভিন্ন তথ্য মাধ্যম অনুযায়ী অন্তত দু'হাজার থেকে তিন হাজার মানুষ হত্যা করা হয়। ইসলামপন্থি তৌহিদি জনতাকে সন্ত্রাসী-জঙ্গি প্রমান করবার জন্য টন টন কাগজ খরচ করা হচ্ছে, শত শত ভিডিও ক্লিপ তৈরীসহ টকশোর আলাপচারিতায়, মিডিয়া সহ নানান প্রক্রিয়ায় লিপ্ত আওয়ামীলীগ,বামপন্থি ও পরাশক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী উচ্ছিষ্টভোজী এদেশীয় দালাল গোষ্ঠীদের মুখে ইস্তেঞ্জাই করেছে এই শান্তিপূর্ন সমাবেশ। এই গণহত্যার ভিতর দিয়েই প্রমান হয়েছে কারা জঙ্গি ও সন্ত্রাসী। বিদগ্ধ রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণের অভিমত হচ্ছে হেফাজতের সাথে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা হলে এ গণহত্যার প্রয়োজন হতো না। এদেশের শান্তিপ্রিয় আলেমরা গনতান্ত্রিক পরিকাঠামোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই তারা একটি গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তাদের দাবী পেশ করেছে। আর এটি গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় যে কোন নাগরিকের সাংবিধানিক ও গনতান্ত্রিক অধিকার। তারা গনতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়নি,বরং বলেছে তারা সরকারের পতন ঘটাতে আসেনি। তারা যদি জঙ্গি হতো এবং এক একজন আলেম সেদিন দু'পকেটে করে দু'টি বোমা নিয়ে যেত তাহলে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের তখতে তাউস তুলোর মতো উড়ে যেত। এরপরেও তাদেরকে নিজেদের লোক দিয়ে নাটক মঞ্চায়িত করে কুরআন পোড়ানোর অপবাদ দেয়া হয়েছে। ইতিহাসের এই নির্মম বর্বর গণহত্যা উপমহাদেশের আরো দুই গণহত্যা জালিয়ানওয়ালাবাগ ও ২৫ মার্চ,১৯৭১ এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করেছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের পূর্বোক্ত শাসনামল বাদ দিলে এ পর্বে ক্ষমতাসীন হয়ে চারটি গণহত্যা সংঘটিত করে ইতিহাসের থলিতে ভরিয়েছে। মতিঝিল গণহত্যার পূর্বে আমরা ২৮ ফেব্রুয়ারী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে উত্থিত ক্ষোভে জামায়াত-শিবির ছাড়াও সাঈদীভ্ক্ত জনতা রাস্তায় নেমে আসলে তাদের উপর বর্বর নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছে পুলিশ ও সরকারের পোষ্য সন্ত্রাসী বাহিনী। এসময় শতাধিক মানুষ নির্মম হত্যাযজ্ঞের স্বীকার হয়। এছাড়া গত ২৪ এপ্রিল সাভারে সংঘটিত হয় আরেক গণহত্যা। এগণহত্যার শিকার হন অসংখ্য গার্মেন্ট শ্রমিক। সাভার থানা যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও স্থানীয় সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মুরাদ জংয়ের সেকেন্ড ইন কমান্ড ভবন মালিক সোহেল রানা বিরোধী দলের হরতাল প্রতিরোধ করতে সম্পুর্ন অনুপযোগী ভবনটিতে শ্রমিকদের জোড় করে ডেকে এনে এ হত্যা করা হয়। এ বিষয়ে আমার 'ধস রাজ্যে প্রত্যাবর্তন' শীর্ষক নিবন্ধ থাকায় বিস্তারিত ঘটনায় যাচ্ছি না। ইতোপূর্বে এই ইসলামবিদ্বেষী মহাজোট সরকার আমাদের বিডিআর বিদ্রোহ ও সেনাকর্মকর্তা হত্যাযজ্ঞের বর্বর ও বেদনাদায়ক ট্রাজেডী দেশবাসীকে উপঢৌকন দিয়েছে। এই ট্রাজেডীতে প্রাণ হারায় ৫৭ সেনাকর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী বিডিআরের বার্ষিক দরবার শুরু হলে এ বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। দু'দিন ধরে চলা এ বিদ্রোহে সেনাকর্মকর্তাদের বাসভবনে হামলা, লুটপাট, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগসহ বহু নারীর শ্লীলতাহানী ঘটানো হয়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর সাধারন ক্ষমা ঘোষনায় অস্ত্র সমর্পন এবং পলায়ন অতপর নিহিত ও নিখোঁজদের সন্ধানের মাধ্যমে একত্রিত সারি সারি লাশ দেখে শোকে স্তব্দ হয়ে যায় গোটা দেশ। প্রসঙ্গত,বিদ্রোহীদের সমর্থনে দলীয় কর্মীদের নিয়ে ৩ নম্বর গেটে মিছিল করে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা তোরাব আলী। তার ছেলে ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী লেদার লিটনও এ ঘটনায় জড়িত বলে বিভিন্ন তদন্ত ও স্বীকারোক্তিতে পাওয়া গেছে। ডিজি মে.জে.শাকিল আহমদ নিজে প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিদ্রোহের দিন ফোন করে সেনা হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানান। কিন্তু তার কথাকে অগ্রাহ্য করা হয়। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমানুযায়ী সেনাবাহিনী মনে করে সেনা হস্তক্ষেপ হলে এ বিদ্রোহ সহজেই দমনসহ ক্ষয়-ক্ষতি ও মৃতসংখ্যা অনেক নিচে নামত। অবশ্য এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সেনাবাহিনীর কাছে বিভিন্ন প্রশ্নবানে মুখোমূখি হতে হয়েছিলো। এছাড়া প্রতিনিয়ত বিরোধী দল ও ইসলামপন্থিদের বিভিন্ন মিছিল ও সমাবেশে গুলি করে হত্যাসহ গুমের ঘটনাতো রুটিনমাফিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনা যে হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছে ইতিহাসে তার স্থান কিভাবে হবে তা ইতোমধ্যে আমরা লক্ষ্য করছি। শেখ মুজিবর রহমান রাজনীতিতে চরম জনপ্রিয়তা লাভ করলেও, রাষ্ট্র ব্যবস্থায় শাসনের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চরম অজনপ্রিয় হয়ে উঠেন। এবং স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে তিনিই একমাত্র ব্যর্থ শাসক। তার দু:শাসনের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে হত্যাপরবর্তী সময়ে ফেরাউন মরেছে বলে মন্তব্য করেন খোদ তার দলেরই সহসভাপতি আব্দেল মালেক উকিল। একই কারনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত 'শেখ মুছিবত রহমান' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ইতোমধ্যে মুজিবতনয়া হাসিনাকে গণহত্যার জন্য কেউ কেউ'লেডি হিটলার'হিসেবে অভিহিত করছেন। খোদ তার দলেরই লোকজন 'লেডি ফেরাউন' 'লেডি নমরুদ' বা ভিন্ন নামে অভিহিত করলে অথবা মতিয়া চৌধুরাও যদি শেখ হাসিনার চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজিয়ে ষোলো কলা পূর্ন করতে চায়, তাতে অবাক হবার কিছু নাই বরং তা হবে কার্যকারনের ধারাবাহিক ইতিহাস মাত্র। তবে পিতৃ-কন্যার ফ্যাসিস্ট শাসন ব্যবস্থার মধ্যে খানিক ফারাক হচ্ছে শেখ মুজিবর রহমান কখনোই নাস্তিকদের আশ্রয়দাতা ও ইসলাম বিদ্বেষী ছিলেন না যতটা শেখ হাসিনা মুসলমানিত্বের আবরনে ইসলাম বিদ্বেষী ও নাস্তিক্যবাদীদের আশ্রয়দাতা। আবার শেখ মুজিব বিরোধী দল তথা সমাজতন্ত্রীদের দমনে হত্যা করেছিলেন অন্যদিকে হাসিনা এখন বিরোধী দল তথা জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থিদের দমনে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছেন। অবশ্য সে সময়টা সমাজতন্ত্রের জন্য দু:সময় ছিল এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' এর আওতায় ইসলামকে নিশ্চিহ্ন বা মুসলিম নিধন কর্মসূচী চলায় ইসলামের জন্য এটি খারাপ সময়। শেখ মুজিব বেঁচে থাকলে এসময়ে তার ভূমিকা কী হতো সে বিষয়ে অনেকের কৌতহল জাগতে পারে। এছাড়া শেখ হাসিনা আওয়ামী ঐতিহ্য ধরে রাখতে বাবার মত ভিন্ন মত দমনে সাম্প্রতিক সময়ে আমার দেশ, দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি বন্ধ করেছে। শেখ হাসিনার সেক্যুলার সরকার পূর্বোক্ত আমলে কুকুরের মাথায় টুপি পরানো, মসজিদের ভিতর মুসল্লিদের পিটুনি, দাঁড়ি-টুপি ওয়ালাদের হেনস্তা ইত্যাকার ইসলাম বিদ্বেষী কর্মকান্ড ইতোপূর্বে সবাই লক্ষ্য করলেও এবার ক্ষমতাসীন হয়ে ভিশন ২১ পুরনের খায়েশের জন্য ইসলামপন্থিদের হত্যার মিশনের মধ্য দিয়ে ইসলাম বিদ্বেষের নিকৃ্‌ষ্টতম নজির স্থাপন করেছে। বাংলাদেশে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন ও ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে যে দমন প্রক্রিয়া চলছে তা আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনীতির আলোকে বোঝার চেষ্টা না হলে বর্তমান আওয়ামীলীগের রাজনীতির চরিত্র ও গতি-প্রকৃতি নির্ণয় করা যাবে না। কিভাবে দেশজ রাজনীতিতে সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তিকে নির্ণায়ক ভূমিকায় আনা হয়েছে তাও ব্যাখ্যার দাবী রাখে। সকলেই জানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটের ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সময়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অরাজকতার কারনে দেশী - বিদেশী ষড়যন্ত্রে ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন বিশেষ প্রকৃতির সরকার ক্ষমতায় আসে। পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলোর ভূমিকাই ছিল এদেশকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল করা এবং তাদের স্বার্থের হেফাজত করতে কারজাই মার্কা একটি তৃতীয় সেক্যুলার শক্তিকে ক্ষমতায় বসানো। সে বাসনা দেশবাসীর প্রতিরোধের মুখে বাস্তবায়ন হয় নি। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয় সমাজতন্ত্রের পতনের পর সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ইসলামকে দ্বিতীয় শত্রু হিসেবে সাব্যস্ত করে 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' নামক স্লোগান দ্বারা ইসলামের উত্থান ঠেকাতে এবং মুসলীম রাষ্ট্রগুলোর সম্পদ দখল করার জন্য সরাসরি মুসলীম রাষ্ট্রগুলোতে হস্তক্ষেপ করেছে আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা ছাড়াই। অবশ্য ইরাক যুদ্ধ পরবর্তীতে তাদের নীতিতে কিছুটা কৌশলগত পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন তারা দেশগুলোতে সরাসরি হস্তক্ষেপের চেয়ে দেশে-দেশে সহায়ক সেক্যুলার রাজনৈতিক দল,মিডিয়া,ও সুশীল মুখোশধারী ব্যক্তিবর্গের দ্বারা বিবিধ এজেন্ডা বাস্তবায়নের কৌশল অবলম্বন করেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলীম এই বাংলাদেশ তাদের কাঠামোর বাইরে নয়। আমাদের দেশের সেক্যুলারপন্থি দল,মিডিয়া ও সুশীলদের নিজ দেশের ইসলামপন্থিদের জঙ্গি বা জঙ্গিবাদের প্রচারনা এরই ধারাবাহিকতা। প্রথমবার ক্ষমতাসীন অবস্থায় শেখ হাসিনা কথিত জঙ্গি দমনে নিজের উপযুক্ততা প্রমান করার জন্য বাংলাদেশে কথিত জঙ্গির উত্থানের লিফলেট তৈরী করে বহি:বিশ্বে প্রচারনা চালিয়েছে। পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অক্টোবরের ৩০ তারিখে যুক্তরাষ্ট্র স্টেট ডিপার্টমেন্টের দক্ষিন-এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্র রিচার্ড বাউচারের সঙ্গে শেখ হাসিনা ও পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দেন-দরবারের কথা দেশবাসী বিস্মৃত হয়নি। সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই দেন-দরবারে বিশ্বব্যাপী কথিত ইসলামী জঙ্গিবাদ দমনের যু্দ্ধ ও অন্যান্য বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের হেফাজত করতে তার ভবিষ্যত সরকারের সহযোগিতার বিনিময়ে আওয়ামীলীগের প্রতি মার্কিন সমর্থন নিশ্চিত করে এসেছিলেন। পাশাপাশি ভারততো সেই সময়ে দেশের প্রটোকলের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করে তাদের প্রয়োজন কেমন সেক্যুলার সরকার তা সরাসরি বলেছিলো। যাই হোক সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদীদের তৃতীয় শক্তির ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হলে তারা নতুন বোতলে পুরাতন মদ ঢালার মতই সেক্যুলার আওয়ামীলীগকে ক্ষমতার বসানোর জন্য বন্দোবস্ত করে। এবং ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামের কাঠামোয় নিজেকে সামিল করে মার্কিন-ভারত অক্ষশক্তির স্বার্থের হেফাজতের জন্য মুচলেকা দিয়ে আওয়ামীলীগ বিশেষভাবে এবার ক্ষমতায় এসেছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দেশভিত্তিক তাদের বংশবদ কায়েম করে স্বার্থ আদায়ে যে নীতি-কৌশল চলমান রেখেছে,সেই নীতির উপর দাঁড়িয়ে আওয়ামীলীগ মুচলেকা হিসেবে এদেশে মুসলীম নিধনে সন্ত্রাস বিরোধী আইন, নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ একাডেমী, টিকফা, তেল-গ্যাস -খনিজ সম্পদসহ বেশকিছু অনিষ্পন্ন বিষয়ে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে তাদের রাজনীতির স্বার্থে প্রদান করতে পারে। বলাবাহুল্য ইতোমধ্যে সংবাদ মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে টিকফা চুক্তি ও সন্ত্রাস বিরোধী আইন এসেছে। বাকী বিষয়গুলোর ব্যাপারে ক্ষমতার পরিবর্তনের একেবারে দ্বারপ্রান্তে প্রদানে বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না, তাতে তাদের বুঝানো সহজ হবে আরেক টার্ম লাগবে পূর্নাঙ্গভাবে বাস্তবায়নের ব্যাপারে। এজন্যই বুঝি ভিশন ২১। তাই যদি হয় তাহলে দেশ ও জনগনকে আরো বড় ট্রাজেডীর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। অপরদিকে আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারতের উত্তর-পূর্বের সংগ্রামরত গোষ্ঠীকে আশ্রয়দানের অভিযোগে এদেশের জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থিদের দমন করা অপরিহার্য। এজন্য তাদের অখন্ডতার সন্ত্রাসে বিরুদ্ধ যুদ্ধ ভারতের সহায়ক বলে ভিন্ন উদ্দেশ্য ও স্বার্থ হলেও অভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে একই ফর্মূলায় মার্কিন সহযোগীতায় ভারত হাত বাড়িয়েছে এবং তাদের সেবাদাস সেক্যুলার আওয়ামীলীগ তা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় এগিয়ে চলছে। এবার ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনার সরকার বানিজ্য থেকে ট্রানজিটের আড়ালে করিডোড় পর্যন্ত একের পর এক উজার করে দিয়ে চলেছে। এদেশের সার্বভৌমত্ব পদদলিত করে ভয়ংকর 'ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট' বা 'কাঠামোগত চুক্তি' করে বাংলাদেশকে ভারতের ইচ্ছাধীন রাষ্ট্রে পরিনত করা হয়েছে। এ চুক্তির মাধ্যমে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক,অর্থনৈতিক ও সামরিক সব দিক দিয়ে বাংলাদেশকে গোলামী জিঞ্জিরে বেঁধে ফেলেছে ভারত। এ চুক্তির শর্তানুযায়ী ভারতের সাথে শত্রুতা আছে এমন রাষ্ট্রের সাথে বানিজ্য করা যাবেনা এছাড়া ভারতকে অখন্ডিত রাখতে প্রয়োজনে সামরিকভাবেও সহায়তা দিতে হবে। মেয়াদ না থাকায় অকার্যকর বা বাতিলের অধিকার দেয়া হয়নি বাংলাদেশকে। এই হলো শেখ হাসিনার সরকারের সাম্রাজ্যবাদীশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আধিপত্যবাদী শক্তি ভারতের স্বার্থের হেফাজত তরিকা। চলবে....

বিষয়: রাজনীতি

১৭৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File