ইসলামী চেতনাই হবে আগামী রাজনীতির নিয়ন্ত্রক-১
লিখেছেন লিখেছেন নয়া অভিযাত্রী ১৯ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:৪০:০৫ রাত
সব ধরনের বাধাবিঘ্ন, অপপ্রচার, প্রতিরোধ ও রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ৬ই মার্চ অত্যন্ত সফলভাবে হেফাজতে ইসলাম তাদের নির্ধারিত কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছে। কতিপয় ব্লগার মহান আল্লাহ ও তার প্রিয় রাসুল (স.) কে নিয়ে কটুক্তির জন্য তারা এ প্রতিবাদ কর্মসুচীর আহবান করলে এতে সর্বস্তরের লাখো লাখো সংক্ষুব্ধ মানুষ তাদের অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে ইসলামের প্রতি দরদের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ইসলামী চেতনার এই মহা অভ্যুত্থান রাজনৈতিক আলোড়ন তৈরী করে ঘুরিয়ে দিয়েছে রাজনীতির গতি-প্রকৃতি। এই মহা জাগরন নিয়ে দেশে-বিদেশে চলছে আলোচনা-পর্যালোচনা। হেফাজতের এই মহাসমাবেশকে শুধুমাত্র নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসি বা ১৩ দফা দাবীতে সীমাবদ্ধ করে পর্যালোচনা করা হয় তাহলে এর রাজনৈতিক তাৎপর্য বোঝা অসম্ভব। পাশাপাশি এই আন্দোলনের শ্রেনী-চরিত্র সম্পর্কে মৌলভী-মাওলানাদের বিরুদ্ধে সমাজে প্রচলিত কুটতর্ক ও সংকীর্ন দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা নির্নয়ের চেয়ে গভীর বিশ্লেষণের দাবি রাখে অন্যথায় আগামীর রাজনীতির গতি-প্রকৃতি বুঝতে আমরা ব্যর্থ হব। এছাড়া আলেম-ওলামাসহ ইসলাম দরদী জনতার এই ক্ষোভ গত কয়েকদিনের উদ্ভূত পরিস্থিতির কারনে সৃষ্ট মনে করলে ভুল হবে। এ ক্ষোভ বুঝতে হলে আমাদের ব্রিটিশ আমল থেকে বুঝতে হবে।
অনেকেই জানে, ব্রিটিশদের দখলদারিত্বের পূর্বে মুসলমানরাই ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করত। অধিকাংশ মুসলিম শাসকগন রাষ্ট্র পরিচালনা করত ইসলামের আঙ্গিকে। পরবর্তীতে ব্রিটিশরা মুসলিম শাসকদের উৎখাতের পাশাপাশি আলেম-ওলামাগনের উপর দলন-নিপীড়নসহ ইসলামের নাম-নিশানা মুছতেই নানা উপায়-উপকরন ব্যবহার করেছে। এ কাজ তারা এক দিনে করেনি। বরং সুদূরপ্রসারি লক্ষকে সামনে রেখে পাশ্চাত্য সভ্যতা বিনির্মানে শিক্ষা-সংস্কৃতির আমুল পরিবর্তন করেছে। ফলস্বরুপ তাদের নগদ লাভ হচ্ছে - এই শিক্ষায় শিক্ষিত মুসলিমরা পাশ্চাত্য সভ্যতাকে একমাত্র মানদন্ড ধরে ইসলামকে বিচার করা এবং ইসলামী সংস্কৃতির বদলে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আনুগত্যতা। ব্রিটিশদের দেয়া চিন্তা-চেতনা আজ অবধি বের হতে না পারার দৈন্যতা সমাজ দেহে পচন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলামের উপযোগিতা যাচাই এর পরিবর্তে একে মধ্যযুগীয় কাজ-কারবার বলে মনে করা। এবং ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত মৌলভী-মাওলানাদের গন্য করা হয় পশ্চাদপদ, অনাধুনিক, ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী হিসেবে। মুসলিমদের মোকাবেলায় ব্রিটিশরা এ ধরনের নামধারী মুসলিম শিক্ষিত গোলাম শ্রেণী তৈরীর পাশাপাশি বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীকে শিক্ষা-সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সুবিধা দিয়ে মুসলিমদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে জাতি তত্ত্বে বিভাজনের বীজ রোপিত করেছে। এই অসম শাসনব্যবস্থার প্রতিক্রিয়াস্বরুপ ৪৭ এর দেশ বিভাগ-সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
ব্রিটিশদের এই কর্মকান্ডে মুসলমানরা ত্রিধারায় বিভক্ত হয় যা আজও অব্যাহত। একশ্রেণী হচ্ছে - নামে মুসলিম যারা ব্রিটিশদের তৈরী চিন্তাধারা নিয়ে পাশ্চাত্য সভ্যতার আলোকে পরিবার-সমাজ-রাজনীতি-রাষ্ট্র পরিচালনায় আগ্রহী। দ্বিতীয় শ্রেণীতে অবস্থান করছে- আলেম-ওলামাদের একাংশ যারা শুধুমাত্র নামাজ-রোজা-হজ্জ্ব -তসবিহ-তাহলিল ও মসজিদকেন্দ্রিক ইবাদতের মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছে। এবং ব্রিটিশ, বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠী ও প্রথমাক্ত বর্নিত মুসলমানদের চরম ফ্যাসিবাদী মানসিকতার দলন-নিপীড়ন-নির্যাতনকে রুখে দিয়ে ইসলামী সভ্যতা বিনির্মানে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ তো দুরের কথা বরং এসব কর্মকান্ড মুখ বুজে সহ্য করে আল্লাহর দরবারে দোয়া-দরুদের মধ্যে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছে। এর পরে তৃতীয় শ্রেণীতে অবস্থান করছে বিশেষ আলেম-ওলামাগণ যারা ইসলামকে পূর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থারুপে (Complete code of life) মেনে পাশ্চাত্য সভ্যতার পরিবর্তে ইসলামী সভ্যতা কায়েমের সর্বাত্তক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এক্ষেত্রে তারা ইসলামকে শুধুমাত্র আলেম-ওলামাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না করে বরং প্রত্যেক বিভাগের আধুনিক শিক্ষিতদের মাঝে সংশ্লেষণ ঘটিয়ে ও আধুনিক সব উপায়-উপকরন ব্যবহার করে সকল ক্ষেত্রে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। যারা বর্তমানে আত্মরক্ষামূলক নীতির চেয়ে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রে সদর্পে পদচারনা করছে। এই পর্বে ইতিহাস পর্যন্ত রেখে পরের কিস্তিতে ইসলামী জনতার উত্থানের রাজনৈতিক তাৎপর্য ও গতি-প্রকৃতি উদ্ঘাটনে মনোনিবেশ করব।
(লেখার দ্বিতীয় কিস্তি পড়তে নিম্নোক্ত লিংক দেখুন)
http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/5479/hasan_btb/12296
বিষয়: রাজনীতি
২০৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন