রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলামী প্রশ্ন
লিখেছেন লিখেছেন নয়া অভিযাত্রী ১৮ এপ্রিল, ২০১৩, ০৪:২৫:২৮ বিকাল
দেশে সাম্প্রতিককালে বিভাজিত রাজনীতির ইস্যুভিত্তিক উপাদান হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম হাজির। বাঙালী ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বিভক্তির সীমানা পেরিয়ে বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে ইসলামকে দাড় করানোর অপপ্রয়াস চলছে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামীলীগ দলটির আদর্শ হিসেবে ইউরোপে উদ্ভাবিত ধর্মনিরপেক্ষ (Secularism) মতবাদ গ্রহণ করেছে। ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ অনুযায়ী ধর্মকে রাষ্ট্র হতে বিচ্ছিন্ন করে ব্যক্তি পর্যায়ে চর্চা করা। তবে অন্যান্য ধর্মের সামাজিক , রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রনৈতিক দর্শনের অনুপস্থিতি থাকলেও ইসলামে এসব উপাদানের সরব উপস্থিতি। কুরআন-হাদিসে অজ্ঞ থাকলেও সকলেই জানে হযরত মুহাম্মদ (স.) এবং তার সাহাবীগণ ইসলামকে শুধুমাত্র ব্যক্তিপর্যায়ে সীমিত করেন নি বরং ইসলামী দর্শনের আলোকে রাষ্ট্র কায়েম করেছিলেন। যার ফলে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাপারে চরম আপত্তি ও সাংঘর্ষিকতা রয়েছে। এক সময়ের প্রতাপশালী সমাজতন্ত্র পুঁজিবাদের প্রতিক্রিয়াস্বরুপ আবিস্কার হলেও পরবর্তীতে এর পতনে পুঁজিবাদী বিশ্ব একচেটিয়াভাবে নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হয়। এই দুই মতবাদকে চ্যালেঞ্জ করে ইসলাম সমুর্তিতে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার সাথে ভিন্নমত পোষণ করে ইসলাম তার নিজের আঙ্গিকে বিশ্বব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। তাই আরব বিশ্বে মস্তিষ্ক প্রসূত (Man made) মতবাদগুলোর ব্যর্থতার প্রকটতায় আরব বসন্ত (Arab spring) বিরাজ করছে। সমাজতন্ত্রের পতনের মধ্য দিয়েই পুঁজিবাদের নিপীড়ন থেকে রক্ষা করার মতো ভিন্ন মতাদর্শ আসবেনা বলেই বিশ্ববাসী যে ধারনা করেছিলো - ইসলাম সেই চিন্তার মাঝে চিড় ধরিয়েছে। দেশে দেশে ইসলামী শক্তির বিপ্লবাত্তক কর্মকান্ডে বিশ্ববাসীকে নতুন করে ভাববার বন্দোবস্ত করেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামী শক্তির উত্থান ও কর্মযজ্ঞ ক্ষয়িষ্ণু ধর্মনিরপেক্ষ এবং সমাজতন্ত্রের অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিভিন্ন ইসলামী প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধের দাবি ও ইসলামী ভাবধারার জনগণকে অচ্ছুত ও দানব হিসেবে হাজির করবার সর্বশক্তি প্রয়োগ - এই দুই ধারার রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের বহি:প্রকাশ। পাশাপাশি ইসলামী শক্তিকে আদর্শিকভাবে মোকাবেলার ব্যর্থতা দেশের অন্যতম আবেগ মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামের বিপরীতে দাড় করিয়েছে কি না তাও বিবেচ্য বিষয়। এছাড়া ভোটের রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী ভাবধারা মিশ্রিত বিএনপি'র সাথে জোটবদ্ধ হয় জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য ইসলামী দল। এর বিপরীতে আওয়ামীলীগের সাথে তার মতাদর্শগত কারনে জোটবদ্ধ হয়েছে বামপন্থি কিছু দল। ফলশ্রুতিতে ক্ষমতার রাজনীতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ এই মুসলিম দেশে জনগন যেন আওয়ামীলীগকে ইসলামের বিপরীতে অবস্থান মনে না করে এটি ছাপাতেই রাজনৈতিক সমরে ইসলামের মোকাবেলায় মুক্তিযুদ্ধকে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষকগণ। এদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলামকে কখনো পৃথকভাবে বিবেচনা করে না। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইসলামী চেতনাকে যারা আলাদাভাবে দেখবার চেষ্টা করবে আগামীর রাজনীতিতে তারা প্রত্যাখ্যাত হবে। বরং এই দুই চেতনার সংশ্লেষন ঘটিয়ে যারা সমাজ ও রাষ্ট্রে বাস্তবায়নে অগ্রগামী হবে তারাই হবে আগামীর রাজনীতির নিয়ন্ত্রক। আদর্শকে আদর্শ দ্বারা মোকাবেলার পরিবর্তে বল প্রয়োগ, শাব্দিক মারপ্যাচ, অপপ্রচার বা মিথ্যা আবরন মারফৎ ঢাকবার চেষ্টা হলে হয়তো সাময়িকভাবে লাভবান হওয়া যায় - কিন্তু ভবিষ্যতে সত্য এসব উপাদানের খোলস থেকে বেরুলে তা সেই আদর্শের জন্যই বুমেরাং হবে। রাজনীতিতে এই সত্যটি যত চর্চিত হবে তা রাজনীতি ও দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। একইসঙ্গে বৈদেশিক শক্তির উচ্ছিষ্ঠ গ্রহণ করে তাদের স্বার্থ রক্ষায় যারা বুদ্ধিজীবি বা এজেন্সির মাধ্যমে দলসমূহের বন্ধু বেশে রাজনীতির স্বাভাবিক পথকে মসৃন, কুস্তমাকীর্ন ও অসহিষ্ণু করে তুলছে তারা ইতোমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে এবং ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হতে এখন সময়ের অপেক্ষা।
বিষয়: রাজনীতি
১৫২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন