নদী ব্যবস্থাপনায় ভারতের অনৈতিক পররাষ্ট্রনীতি !

লিখেছেন লিখেছেন তরিকুল হাসান ২৬ জুলাই, ২০১৬, ০৫:৫৪:০৪ সকাল

ভারতের গজল ডোবা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেয়ায় বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করছে।

খরার সময় পানি প্রত্যাহার আর বন্যার সময় পানিতে ভাসিয়ে দেয়ার এই অত্যাচার থেকে আমরা রেহাই পাবো কবে ?

আমাদের প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র ভারত। বৃহৎ গণতান্ত্রিক এ রাষ্ট্র ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করে। এজন্য আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তবে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তাদের পররাষ্ট্রনীতি আমাদেরকে প্রতিনিয়ত পঙ্গু করে চলেছে।

এই প্রবন্ধে আমি দেশের নদী ব্যবস্থায় ভারতের অনৈতিক পদক্ষেপের ব্যাপারে আলোচনার চেষ্টা করব।

আন্তর্জাতিক আইন

---------------------------

আন্তর্জাতিক নদীর পানি ব্যবহার সংক্রান্ত হেলসিংকি নীতিমালার ৪ ও ৫ অনুচ্ছেদে সুষ্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, প্রতিটি অববাহিকাভুক্ত রাষ্ট্র , অভিন্ন নদী গুলোর ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই অন্য রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রয়োজনকে বিবেচনায় নেবে এবং তা অবশ্যই তা অন্য রাষ্ট্রের ক্ষতি না করেই করতে হবে।

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, কোন আন্তর্জাতিক নদীর (যেমনঃ গঙ্গা ও ব্রম্মপুত্র) একতরফা পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা পানি প্রত্যাহার বেআইনি ও অগ্রহনযোগ্য।

বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থা ও ভারত

----------------------------------------------

আমাদের দেশের মোট প্রায় ২৪,১৪০ কি.মি. নদী ব্যবস্থা মূলত চারটি নদী প্রনালীতে বিভক্ত। যথাঃ

১। তিস্তা-ব্রম্মপুত্র-যমুনা

২।গঙ্গা-পদ্মা

৩।সুরমা-মেঘনা

৪। চট্টগ্রাম অঞ্চলের স্বতন্ত্র নদী ব্যবস্থা।

বাংলাদেশের সাথে ভারতের ৫৪ টি অভিন্ন নদী রয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের স্বতন্ত্র নদী ব্যবস্থা বাদে দেশের প্রতিটি নদী ব্যবস্থায় ভারত অনৈতিকতার আশ্রয় নিয়েছে।

সেই ৪১ দিন শেষ হবে কবে ?

গঙ্গা নদীতে বাধ দিয়ে ভাগীরথী ও হুগলী নদীতে পানি প্রত্যাহার করার জন্য পরীক্ষামুলক ভাবে ৪১ দিনের জন্য ফারাক্কা বাধ চালু করেছিল। আজো সেই ৪১ দিন শেষ হয়নি। প্রমত্তা পদ্মা আজ শুধুই ধূ ধূ বালুচর। শীত মৌসুমে পদ্মার পানি প্রবাহ প্রায় ৯,০০০ কিউসেকেরও কম। ফলে গঙ্গা-পদ্মার শাখা নদীগুলোও আজ মৃতপ্রায়। সেচের অভাবে কৃষিকাজ বিপন্ন। নদী পরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। নদী গুলোতে মাছের পরিমানও কমে গেছে।

দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ ভারতের খামখেয়ালির জন্য ব্যর্থ হয়েছে। গত ৬ জুলাই ২০১১ 'অভিন্ন তিস্তা ও ফেনী নদীর পানি বন্টন চুক্তি' সাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল, যা ভারতের স্বার্থপরতায় আজো সাক্ষরিত হয়নি।

টিপাইমুখ বাধ আমাদের আরেক মরন ফাঁদ। এর মাধ্যমে আমাদের সুরমা ও কুশিয়ারা থেকে আসা মেঘনার প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হবে। দেশের উত্তর-পুর্বাঞ্চলের জীব বৈচিত্র হবে ধ্বংস।

ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পঃ এক মহাযজ্ঞের গল্প

-------------------

বাংলাদেশকে সম্পুর্ন মরুকরনের মাধ্যমে ভারত তাদের ৩৭ টি ছোটবড় নদীকে ৩০টি খালের মাধ্যমে প্রায় ১২০০ কি.মি. কৃত্রিম নদীপথ দিয়ে ৭৪ টি জলাধারে পানি সংরক্ষন করে ভারতের খরা পীড়িত অঞ্চলে সরবরাহ করবে। এই মহাযজ্ঞের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের বৃহৎ দুটি নদী চ্যানেল পদ্মা ও ব্রম্মপুত্র চ্যানেলের এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ১৭৩ মিলিয়ন ঘন মিটার পানি সরিয়ে নেবে। ভারতের ইতিহাসের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই প্রকল্প (প্রাক্কলিত ব্যয় ১২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) এই বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে। আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতের ১৫০ মিলিয়ন হেক্টর জমি সেচ সুবিধা পেয়ে হবে সবুজ আর আমরা পাব এক মরুভুমি !

তাই আসুন আমরা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল ভেদাভেদ ও রাজনৈতিক মতবাদের উর্ধ্বে উঠে এই সবুজ শ্যামল বাংলাকে চির সবুজ রাখতে ভারতের অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলি ও বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তুলি ।

১৬.০৫.১৬, গাজীপুর,

ডা.মো.তরিকুল হাসান।

বিষয়: আন্তর্জাতিক

১৩৭১ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

375291
২৬ জুলাই ২০১৬ সকাল ০৯:৩৪
হতভাগা লিখেছেন : ভারত বাংলাদেশের সাথে এরকম মজা নিতেই পারে । কারণ ভারত একে তো বৃহতত রাষ্ট্র্ আবার তার উপরে উজানের দেশে ।

নদীর পানি নিয়ে তারা এরকম করলে বাংলাদেশের কিছুই করার নেই । কারণ ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ ভারতের সাথেই আছে । দেশটাকে তো টেনে নিয়ে ভারত থেকে সরিয়ে নেওয়া যাবে না ।

তাই অন্য সব কিছুর মত পানি নিয়ে এই প্যারাও হজম করে নিতে হবে।
২৭ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৯:৩৭
312424
তরিকুল হাসান লিখেছেন : Surprised
২৭ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৯:৪৩
312426
হতভাগা লিখেছেন : এখন তো ভাসায়া দিতেছে
375342
২৬ জুলাই ২০১৬ রাত ০৯:২১
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আসুন আমরা ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল ভেদাভেদ ও রাজনৈতিক মতবাদের উর্ধ্বে উঠে এই সবুজ শ্যামল প্রিয় বাংলাদেশকে চির সবুজ রাখতে ঐক্যবদ্ধ হই। ভালো লাগলো ধন্যবাদ
২৭ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৯:৩৭
312425
তরিকুল হাসান লিখেছেন : Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File