শুভ জন্মদিন কবি আল মাহমুদ ।
লিখেছেন লিখেছেন তরিকুল হাসান ১১ জুলাই, ২০১৫, ০৪:৩২:৫৪ রাত
বাংলা সাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ কবি আল মাহমুদ ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম মীর আব্দুস শুকুর আল মাহমুদ। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কবি। কাব্যগ্রন্থ লোক লোকান্তর(১৯৬৩) সর্বপ্রথম তাকে স্বনামধন্য কবিদের সারি তে জায়গা করে দেয়। এরপর কালের কলস(১৯৬৬),সোনালি কাবিন (১৯৬৬),মায়াবীপর্দা দুলে উঠো(১৯৬৯) কাব্যগ্রন্থ গুলো তাকে প্রথম সারির কবি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি গল্প লেখার দিকে মনোযোগী হন। ১৯৭৫ সালে তার প্রথম ছোট গল্পগ্রন্থ পানকৌড়ির রক্তপ্রকাশিত হয়। ১৯৯৩ সালে বের হয় তার প্রথম উপন্যাস কবি ও কোলাহল।
৫২-র ভাষা আন্দোলনের ঢেউ মফস্বল শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আছড়ে পড়লে যুবক আলমাহমুদ এতে নিজেকে জড়িয়ে নেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও গঠিত হয়েছিলো ভাষা কমিটি এবং ভাষা কমিটির একটি লিফলেটে তাঁর চার লাইন কবিতা উদ্ধৃত করা হয়।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে, যে স্বল্প সংখ্যক কবি রণাঙ্গণের প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, আল মাহমুদ ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৭১ সালে তিনি শরণার্থী হয়ে কলকাতায় যান। সেখানেই তিনি যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন । তারপর একদিন এই কবি তাঁর প্রিয় কলমকে ফেলে দিয়ে হাতে তুলে নেন রাইফেল। দেশে ফিরে তিনি মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার আশায় রণাঙ্গণের সশস্ত্রযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আসে স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তিনি বিজয়ীর বেশে প্রবেশ করেন ঢাকায়। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে 'দৈনিক গণকন্ঠ' নামের একটি পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব হাতে তুলে নেন। '৭১-র পরবর্তী বাংলাদেশের অস্থির রাজনীতি, দুর্ভিক্ষ, সর্বহারা আন্দোলন ও রক্ষীবাহিনী ইত্যাকার পরিস্থিতিতে দেশ যখন বিপর্যস্ত তখন 'গণকন্ঠ'-এর নিঃশঙ্ক সাংবাদিকতা এ দেশের পাঠক সমাজের কাছে ব্যাপকভাবে সমর্থিত হয়। বিশেষ করে আল মাহমুদের সংবাদ প্রকাশের স্টাইল ও সাহসী সম্পাদকীয় দেশবাসীর হৃদয় স্পর্শ করে। বিপরীত দিকে পত্রিকাটি পরিণত হয় শাসক গোষ্ঠীর চক্ষুশূলে।
ফলশ্রুতিতে ১৯৭৩ সালে তিনি কারাবরণ করেন। তাঁর আটকাবস্থায় সরকার দৈনিকটিও বন্ধ করে দেয়। ১৯৭৫এ তিনি মুক্তি পান। তাঁর কবি খ্যাতি ততদিনে পৌঁছে গিয়েছিলো রাষ্ট্রপতির বাসভবন পর্যন্ত। কারামুক্তির পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে ডেকে শিল্পকলা একাডেমীর প্রকাশনা বিভাগের সহপরিচালক পদে নিয়োগ দেন। ১৯৯৩ সালে তিনি ওই বিভাগের পরিচালকরূপে অবসর নেন।
চাকুরী থেকে অবসর নিয়ে তিনি আবার ফিরে যান সাংবাদিকতা পেশায়। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত 'দৈনিক কর্ণফুলি'-র সম্পাদক হিসেবে বেশ কিছুদিন কর্মরত ছিলেন। বার্ধক্যে উপনীত কবি বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছেন।
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ :
কবিতা : লোক লোকান্তর, কালের কলস,সোনালী কাবিন, মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো, প্রহরান্তরের পাশ ফেরা, আরব্য রজনীর রাজহাঁস, মিথ্যেবাদী রাখাল, আমি দূরগামী, বখতিয়ারের ঘোড়া,দ্বিতীয় ভাঙন, নদীর ভেতরে নদী, উড়াল কাব্য, বিরামপুরের যাত্রী, না কোন শূন্যতা মানি না প্রভৃতি ।
ছোটগল্প : পান কৌড়ির রক্ত, সৌরভের কাছে পরাজিত, গন্ধবনিক, ময়ূরীর মুখ প্রভৃতি । উপন্যাস : কাবিলের বোন, উপমহাদেশ, পুরুষ সুন্দর, চেহারার চতুরঙ্গ, আগুনের মেয়ে, নিশিন্দা নারী প্রভৃতি ।
শিশুতোষ : পাখির কাছে ফুলের কাছে ।
প্রবন্ধ : কবির আত্মবিশ্বাস, কবির সৃজন
বেদন., আল মাহমুদের প্রবন্ধ সমগ্র।
ভ্রমণ : কবিতার জন্য বহুদূর, কবিতার জন্য
সাত সমুদ্র প্রভৃতি ।
এছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে আল মাহমুদ
রচনাবলী ।
পুরস্কার :
বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৮),জয়বাংলা পুরস্কার (১৯৭২), হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৪), জীবনানন্দ দাশ
স্মৃতি পুরষ্কার (১৯৭৪), সুফী মোতাহের
হোসেন সাহিত্য স্বর্ণপদক (১৯৭৬),ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬), একুশে
পদক (১৯৮৭),নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৯০),সমান্তরাল (ভারত) কর্তৃক ভানুসিংহ সম্মাননা পদক- ২০০৪ প্রভৃতি ।
বিষয়: বিবিধ
১১০২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন