ক্ষনিকের গল্প (ছোট গল্প)

লিখেছেন লিখেছেন তরিকুল হাসান ২৩ এপ্রিল, ২০১৫, ০৫:৫৬:৪৪ বিকাল



এই আকাশ ভাংগা বৃষ্টি দেখে কে বলবে যে সকাল বেলায় কাঠফাটা রোদ ছিল!

***

নৌকার ছইয়ের ভেতর শুয়ে আছি। রাত প্রায় শেষের দিকে। ঠান্ডা হাওয়ায় গাঁ শিরশির করছে। মাঝি বলল, 'রাইত পোয়াইতে আর দেরি নাই মিয়া বাই, উটবাইন নাহি?'

আর ঘুমানো ঠিক হবেনা। গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পড়লাম। মাঝির লুংগী পড়ে গোসল করার জন্য নদীতে লাফ দিলাম। ঠান্ডা পানিতে ডুব দিয়ে মনে পড়ল, ছোটবেলায় আমি আর ভাইয়া এই নদীতে সারাদিন পড়ে থাকতাম। দুপুরে চোখ লাল করে বাড়ী ফিরলে মা বলতেন, 'মাতবরেরা আইছে, খাওনের পরে আবার ভাগবো !' সত্যি সত্যি খাবার খেয়েই আবার . .

'মিয়াবাই এইবার পানি থেইক্কা উডুইন, ফরসা অইয়া গেল চাইরদিক, সুবহে সাদিক, বুজলাইন সুবহে সাদিক অইয়া গেসে, বড়ই পবিত্র সময়; আমাগো হুজুরপাকের এই সময়ই জন্ম অইছিল, আহারে এই আন্ধার দুনিয়া ফরসা অইল তখন।' মাঝি গলা ছেড়ে আযান দিল। পাশের চড়ে মাঝির গামছা বিছিয়ে নামাজ পড়ে নিলাম। মাঝি চুলায় ভাত চড়াল। 'এইযে দেহেন ভাতের লগে কয়েকটা আলুও সিদ্ধ কইরা ফালাইলাম। একলগেই ভাত আর তরকারী, ওইযে নাইরকেলের মইদ্দেই যেমুন পানি আর খাওন।' গরম গরম ভাতের সংগে আলুর ভর্তা। সংগে তেলে কাল করে ভাজা লাল শুকনা মরিচ। অমৃতের মত লাগল। পেট ভরে খেয়ে নিলাম। কথায় বলে পেটে ভাত পড়লে গলায় গান আসে। মাঝি গান ধরল,

'ও মুর্শিদ ও,

ইকে আমার ভাংগা ঘর,

তার উফরে লড়ে চড়,

কহন জানি হেই ঘর ভাইংগা পড়েরে . .'

গানের তালে তালে নৌকা চলতে থাকল। নদীর তীরে দোল খাচ্ছে শুভ্র কাশের সারি। মাতাল হাওয়ায় ভেসে চলছি দূর বহুদূর। নিজেকে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। হঠাৎ নিরবতা ভেংগে মাঝি জিজ্ঞেস করল, মিয়া বাইকি বিয়া করছুইন নাহি ? আমি মৃদু হেসে বললাম, না।

ক্যান ?

এমনি।

'কন কি ? আমার মামাত্ত বইন আছে একডা, চান্দের লাহাইন সুন্দর . . .

ঢেউয়ের পরে ঢেউ এল। দেখতে ভালই লাগছে। রোদটা তেতে এলে ছইয়ের ভিতর হেলান দিয়ে বসলাম। মাঝি মাচার ভিতর থেকে সাপ লুড্ডু বের করল। জীবনটা বোধহয় কিছুটা সাপ লুড্ডুর মত কখনো উত্থান আবার কখনোবা পতন। পরপর তিনবার হারলাম। আর খেলতে ইচ্ছে করছে না। এই খর দুপুরে ডাব খেতে পারলে ভালই হত। এমনি এক ভর দুপুরে মামার ডাব গাছে উঠে পড়ে ছিলাম পথ ভুলে। সবে দুটা ডাব নিচে ফেলেছি, আমার ভালোমানুষ ছোট মামা দৌড়ে এসেছেন গাছের নিচে , 'পইড়া যাইবা তো, নামো আমি ডাব পাইরা দিতাছি।' যাহ, মজাটাই মাটি হয়ে গেল।

দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে এল। ক্লান্ত মাঝি ঘুমাচ্ছে। কত শান্তির সে ঘুম। চোখজুড়ে অজানা স্বপ্নের কত বন্দর। সেই বন্দরের তীরে হিজল গাছের সারি। আমার ঘুম পাচ্ছেনা। বিকেলের কাচা রোদে পানিতে পা ঝুলিয়ে বসে থাকতে বেশ লাগছে।

ঘুম থেকে উঠেই মাঝি জোরেশোরে নৌকা বাইতে লাগল। সন্ধার কিছুক্ষন পরই আমরা এক নতুন ঘাটে এসে পরলাম। মাঝি জানাল 'মিয়া বাই বরমী আইয়া পরছি।' আমার গন্তব্যে চলে এসেছি। নৌকা থেকে নামতেই হঠাৎ কাল বোশেখির ঝড় শুরু হল। হাওয়ার নাচনের সাথে হুড়মুড় করে নেমে এল বৃষ্টির পাল।

এই আকাশ ভাংগা বৃষ্টি দেখে কে বলবে যে সকাল বেলায় কাঠফাটা রোদ ছিল!

বিষয়: বিবিধ

১০০৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

316509
২৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৯:১৩
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : বাংলার চিরাচরিত রূপ। এত সুন্দর করে বর্ণনাগুলো লিখেছেন যা মন ছুয়ে যায়। অনেকদিন পর এত সুন্দর কোন লেখা পড়লাম।
২৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১১:৫৮
257692
তরিকুল হাসান লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
316564
২৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১১:৫৫
আফরা লিখেছেন : ভালই লাগল ধন্যবাদ ভাইয়া ।
২৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১১:৫৮
257693
তরিকুল হাসান লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File