অব্যক্ত বেদনা . .(ছোটগল্প)

লিখেছেন লিখেছেন তরিকুল হাসান ১৬ নভেম্বর, ২০১৪, ০৬:৫৮:০৭ সন্ধ্যা

শ্রাবনের মাঝামাঝি সময় ব্রম্মপুত্রের বুক বেয়ে নৌকা করে রৌমারী থেকে চিলমারী হয়ে রংপুর যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছে গত পরশু। আর বাড়িতে থাকা ঠিক হবে না। ঝুম ঝুম করে ঝরছে অঝোর বৃষ্টি। বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে বইছে ঝড়ো মাতাল হাওয়া। হাওয়ার তোড়ে ছাউনীর ভেতরেও পানির ছিটা এসে ভিজিয়ে দিয়ে যায়। এর চেয়ে মাচার উপর বসে ভিজে ভিজে যাওয়াই ভাল। তাই মাঝি যখন বলল -

'এ্যাংকা বিষ্টিত ভিজি যাইমেন তো বাবা' তখন পাত্তাই দিলাম না। মিষ্টি মধুর বৃষ্টির ছোয়ায় বেশ ভালই লাগছে। পুরনো দিনের বর্নিল স্মৃতি গুলোর কথা মনে পড়ছে। বৃষ্টিতে সবাই হৈ-হুল্লোড় করে ছড়া কাটতাম-

বিষ্টি এল কাশ বনে

জাগল সাড়া ঘাস বনে,

বকের সারি কোথা রে

লুকিয়ে গেল বাঁশ বনে৷

----------

----------

গাঁয়ের নামটি হাটখোলা,

বিষ্টি বাদল দেয় দোলা,

রাখাল ছেলে মেঘ দেশে,

যায় দাঁড়িয়ে পথ-ভোলা৷*

ছোটবেলায় নাসিম চাচার সংগে যখন রংপুরে যেতাম তখনও এভাবে ভিজেই যেতাম। নাসিম চাচা বলত-

'তোর মাক বলিস নে যে বড় আব্বা ভিজি নিয়ে গেইছে, জর আইসলে পাছে অংপুর থাকি ওষুধ কিনি দিমো এলা।' তার মতে একটু আকটু জ্বরের ভয়ে বৃষ্টিতে না ভেজা কাপুরুষের লক্ষন। তিনি মানুষটাই এমন। প্রেশারের সমস্যার জন্য জোর করেও তাকে কোন ওষুধ খাওয়ানো যেত না।ওষুধের কথা বললে হাসতে হাসতে বলতেন-

'অংপুরের প্রিশার সেন্টারের বড় ডাকতর কইছে , সারা জেবন প্রিশারের ওষুধ খাওয়া নাইগবে। আরে মোর দাদা জেবনে কোনদিন কোন ওষুধে খায় নাই, তায় নব্বই বছর বয়সত তিন নাম্বার বিয়া কইরছে, সেই ব্যাটার নাতি মুই। আর মোকে কয় সারা জেবন ওষুধ খাইমেন। হাসিয়াই বাচংনা।'

দাওয়াত খেতে গেলে তিনি বেছে বেছে চর্বিযুক্ত মাংস খেতেন। আমরা যদি ডাক্তারের নিষেধের কথা বলতাম। তিনি বলতেন

'ওই ডাকতরগোরে একে আলাপ, এটা খাবান নন , ওটা খাবান নন, নইলি কিন্তুক মরি যাইমেন। আরে এইগলে যদি খাবারে না পারি, তাইলে বাচি থাকি কি লাভ?'

ব্যায়াম করতে বললে তিনি বলতেন

'দুইদিন বেশি বাচার জন্যি মুই বেগার খাইটপের পাবার নও'

কারো কোন পরামর্শই কানে নেননি তিনি।

তিল তিল করে নীরবে নিঃশেষিত হয়েছে তার জীবনীশক্তি। প্রেশারের অসুখটাই নাকি এমন , নীরবে বাসা বেধে হঠাৎই তছনছ করে দেয় পুরো দেহকে। তখন আর কিছুই করার থাকে না।ভাবতেই কষ্ট লাগে সেই স্বপ্নীল চোখ গুলো এখন ঘোলা হয়ে গেছে আঁধারের মায়াজালে। তার যৌবনদীপ্ত শরীরটা হয়ে গেছে স্থবির। প্রানবন্ত সেই মানুষটা আজ হাটতেও পারেন না।

পুরনো সেই রংগীন দিন গুলো চোখে ভাসে আর মনের অজান্তে গড়িয়ে পড়ে অশ্রুধারা। নিজেকে আর ধরে রাখা যায় না। বৃষ্টির জলের সাথে মিশে যায় চোখের নোনা প্রবাহ। বুকের অচেনা এক গোপন কুঠুরীতে লাগে অব্যক্ত বেদনা।

*ছড়া- কবি ফররুখ আহমদ

বিষয়: বিবিধ

৯৭০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

284925
১৬ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১০
সন্ধাতারা লিখেছেন : Wonderful writing!! Jajakallahu khair vaiya.
১৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৩৫
228196
তরিকুল হাসান লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ।
284938
১৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৫৫
ফেরারী মন লিখেছেন : এসব লেখার কোনো বিশেষণ লাগে না শুধু বলতে হয় ভালো লেগেছে খুব ভালো। চালিয়ে যান। সুন্দর লিখতে পারেন আপনি। Rose Rose Rose
১৭ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১২:১১
228300
তরিকুল হাসান লিখেছেন : সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
284966
১৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৫৪
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আসলে অতীতের সবকিছুই যেন মধুময় লাগে! ভালো লাগলো লেখনী তাই ভালোলাগা রেখে গেলাম!
১৭ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১২:১১
228301
তরিকুল হাসান লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ।
285335
১৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০১:০৬
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : কেউ কেউ জীবনকে উপভোগ করে নিতে জানেন। তাই যখন আর সামর্থ্য থাকেনা তাদের জন্য আমাদের কষ্ট লাগলেও তাদের নিজেদের কোন অনুশোচনা বা অপ্রাপ্তি থাকেনা।
সুন্দর লেখা।
২২ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৯
230343
তরিকুল হাসান লিখেছেন : সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File