বিশ্রি (ছোটগল্প)
লিখেছেন লিখেছেন তরিকুল হাসান ০২ জুন, ২০১৪, ০৩:৫৫:১৫ দুপুর
লোকটার পরনে ছিল একটা ময়লা লুংগী আর ছেড়া শার্ট। সে বসল আমার কাছ থেকে একটু দুরে মুখোমুখী হয়ে। কয়েক বার আড় চোখে তাকিয়ে আমাকে পরিমাপ করে নিল। তারপর বলল-
'ব্যাগে ৪৬০ টেকা ছিল ভাইজান! '
আমি অবাক হয়ে বললাম-
'ব্যাগ ? কিসের ব্যাগ? 'আপনার কথা কিছুই বুঝতে পারলাম না! '
'যে ব্যাগটা চোরে নিয়া গেছে! '
'ও আচ্ছা! '
মনে মনে হাসলাম আমি। বাংলাদেশে ৪৬০ টাকা সহ ব্যাগ চুরি হবে এটাই স্বাভাবিক। ব্যাটা, তোরে যে ছেচে দেয় নাই, এটা তোর বাপের ভাগ্য। এসব বিষয়ে অতিরিক্ত আগ্রহ দেখানো ঠিক না। পরে দেখা যাবে আমার কাছেই ৪৬০ টাকা চেয়ে বসবে। পকেটে একটা ময়লা পাচশ টাকার নোট আর খুচরা কিছু টাকা আছে। মিতালী হোটেলে রনি বসে আছে । অনেক চাপাচাপির পর ওকে বিরানী খাওয়াতে রাজী হইছি।
আমি চুপ মেরে গেলাম। নেয়ামত মামা থাকলে হয়তো দুটো কথা শুনিয়ে দিতেন;
'তোমরা ইয়াং জেনারেশান, পথে অন্যায় কাজ হবে আর তোমরা বসে থাকবা তা হবেনা। তোমরা সৎ কাজে না নামলে জাতির ভবিষ্যত ঘোর অমানিষা , . .হ্যান . ত্যান !'
হাসি পায় আমার তাছাড়া মামার কাজ-কারবার দেখলে না হেসে থাকা যায় না। মামার মাথায় দুইদিন পরপর একটা করে আইডিয়া আসে আর আমাদের উপর চোটপাট শুরু হয়। মুরুব্বী মানুষ মুখের উপর কিছু বলাও যায় না।
হঠাৎ তার মাথায় আইডিয়া আসলো শহরের সব কসাইকে আল্লাহর নাম নিয়ে পশু জবাই করার গুরুত্ব বুঝাতে হবে। পল্টু ফস করে বলে বসল
'একটা মাইকের ব্যবস্থা করলে কেমন হয় মামা? জাবেদের গলাতো খুব ভালো সে মাইকিং করলে শুধু কসাই না সবাই সচেতন হবে।'
বলেই সে আমার দিকে তাকিয়ে মিচকা হাসি দিল। শালা এমন বদ। সবার কন্ঠভোটে আমার মাইকিং এর বিষয়টা পাস হয়ে গেল। আমি তো তো করে বললাম আমার গলায় ব্যাথা। কোন লাভ হল না। মামা আমাকে একটা লিফলেট ধরিয়ে দিলেন। রিকশা আর মাইক নিয়ে সারাদিন ঘ্যান ঘ্যান করলাম -
'এলাকার মান্যগন্য কসাই ভাইসব এবং পর্দার আড়ালে যবাই কাজে নিয়োজিত মা বোনেরা , একটি অতি গুরুত্বপুর্ন বিষয় . .
ফুপানোর শব্দে চমক ভাংলো। লোকটা চোখ মুছছে । পুরুষ মানুষের চোখের পানি খুব বিশ্রি। ৪৬০টাকা বোধহয় তার কাছে অনেক টাকা। মনটা অনেক বিষন্ন হয়ে গেল। রনিকে ফোন দিলাম দোস্ত আজকে তোকে যে বিরানী খাওয়াতে চাইছিলাম অইটা অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করলাম।
'শালা, তোর জন্য আধা ঘন্টা ধরে বসে আছি , সকালে নাস্তাও ভালভাবে করি নাই, আর এখন . .
ফোন কেটে দিয়ে ময়লা পাচশ টাকার নোটটা লোকটার হাতে দিয়ে রাস্তায় নেমে পড়লাম। প্রচন্ড রোদ উঠেছে, রোদে মাঝে মাঝে আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ে। পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছে ফেললাম, পুরুষ মানুষের চোখের পানি খুব বিশ্রি . .
-----
আমার লেখা আরো কিছু ছোটগল্প-
ঠাডা(বজ্রপাত) (ছোটগল্প)
ডাক দিয়ে যাই . .
তৃতীয় পক্ষ !
রুপালী তাঁরা !null
ভাষন!
বিষয়: বিবিধ
১২৭৩ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আসলে পুরুষ মানুষের চোখে পানি মানায় না । খুব বিশ্রি একটা বিষয় দেখায় ।
তবে মেয়েদের চোখে খুব মানায় !ধন্যবাদ ভাইয়া।
'তোমরা ইয়াং জেনারেশান, পথে অন্যায় কাজ হবে আর তোমরা বসে থাকবা তা হবেনা। তোমরা সৎ কাজে না নামলে জাতির ভবিষ্যত ঘোর অমানিষা , . .হ্যান . ত্যান !'
রোদে মাঝে মাঝে আমার চোখ
দিয়ে পানি পড়ে। পকেট থেকে রুমাল বের
করে চোখ মুছে ফেললাম, পুরুষ মানুষের
চোখের পানি খুব বিশ্রি। "
এটা কি রোদের কারণে পানি, নাকি মানুষের উপকার করার মাঝে যে আত্মতৃপ্তি সেটার পানি ?
বিশ্রি। কেউ ফিরেও তাকায়
না। মেয়েদের
কান্না শুনলে বাংলা সিনেমার
নায়করা চারপাশ থেকে ঝাপিয়ে পড়ে ,
তারপর ঢিসুম ঢিসুম ! কাজেই সেই
পানি রোদ থেকে নাকি বোধ থেকে এল ,
কিছুই যায় আসেনা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন