ভাষন ! (ছোটগল্প)
লিখেছেন লিখেছেন তরিকুল হাসান ১৩ মে, ২০১৪, ১১:০৭:০৭ সকাল
'যে মসজিদে শুক্রবারের নামাজে তিন কাতার মুসল্লী হয় না সেই মসজিদে আসরের নামাজ পড়ল বিশ-পচিশ জন কিশোর!'
জ্বলজ্বলে চোখে তাকান জুলমত শেখ।
করিমের দোকান থেকে একটা পান মুখে দিয়ে আবারো ভাল করে চোখ বুলান চারপাশে। এদের সবাইকে তিনি চেনেন না। তবে সামনে থাকা তরুনকে ভাল ভাবেই চেনেন। সাদেক, ওপাড়ার আফজাল ভাইয়ের ছেলে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ছেলেটাতো ভাল হিসেবেই পরিচিত। পান চাবাতেই মেজাজ গরম হয়ে যায় তার। 'সে কাচা সুপারী খায় না, একশ'বার বলার পরেও শালা করিম কাচা সুপারী দিছে! '
হাতে রাখা রুমালে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করেন করিমের দিকে।
ছেলে গুলো সামনের ছোট গলি দিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে। একটু চোখে চোখে রাখা দরকার। হাজার হোক এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে তার একটা দায়িত্ব আছে!
ছোট রাস্তায় কিছুদুর গিয়ে বাশের বেড়া দেয়া একটা চালা ঘরে ঢুকল ওরা। করছে টা কি এরা?
রাস্তার ধারে কয়েক সারি আমগাছ, তারই পাশে এই চালার ঘর। একপাশে ঘন ঝোপ। দিনের বেলাতেও ঘন অন্ধকার। চারপাশের ছিমছাম নিরবতা ভেংগে মাঝে মাঝে একটানা ডেকে যাচ্ছে একটা কোকিল। মনটা ভরে ওঠে জুলমত শেখের। আহা! এমন দিনে বাউল গান শুনতে পারলে হত . . . আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম . .
আর এখন ছেলেপেলেদের মধ্যে কোন রস নাই! আক্ষেপ হয় তার।
ভাবতে ভাবতে ঝোপের ভিতর ঢুকে পড়েন তিনি। বাশের বেড়ার ফাক দিয়ে চোখ রাখেন ঘরের ভেতর। শুকনো একটা ছেলে কুরআন পড়ছে সুর করে।
'কুরআন? মিলাদ আছে নাকি? কিন্তু মোল্লা-মৌলভী ছাড়া?'
অবাক হন জুলমত শেখ।
এরপর সাদেকের নাম ঘোষনা করা হয়। গম গম করে ওঠে সাদেকের কন্ঠ। আশ্চর্য! এমন ভরাট কন্ঠের ভাষন তিনি আগে একবারই শুনে ছিলেন সেই ছোটবেলায়। ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে . . এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম . . এক ভাষনেই শিহরন ধরে গেল রক্তের ফোটায় ফোটায় . . লেগে গেল ধুন্দুমার যুদ্ধ! এখনও কোন দিবসে সেই ভাষন শুনলে শরীরে আগুন ধরে যায় . . বাশ হাতে নিয়ে লাফিয়ে উঠতে ইচ্ছে করে। সে বাশ কার মাথায় ভাংবেন ভাবতেই ভেসে ওঠে পান বিক্রেতা করিমের মুখ। 'শালা, পানে আবার কাচা সুপারী দিছে, কত্তবড় কইলজা!'
সাদেকের কন্ঠে চিন্তার জগত থেকে ফেরত আসেন তিনি। সাদেক ধীরস্থির কন্ঠে বলে,'আমরা সেই সে জাতি যাদের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানী, ডেনমার্ক,ইতালীসহ ইউরোপের বাঘা বাঘা দেশ থেকে ১১৯৮ সনে ছয় লক্ষ খৃষ্টান সৈন্য ছুটে এসেছিল ফিলিস্তিনে। তারা সাথে করে নিয়ে এসেছিল গোটা ইউরোপবাসীর আয়ের এক-দশমাংশ। তাদের প্রায় চার থেকে পাঁচ লক্ষ জনকে ভূমধ্যসাগরের বালুকাবেলায় চিরতরে শুইয়ে রেখে ফেরত যেতে বাধ্য করেছিল আমাদেরই পুর্ব পুরুষ সিংহ শাবক সালাহউদ্দিন আইয়ুবী। আমাদের ধমনীতে তো সেই জাহাজ পোড়ানো তারিকের রক্ত বহমান।"
গর্জে উঠল সাদেক। শিহরনে কেঁপে উঠলেন জুলমত শেখ।
"যে অকুতোভয় বীর তারিক ইবন যিয়াদ জিব্রালটারে নেমে জাহাজে আগুন
লাগিয়ে পুড়িয়ে দিলেন সব জাহাজ। তারপর সৈন্যদের দিকে চেয়ে বললেন,”চেয়ে দেখ বন্ধুগণ, গভীর সমুদ্র আমাদের
পেছনে গর্জন করছে, আর সামনে অন্যায় অবিচারের প্রতীক বিশাল রডাডিক বাহিনী। যদি আমরা কাপুরুষের মত পেছনে ফিরে যাই তবে সমুদ্র আমাদের গ্রাস করবে আর যদি আমরা সামনে অগ্রসর হই, তাহলে ন্যায় ও বিশ্ব-কল্যাণ প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আমরা শহীদ হবো,কিংবা বিজয়মাল্য লাভ করে আমরা গাজী হবো। এই জীবনমরণ
সংগ্রামে কে আমার অনুগামী হবে?”
মুসলিম বাহিনীর প্রতিটি সৈনিকই বজ্র নির্ঘোষে ‘ তাকবীর‘ দিয়ে সেনাপতি তারিকের সাথে ঐক্যমত ঘোষণা করল।"
আজ সময় এসেছে তারেকের মত গর্জে ওঠার, সময় এসেছে সালাহউদ্দিনের মত ঝাপিয়ে পড়ার! এখনই সময়, আল্লাহর এই জমীনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের কাফেলায় নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে বজ্রগম্ভীর নিনাদে ঘোষনা করার 'নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার! '
নিজের অজান্তেই জুলমত শেখ চেচিয়ে উঠলেন 'আল্লাহু আকবার! '
-------
আমার লেখা আরো কিছু ছোটগল্প-
ঠাডা(বজ্রপাত) (ছোটগল্প)
ডাক দিয়ে যাই . .
তৃতীয় পক্ষ !
রুপালী তাঁরা !null
বিষয়: বিবিধ
১২৩৮ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এটাই বাংলাদেশের বাস্তবতা । সাদেকরা মুখে বলে । আর এরা করে দেখায় ।
১৩ ই মে র?
ভালো লাগল ভাই।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন