ডাক দিয়ে যাই . . (ছোটগল্প)
লিখেছেন লিখেছেন তরিকুল হাসান ২৬ এপ্রিল, ২০১৪, ০৯:০৮:২০ সকাল
চশমাটা চোখে দিয়ে হতভম্ব হয়ে গেল আরিফ !
মাথার দুই পাশের চুল পুরাই গায়েব ! কেমন যেন বেলের মত লাগছে মাথাটা । পাশ ফিরে নাপিতের দিকে তাকাল সে ।
-দেখছেন স্যার ,এক্কেবারে হিরুর মত লাগতাসে আপনেরে !
- হিরু ! কোন হিরু ? চটকানা দিয়া তোর কানপট্টি ফালায়া দিমু ব্যাটা ! হিরু কাইট দিতে তোরে কে বলছে ?
গোপাল নাপিতের বুকটা ধড়ফড় করে উঠল । আসলেই চড়- টড় দিয়ে বসবে নাকি ? এইসব মাথা গরম ইয়াং পোলাপানের কোন ঠিক ঠিকানা নাই। এই বেটা যে চশমা ছাড়া কিছুই দেখতে পায়না ,আগেই বুঝা উচিত ছিল তার ! চুল কাটার সময় আয়নার দিকে কেমন চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছিল । তখন মনে হচ্ছিল সুন্দর কাটিং দেখে মনে হয় খুশিতে চোখ বড় বড় করে আছে । ভুল হয়ে গেছে । মস্ত বড় ভুল।
রাগে গজগজ করতে করতে সেলুন থেকে বের হয়ে এল আরিফ । আজকের দিনটাই আসলে কুফা ।
***
-আরে আরিফ না ! কিরে তোরে ত চিনায় যাচ্ছে না !
-চিনা যাচ্ছে না মানে ?
-মানে তোরে আরিফ মনে হচ্ছে না , মনে হচ্ছে ছিলা আরিফ ! ছিলা আরিফ দা গ্রেট!
-ফাইজলামি করিস না ! বেশি টাকলা টাকলা মনে হচ্ছে নাকি ?
-না খুব সুইট লাগছেরে !
-বাদ দেতো ! গোপাল নাপিতের কাজকারবারই এইরকম । কথায় আছে না নতুন ডাক্তার আর বৃদ্ধ নাপিত থেকে একশ হাত দুরে থাকা লাগে ।
-আজ তো শুক্রবার ,নামাজ পড়বি না ?
-না রে ইচ্ছা করছে না । চল রুমকীদের বাসার সামনে দিয়ে একটা চক্কর দিয়ে আসি ।
***
আজ ১৯নং কবিরুদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের বার্ষিক স্পোর্টস ডে । হেনা আজ খুব ভোরে উঠেছে । সকালে গোসল করে হাস মার্কা নারকেল তেল দিয়ে চুল জবজবা করে বাধা হয়েছে , এখন ভাইয়ার ডাইরীটা নিতে পারলেই হয় । সে ক্লাস সেভেনের ফার্স্ট গার্ল । এমন দিনে ফার্স্ট গার্লদের হাতে একটা ডাইরী নিয়ে ঘোরাফেরা করতে হয় । সবাই বলে দেখ মেয়েটা কত জ্ঞানী ! আর বেলা শেষে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করতে পারলে ষোলকলা পুর্ন হয় । চারদিক থেকে ধন্য ধন্য শোরগোল পড়তে থাকে ।
হেনার বড় ভাই আরিফের একটি ডাইরি আছে । আরিফ একসময় বেশ ভাল ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিল । মসজিদে এক ওয়াক্ত নামাজ জামাতে পড়তে না পারলে একসময় সে সারাদিন মন খারাপ করে থাকত । এলাকার ভাল ভাল ছেলেরা আরিফদের বাড়িতে প্রতি সপ্তাহে একবার করে বসে কোর-আন , হাদিস পড়ত । সে সময় সে ওই ডাইরীতে কি যেন লিখত আর বসে বসে কি যেন ভাবত । আর এখন . . আর ভাবতে পারে না হেনা .. এলাকায় যেকোন অকাজ হলে ধরে নেয়া যায় ওটা আরিফের নেতৃত্বেই হয়েছে . .
***
পুরনো তোষকের নিচে ডাইরীটা পাওয়া গেল ।ডাইরীর কয়েক পাতা পরেই
বড় করে গোটা গোটা হাতের লেখা
'খোদার সাথে সম্পর্ক ' তার নিচে লেখা
খোদার সাথে যথাযথ সম্পর্ক স্থাপন হচ্ছে আমাদের
চ্যালেঞ্জিং এ জীবনের প্রথম ও প্রধান
মাইলফলক। এ সম্পর্ক
যথাযথভাবে না থাকলে আমাদের সকল
প্রচেষ্টা দুনিয়াদারির রঙে রঙিণ
হবে এবং শয়তান আমাদের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে।এক্ষেত্রে যা করনীয়-
(ক) মৌলিক ইবাদত ও আত্ববিচার :
খোদার সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র
ইবাদত করলেই হবেনা বরং এ ব্যাপারে পূর্ণ
নিয়মাবলী জানা, খোদাভীতি অর্জন ও ঐকান্তিকতা আবশ্যক ।
(খ) কোরআন হাদীস ও ইসলামী সাহিত্য
অধ্যয়ন: খোদার সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার
জন্য অবশ্যই কুরআন, হাদীস ও
ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন করতে হবে।
জাহেলিয়াতের বিপদসংকুল পথ অতিক্রম
করার জন্য সাহিত্য জ্ঞানের
অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পথ চলতে হবে।
প্রয়োজনীয় জ্ঞান না নিয়ে সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়লে মাঝপথে
জাহেলিয়াতের অন্ধকারে আচ্ছাদিত
হয়ে জীবন কলুষিত হতে পারে।
(গ) নফল ইবাদত, নফল নামাজ ও রোজা:
খোদার সাথে সম্পর্ককে দৃঢ় করার জন্য
নফল ইবাদত অত্যন্ত অপরিহার্য। এর
মধ্যে নফল নামাজ অত্যন্ত উপকারী।
বিশেষভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ
সংগ্রামী পথে অত্যন্ত কার্যকরী পথ।নফল ইবাদতের মধ্যে আরও রয়েছে নফল রোজা এবং আল্লাহর
পথে অর্থ ব্যয় করা।
(ঘ) সার্বক্ষনিক জিকির ও দোয়া : খোদার
সাথে সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ উপায়
হচ্ছে সারাক্ষন আন্তরিকভাবে জিকির ও
দোয়া করা। সংসার ত্যাগ বা বৈরাগ্যের পরিবর্তে হুজুর (সা) আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন নানারকম জিকির এবং ছোট ছোট কথার দোয়া। প্রতিমুহুর্তে নিজের ঈমান, চরিত্র, ছবর ,তাওয়াক্কুল, সংযম ও নিয়মানুবর্তিতার দৃঢ়তা ও শক্তি বৃদ্ধির জন্য
দোয়া করা উচিত।
পড়তে পড়তে চোখ ভিজে উঠে হেনার ! প্রিয় ভাইয়ের জন্য আক্ষেপে ভরে যায় মন। কোন ফাকে গড়িয়ে যায় সময় । সবুজ মিনার থেকে ভেসে আসে সুমধুর সুরে . .'হাইয়্যা আলাল ফালাহ . . . এসো কল্যানের পথে এসো . . .
বিষয়: বিবিধ
১৫৭৩ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
গতকাল এইটি ট এস এ হুবহু এই চারটি পয়েন্ট এর কথাই বলা হয়েছে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করার জন্য।
শিক্ষনীয় একটি গল্প সুন্দর ভাবে উপস্থাপনের জন্য ধন্যবাদ সেই সাথে একটি প্রশ্ন আপনি কি সৌদি আরবে ?
সহমত। সত্যি দারুণ লাগলো পড়ে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন