পাহাড়ের বাকে বাকে - ৪র্থ পর্ব ।
লিখেছেন লিখেছেন তরিকুল হাসান ২৪ মার্চ, ২০১৪, ০৪:২৭:১১ বিকাল
সকালে রওনা হলাম বগা লেকের উদ্দেশ্যে। বগা লেক যাওয়ার জন্য চাঁদের গাড়ি বা বাসে করে প্রথমে রুমা বাস স্টেশনে (স্থানীয় ভাবে বাস স্ট্যান্ডকে বাস স্টেশন বলে) যেতে হয় । আমরা মাত্র দুজন তাই বাসে করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। পথে যথারীতি বান্দরবানের মনোহর পাহাড়ি প্রকৃতি । নীল আকাশের সাদা মেঘের বর্নিল লুকোচুরি । মাঝে মাঝে বুনো ফুল আর নিবিড় অরন্যের আন্তরিক আহবান আপনাকে নিয়ে যাবে এক অন্য ভূবনে । উপজাতিদের বিচিত্র জীবন ধারা মুগ্ধতার আবেশে করবে বিমোহিত ।
রুমা বাস স্টেশনে মাত্র একটি খাবার দোকান । এখানে চমৎকার বুট-পিঁয়াজু পাওয়া যায় । খেতে খেতে অনেক সময় পার হয়ে গেল । বের হয়ে দেখি রুমা সদরে যাওয়ার একমাত্র চাঁদের গাড়ি আমাদের রেখে চলে গেছে । কি আর করা ।আশে পাশের সাংগু নদীর নিরাভরন প্রকৃতি দেখতে লাগলাম । আর চললো ফটোসেশন ।সাংগুর আরেক নাম
শঙ্খ।সাংগু নদী বাংলাদেশের জলসীমায় উৎপত্তি ও সমাপ্তি লাভ করেছে।অনিন্দ সুন্দর এনদীর তীরে উচু উচু পাহাড়ের বাকে আবেগী রং দিয়ে এঁকে নেয়া যায় স্বপ্নের ছবি ।
রুমা বাস স্টেশন থেকে রুমা সদর ২০ মিনিটের পথ । তবে রাস্তা বেশ ঝুকিপুর্ন এবং আঁকাবাকা । আমি চাঁদের গাড়ির ছাদে উঠে পরলাম । কখনো গাড়ি নেমে চলে ঢালু পথে আবার কখনো খাড়া উঠে যায় । বেশ থ্রিলিং । রুমা সদর থেকে গাইড নিতে হয় । এখানে বগা লেক পর্যন্ত গাইডকে প্রতিদিন ৫০০টাকা করে এবং কিওক্রাডং বা জাদিপাই এর দিকে প্রতিদিন ২৫০০টাকা করে দিতে হয় । গাইড আপনাকে নিয়ে যাবে সেনা ক্যাম্প এবং পুলিশ ফাঁড়িতে । আসার পথেও সেখানে রিপোর্ট করতে হয় ।
আমরা মাত্র দুজন তাই পুরান ঢাকার ৮জনের একটা গ্রুপের সংগে যুক্ত হলাম । অল্প সময়ে তারা আমাদের আপন করে নিলেন । আমরা স্থানীয় তরুন রুবেল বম (মুন্না) কে আমাদের গাইড হিসেবে সংগে নিলাম । গাইড মুন্নার মা কক্সবাজারে যে এলাকায় থাকেন আমাদের গ্রুপের ইমন ভাই সেই এলাকায় বড় হয়েছেন । ইমন ভাই স্থানীয় ভাষা জানেন তাই কিছুক্ষনের মধ্যে গাইড এবং স্থানীয় লোকদের সংগে তার সখ্যতা গড়ে উঠল ।
সেনা ক্যাম্পে রিপোর্টিং শেষে আমরা ২০০০টাকায় একটা চাঁদের ভাড়া করলাম । শুরু হলো পাহাড়ী পথে যাত্রা । ভাংগা রাস্তায় খাদের কিনারা ধরে দোয়া ইউনুস পড়তে পড়তে চলতে লাগলাম ।
চারপাশের সুন্দর দৃশ্য কিন্তু বুক হিম করা পথ ,একেই বোধহয় বলে ভয়ংকর সুন্দর ! পথে পুলিশ ক্যাম্পে রিপোর্টিং করা হল। পাহাড় ,নদী আর ঝর্না ছাওয়া পথে আবারো চলতে শুরু করলাম . . .
এখানে নীরবে পাহাড় কানপেতে থাকে ,
ডানার ঝাপটায় পাখিরা তুলে সুর,
বুনো ফুল তাকায় নীল আকাশ পানে
স্রোতে ভেসে ঝরা পাতা চলে বহুদুর ।
এখানে রোদ মেঘে মাখামাখি চলে
হাত তুলে ডেকে যায় পাতিহাঁস,
সেগুনের বনে পাহাড়ি লতায় আর
সবুজের বুকে করে শিশিরেরা বাস।
নিশিতে রুপালী আলোর মায়াবী চাঁদ
ঠিক এখানে হেসে উঠে,
স্বপ্নের আবেগী রং এ আঁকা ঝর্নার জল
এখানেই লাগে মিঠে ।।
(এখানে,তরিকুল হাসান)
পাহাড়ের বাকে বাকে - ৩য় পর্ব ।
বিষয়: বিবিধ
১৩৩১ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ডানার ঝাপটায় পাখিরা তুলে সুর,
বুনো ফুল তাকায় নীল আকাশ পানে
স্রোতে ভেসে ঝরা পাতা চলে বহুদুর ।
চমৎকার হয়েছে চালিয়ে যান
ধন্যবাদ সুন্দর কাহিনীটির জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন