রুপালী তাঁরা !
লিখেছেন লিখেছেন তরিকুল হাসান ১৬ নভেম্বর, ২০১৩, ০৭:৫৩:০৭ সন্ধ্যা
ছোট্ট একটা বাড়ী ! মাথার উপর টিনের চাল ! শ্রাবনের মাতাল দুপুরে চালের টুং টাং শব্দ ! বাড়ীর পাশে পাকা ঘাটের টলটলা পানির পুকুর । পুকুরের জলে মাছের গাঁই দিয়ে বেড়ানো ।
বড়শি নিয়ে সকাল থেকে বসে আছি । একটা মাছও ধরতে পারি নি । আমার দুই পাশে আমার জমজ দুই মেয়ে চৈতি আর ইতি । কিছুক্ষন পরপর ওরা হাত তুলে মাছের জন্য আল্লাহর কাছে দুয়া করছে । কিন্তু লাভ হচ্ছেনা । আর উনি জানালার ধারে বসে বসে মুখ টিপে হাসছেন ।
-কি জেলে সাহেব ? কয়টা মাছ ধরলেন ? মাছ নেয়ার জন্য ক্রেন নিয়ে আসবো ?
-না ম্যাডাম ক্রেনে হবে না ! আরো বড় কিছু লাগবে !
-ও আচ্ছা ! তা আজ মাছের সাথে রাগ করে না খেয়ে থাকবেন নাকি ?
না আর বসা ঠিক হবে না । চৈতি -ইতির নিশ্চয় ক্ষুধা পেয়েছে । ওদের মুখগুলো কেমন শুকনো শুকনো লাগছে ।
-চলো মা-রা উঠে পড়ি ।
-না আব্বু একটা মাছ ধরা হোক ।
-উহু ! আজ মাছদের জন্য শনি বার ঘোষনা করলাম ।
-শনি বার কি আব্বু ?
-আল্লাহর নবী দাউদ (আঃ) শনিবারে যখন আল্লাহর দেয়া কিতাব যাবুর পাঠ করতেন তখন মাছেরা এসে নদীর কিনারায় ভীড় করে শুনত । কেউ যেন তাদের এ দুর্বলতার সুযোগ না নিতে পারে তাই শনি বার দিন মাছ ধরা ছিল নিষিদ্ধ ।
-এখনও কি শনিবারে মাছ ধরা যাবে না আব্বু ?
-ধরা যাবে মা । তোমাদের আম্মু রেগে যাবে চল তাড়াতাড়ি উঠে পড়ি ।
-আব্বু তুমি এত ভিতু কেন ? আচ্ছা চল !
***
গ্রাম্য মেলার আসল মজা বিকেলে । যখন হঠাৎ করে বেড়ে যায় মানুষের কোলাহল । সারাদিন ঝিমঝিম করে মেলা চলে আর শেষ বিকেলে যেন বয়ে যায় দমকা হাওয়া । চৈতি একটু মন খারাপ করেছে । আব্বু আসলে ইতিকে বেশি পছন্দ করে । নাহলে তাকে নীল চুঁড়ি কিনে দিয়ে ইতিকে লাল চুঁড়ি কক্ষনো কিনে দিত না । ইশ লাল চুঁড়িতে ইতিকে কত্ত সুন্দর লাগছে ! আর ওকে লাগছে পঁচা! অনেক পঁচা ! ওর কান্না আসছে !
-কি হয়েছে আম্মু ? কাদছো কেন ?
-তুমি অনেক পঁচা । আমাকে নীল চুঁড়ি কিনে দিলে কেন ?
-ওমা ! নীল চুঁড়িতে আমার আম্মুকে নীল পরীর মত লাগছে যে !
-উহু তুমি সব সময় বানিয়ে বানিয়ে কথা বল ।
সময় বয়ে বয়ে চলে । বিকেল গড়িয়ে আসে নিশীথ আঁধার । আকাশ বেয়ে নেমে আসে রুপালী তাঁরার দল ।
বিষয়: বিবিধ
১৮২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন