২০/- টাকার ‘খুশি’....
লিখেছেন লিখেছেন উজ্জ্বলা েদবী ১৬ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:১৯:২১ রাত
সৌদিয়া `১০১' নং বাসে উঠেছি চট্টগ্রামের ঊদ্দেশ্যে সকাল ৭:০০ টার বাস ছাড়ল ৯:০০ টায়।একেবারে সামনের সিটে A4 (আলফা 4 ) জানালার পাশে বসেছি।আমার পাশের সিটে ২৬-২৭ বছরের মেয়ে, সাথে ২বছর ৪মাসের ছোট্টমেয়ে ‘রিকামনি’কে নিয়ে বসেছে। নিম্নমধ্যবিত্ত মেয়েটির পরনে কালো বোরখা ওড়না(তবে মাথায় নয় গলায়)।পায়ের নেইলপলিশ উঠে উঠে গেছে।ওদের পাশে বসতে একটু ইতস্তত করছিলাম ,কারন উদভট গন্ধ পাচ্ছিলাম। নিজেকে ধমক দিলাম.... তুমি না মানবিকতার কথা বল তবে কেন মানুষকে ঘিন্না করছো!!!! মুহুতেই মানবিতার যোশ নিয়ে বসে পড়লাম । এবারে.. দীর্ঘ যাত্রা পথ।রিকামনি চিপস্ ,কেক,পপকর্ন, চকলেট,শশা ইত্যাদি খাচ্ছে এবং পর্যায়ক্রমে আমার জামায় হাত মুছে নিচ্ছে ,আঙ্গুল নিয়ে খেলছে,বেস্টলেট নিয়ে টানা-টানি করছে।ওর মা বুঝতে পেরে কোলে নিয়ে বসে আছে। মেয়েটির শশুরবাড়ি বদ্দারহাট,স্বামী বাসচালক। কালো টেপ-মারা মোবাইলটি বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় গানের রিংটোনে বেজে উঠল।একজন অপরিচিতা ফোনে কি বলছে শোনার আগ্রহ যেন না জাগে..বইয়ের লাইন গুলোতে মনযোগ দিলাম। কিন্ত.... পড়া হলো না। - ‘হ্যাঁ জান, না না পহেলা বৈশাখের দিন বের হইতে পরুম না। সবাই থাকবো না! দু’দিন পর সময় কইরা....।আমার সাথে ? কে আবার ... আমি আর আমার বাবু। না... বোঝাইতে হইবো না...।আমি জানি... তুমি কি চাও।দিতে তো আমিও চাই। কিন্তু....।আচ্ছা যেদিন কেউ থাকবো না’। এরপর বাসার সবার বের হবার ও আসার সময়টি বলল মেয়েটি তার ‘জান’কে। “ না.. না সে টের পাইবো কেন্। নাম্বার এখনই ডিলিট কইলা দিমু। আচ্ছা পরে কথা কইয়া ঠিক করমু।এখন তুমি ভাত খাইয়া লও।” এত loudly conversation করছিল যে এটা যে কেউ বুঝতে পারবে। পরকীয়া প্রেম।
মাথার উপর সূর্য। প্রচন্ড গরম। এদিকে রৌদটাও আমাদের সাইডে । গাড়ী জ্যামে পড়েছে। এক আইসক্রিমওয়ালা উঠলে বাসের বাচ্চাগুলো প্যা প্যা শুরু করল।কিন্তুা লোকটির কাছে বোধহয় পর্যাপ্ত ছিল না অথবা জনৈক মহিলার ঝাঝালো বকুনিতে সে বাচ্চাদের আইসক্রিম না দিয়েই নি:শব্দে নেমে গেল। কান্নারত বাচ্চাদের মায়েরা শান্তনা দিচ্ছে “ওই গুলা ময়লা ড্রেনের পানি দিয়ে বানানো,পোকা আছে ওতে”...!!! শিশুরা বড় বড় চোখ করে অভিমানি গাল ফুলিয়ে ভাবছে, ‘পোকা গুলো আসলেই কত বড়!’ নাহ্ ‘পোকা’র থিওরী কাজে আসলো না যখন অন্য আইসক্রিমওয়ালা বাসে উঠল। ৫/- টাকার কালার দেওয়া চিনির বরফ ২০/- টাকা দিয়ে কেনা হল রিকামনির জন্য। এবং ... সে যে কি তৃপ্তি নিয়ে সারা মুখে মুখ শরীরে মাখিয়ে খাচ্ছে।মাকে সাধছে.. ‘না মা তুমিই খাও’ বলে মা তার ওড়না বিছিয়ে দিয়েছে যাতে মিষ্টি রস গায়ে না পড়ে।মা-মেয়েতে মিলে হাসা-হাসি।এই অবস্থাতেই চুমু খাচ্ছে, আইক্রিমের সাথে সাথে বাসের ধুলুনিতে ওরাও দুলছে। ২০/- টাকা দিয়ে ‘খুশি’ কেন হয়েছে.....। ভাবছিলাম.... সমাজে মানুষ হিসেবে মেয়েটি যেই চরিত্রেরই হোক না কেন ‘মা’ তো ‘মা’ই। একটু আগে জন্ম নেওয়া ঘৃনা যেন লোপ পেল সে ‘মা’ বলে।....
বিষয়: বিবিধ
১১৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন