গান বাজনাঃ শান্তি না বিভ্রান্তি ?????
লিখেছেন লিখেছেন নওয়াজিস ২৪ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:৪৭:৩৩ দুপুর
আমাদের দেশে জ্ঞান হওয়ার পর একটা ছেলে বা মেয়ের কুরআন-সহিহ হাদিসের সাথে পরিচয় হওয়ার আগে রবীন্দ্রনাথ,শরৎচন্দ্র(তথাকথিত আরও অনেক ভালো সাহিত্য),স্টার(ওয়ার্ল্ড,স্পোর্টস, ই এস পি এন, প্লাস, আনন্দ) ইত্যাদির সাথে পরিচয় হয়। জ্ঞান হওয়ার পরে- এই কথা বলার কারণ হল,ছোট থাকতে অনেকেই বাড়িতে হুজুর রেখে কিছু সূরা শিখে থাকে কিন্তু জ্ঞান হওয়ার সাথে সাথে যখন উল্লিখিত আবর্জনা আমাদের মধ্যে ঢুকতে শুরু করে তখন ঐ নাম কা ওয়াস্তে শেখা সূরা গুলো আপনা আপনিই মন থেকে চলে যায়।
আফসোসের কথা এই যে আমরা আজও নামেই মুসলিম কাজে না। একটু ভাবলেই বোঝা যায় আমাদের জীবনের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে আমরা আমাদের মন মত তৈরি ইসলাম মানি না। আমাদের কাছে বিনোদন হল গান ।
গানে কি আছে???? যা আছে সব ই ক্ষতিকর।গান আমাদের কে আল্লাহর কথা, মৃত্যুর কথা ভুলিয়ে রাখে। কিভাবে??? ধরা যাক আপনি এখন গান শুনছেন। সেটা হতে পারে পিটবুলের হোটেল রুম সার্ভিস, রিহানার রুড বয়, একনের ছুম্মাক ছাল্ল।গান শুনতে শুনতে নামাজের ওয়াক্ত হল। আপনি নামাজের ওয়াক্ত মিস করবেন বেশীরভাগ ক্ষেত্রে। তারপরও ধরা যাক আপনি নামাজ পড়লেন। কিন্তু পড়লেও ঘরেই পড়বেন কারণ গান শোনায় আপনি এত ব্যস্ত যে মসজিদে যাওয়ার সময় আপনার নেই। যেখানেই নামাজ পড়েন না কেন নামাজ শেষ করার পর আপনাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় সূরা ফাতিহার সাথে আর কোন কোন সূরা পড়েছেন???আপনি উত্তর দিতে পারবেন না। কেন এরকম হয়??ভাবলে বুঝতে পারবেন যে নামাজ পড়ার সময়ে আপনি একটু আগেই যে গান শুনেছেন, গানে যা দেখেছেন সেটাই আপনার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। নামাজে যেখানে এক মনে আল্লাহকে ডাকার কথা ছিল সেখানে আপনি আল্লাহকেই ভুলে বসে আছেন। সত্যি কথা বলতে গেলে এই ধরনের নামাজ আল্লাহ্র কাছ থেকে আপনার জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে কিনা তা বলা মুশকিল।কারণ নামাজ পড়লেও সেটা পড়া হচ্ছে রীতিমত গাফেল অবস্থায়।
আল্লাহ্ কুরআনে বলেনঃ
হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার মহামহিম পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল?(সূরা ইনফিতারঃ৬)
আমরা যারা গান শুনি এবং নামাজও পড়ি তারা গান শোনা ছাড়াও আরও অনেক গোনাহের কাজে লিপ্ত থাকি।কিন্তু নামাজ পড়লে তো এরকম হওয়ার কথা না। কারণ আল্লাহ্ বলেনঃ
নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর।(আন কাবুতঃ৪৫)
কিন্তু নামাজ পড়ার পরও আমরা নানারকম গর্হিত কাজ করি।কারণ নামাজের ভিতরেই আমাদের ভেজাল আছে।ভেজালের মধ্যে গান অন্যতম।
এখন অনেকে বলবে যে আমি তো উপরে যে গানগুলোর কথা উপরে বললাম সব ই এক রকমের। ভালো গান ও তো আছে যেমন রবীন্দ্রসঙ্গীত, দেশাত্মবোধক গান ইত্যাদি। তাদেরকে বলি, ভাই আপনি যে গানেরই কথা বলেন্ না কেন সেটা হয় অশ্লীল, নাহয় শিরক যুক্ত, নাহয় অর্থহীন। উপরের গান গুলো সব ই সেই মাপের। যদি হিন্দি গান বুঝে শুনে থাকেন দেখবেন সেখানে বলে হচ্ছে সাজদা কিয়া ইউ ইশক কা( প্রেমের সাজদা করলাম নাউজুবিল্লাহ)(i hate luv story),কে তুম বান গায়ে হওঁ মেরে খোদা(তুমি আমার খোদা নাউজুবিল্লাহ)(bachna e haseeno) এরকম বলে শেষ করা যাবে না। আল্লাহ্ চাইলে সব গোনাহ মাফ করবেন কিন্তু শিরক করলে মাফ করবেন না।
আল্লাহ্ বলেনঃ
নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম।(মায়েদাঃ৭২)
অনেকে বলেন যে গান শুনলে মনের কষ্ট কমে যায়, মনে শান্তি আসে। আমার তো অন্যরকম মনে হয়।গান মনের কষ্ট তো কমায়ই না বরং ভুলে যাওয়া কষ্টের কথা জোর করে জাগিয়ে তোলে।গান কিছু অর্থহীন কথার সমষ্টি যা কিছু মেধাবি মানুষ তৈরি করে থাকে। ইসলামে যাবতীয় বাদ্যযন্ত্র হারাম(দাফ নামে এক ধরনের একপাশ খোলা ঢোল বিশেষ ছাড়া যাতে ফাঁপা আওয়াজ হয় এবং এই আওয়াজে কোন মাদকতা থাকে না)
গানের ব্যাপারে বলা হয়েছেঃ
‘আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আযাব।’ {সূরা লুকমান, আয়াত : ০৬-০৭}
যারা মুসলিম উম্মাহর সবার ঐক্যমত্যের বাইরে গিয়ে গান-বাদ্যকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করছেন, আল্লাহ তাদের মাফ করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের ব্যাপারে আমাদেরকে চৌদ্দশ বছর আগেই সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন,
‘আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশম, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল সাব্যস্ত করবে।’ [সহীহ বুখারী : ৫৫৯০]
এরপরও আমরা নিজেরাই গান শোনার পিছনে যুক্তি তৈরি করি যে ভালো মন্দ মিলিয়ে মানুষ।অনেকে গান শোনার পক্ষে ফতওয়াও যোগাড় করার চেষ্টা করে।আমার মধ্যে না হয় এই মন্দ টুকু থাকুক( আল্লাহ্ আমাদের হেফাজত করুন)।একটা ব্যাপার আমাদের সব সময় মাথায় রাখতে হবে যে ইসলামে আমার আপনার কি ভালো লাগে বা কি মনে নয় সেইটার কোনই দাম নেই।ইসলাম সেটাই যেটা আল্লাহ্ কুরআনে বলেছেন, রাসুল(সাঃ) বলেছেন, করেছেন,সাহাবারা করেছেন।
উপরের আয়াত ও হাদিসের মাধ্যমে এটাই পরিস্কার হয় যে আমরা বিনোদনের জন্য যে গান শুনে থাকি তা হারাম।এটা জেনেও যদি আমরা গান শুনি তাহলে আমাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ বলেছেনঃ
তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন’। {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ৮৫}
যারা নামি দামি সঙ্গীত শিল্পী তারা কিভাবে পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছেন তা নিয়ে চিন্তা করলেই অনেক কিছু বোঝা যায় যে তারা কত টা শান্তিতে ছিল। এ তো গেল এই জীবনের কথা আর পরকালের কথা তো থাকলই।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা আর কত দিন আমরা নামে মুসলমান থাকব??
একটু ভেবে দেখেন এক গান আপনি কতবার শুনেন?? কয়েকবার শুনার পর ই তো সেটা পুরানো হয়ে যায় এবং শুনতেও আর ভালো লাগে না। কিন্তু মসজিদের আজান কি শুনতে আপনার কখনো খারাপ লাগে??? একঘেয়েমি লাগে?? কখনো কি মনে হয়েছে আজানটাতে একটু বাজনা থাকলে বা আজানটা রিমিক্স হলে ভালো লাগত??? না আপনার এরকম কখনোই মনে হবে নাহ। আজান যেমন ছিল তেমন ই আছে তেমন ই থাকবে। আপনি আজানের আহবানে সাড়া দিয়ে মসজিদে আসবেন না অন্য কোন তথাকথিত বিনোদন নিয়ে বসে থাকবেন সেটা আপনার ব্যাপার।
আমার নিজেরই আপনাদের মত গান শোনার অভ্যাস ছিল। সেই অভ্যাস ত্যাগ করতে আমার ৬ বছর লেগেছে।পেরেছি কারণ আল্লাহ্ আমার উপর রহম করেছেন । আপনিও যদি নিয়ত করেন সংকল্প করেন যে আপনিও ইনশাল্লাহ আল্লাহকে খুশি করার জন্য গান শোনার অভ্যাস ছেড়ে দিবেন তাহলে আল্লাহ্ আপনাকেও সাহায্য করবেন। কিরকম সাহায্য??
আনাস রাঃ হতে বর্নিত আছে তিনি বলেন,রাসুল (সঃ) থেকে তিনি বর্ননা করেন যে,মহান আল্লাহ তাআলা বলেনঃআমার দিকে বান্দাহ আধ হাত এগিয়ে এলে,তার দিকে আমি একহাত এগিয়ে যাই,আর আমার দিকে যখন সে একহাত এগিয়ে আসে,তার দিকে আমি দুইহাত এগিয়ে যাই।আর সে আমার দিকে যখন হেঁটে আসে,তাঁর দিকে আমি দৌঁড়িয়ে যাই।বুখারী-৭৫৩৬,মুসলিম-২৬৭৫,রিয়াদুস সালেহীন-৯৭
আল্লাহ্ তুমি আমাদের মাফ করে দাও, আমরা তোমার কাছে তওবা করি। আমাদের মাফ করে দাও, আমরাই আমাদের উপর জুলুম করেছি। তুমি আমাদের মাফ করে আমাদের উপর রহম করো। আমাদের হেদায়েত দান করো এবং সেই হেদায়েতের উপর অটল থাকার তৌফিক দান করো। আমরা তোমার করুণার উপর ভরসা করেই তোমার সাহায্য প্রার্থনা করছি কারণ তুমি বলেছঃ
হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(আয যুমারঃ ৫৩ )
আর যারা মন্দ কাজ করে, তারপরে তওবা করে নেয় এবং ঈমান নিয়ে আসে, তবে নিশ্চয়ই তোমার পরওয়ারদেগার তওবার পর অবশ্য ক্ষমাকারী, করুণাময়।(আরাফঃ১৫৩)
বিষয়: বিবিধ
১৪৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন