উহূদের যুদ্ধঃপর্ব ১
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মাহি উদ্দিন ১৩ মে, ২০১৩, ০৬:০৯:২২ সকাল
উহূদের যুদ্ধঃপার্ট ১
আবু সুফীয়ানের অভিযান
বদর যুদ্ধে ভীষনভাবে পরাযয় বরণ করায় কুরাইশরা তার প্রতিশোধ গ্রহনের জন্য বদ্ধ পরিকর হল।উক্ত যুদ্ধে অধিকাংশ কুরাইশ সরদারের ঘাড়ে নেতৃত্বের দায়িত্ব এসে গেল।
বদর যুদ্ধের পর পরই সে কী উদ্দেশ্যে মদীনায় আগমন করেছিল তা আমরা জানি।মদীনায় ইয়াহুদদের মনোভাব বুঝে আসার পর সে মক্কা ও তার নিকটবর্তী প্রদেশসমূহের বিভিন্ন গোত্রের লোকদেরকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করার কাজে মনোনিবেশ করল।তার চেষ্টায় কিছু দিনের মধ্যে ৩(তিন) হাজার দুর্ধর্ষ সৈন্যের এক বিরাট বাহিনী যুদ্ধের জন্নন প্রস্তুত হয়ে গেল।
তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসে এ বাহিনী বিপুল অস্ত্র-শস্ত্রসহ আবূ সুফীয়ানের নেতৃত্বে মদীনা অভিমুখে রওয়ানা হল।কিছু সংখ্যক রণ উন্মাদিনী নারীকেও তারা সঙ্গে নিয়ে চলল।এরা পুরুষ যোদ্ধাদের উৎসাহ বৃদ্ধি ও প্রতিহিংসা বৃত্তিকে উত্তেজিত করার কাজে নিয়োজিত ছিল।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তার চাচা আব্বাস (রা) এর মাধ্যমে তাদের সংবাদ এবং অন্যান্য তথ্যাদি
পেয়ে যান।মদীনার নিকটে এসে পাহাড়ের উত্তর পূর্ব কোণে সৈন্য সন্নিবেশ করে।সংবাদ পেয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দুজন গুপ্তচর প্রেরণ করে তাদের সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করলেন।অতঃপর তার নির্দেশে আল-হবর ইবনু মুনযির ছদ্দবেশে শত্রু শিবিরে প্রবেশ করে তাদের সৈন্য সংখ্যা ,সমর -সজ্জা প্রভৃতির সঠিক তথ্য নিয়ে আসেন।
সাহাবীদের সাথে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পরামর্শ
তারপর তাদের কোথায় এবং কিভাবে মুকাবেলা করা যায় –মদিনার অভ্যন্তরে ,না মদিনার বাইরে সে সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তিনি সাহাবীদের এক পরামর্শ সভা আহবান করলেন।
তার নিজের ব্যক্তিগত অভিমত শহরের ভিতর থেকে বের না হওয়ার এবং দুশমনকে শহরের প্রবেশ মুখে প্রতিরোধ করার ।যদি তারা শহরে ঢুকে পড়ে তা হলে মদিনার রাস্তা ও গলিসমূহের মোড়ে মোড়ে পুরুষেরা যুদ্ধ করবে ।আর নারীরা গৃহের ছাদ থেকে পাথর বর্ষন করবে ।আবদুল্লাহ ইবনে উবাই মুনাফিকের মতও ছিল এটাই।
কিন্তু কতিপয় সাহাবী শহরের ভিতর থেকে প্রতিরোধ সমীচিন মনে করলেন না ।শহরের বাইরে গিয়ে শত্রুর মুকাবেলা করাই শ্রেইয় মনে করলেন।এদের মধ্যে যেমন ছিলেন কতিপয় বিশিষ্ট সাহাবি,তেমনি ছিল বেশ কিছু উৎসাহী নওজোয়ানও।অবশেষে এ মতই প্রবল হয়ে উঠায় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সকলকে প্রস্তুত হয়ে আসতে বলে নিজে অন্তঃপুরে প্রবেশ করলেন।এদিকে প্রবীণ সাহাবী ভেবে দেখলেন কাজটা ভাল হল না।
তারা মনে করলেন , রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তার নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অধিকাংশ লোকের সিদ্ধান্তের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শ্নের জন্যই বাইরে গিয়ে শত্রুর মুকাবেলা করতে অগ্রসর হচ্ছেন।কাজেই তারা স্থির করলেন , রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মত অনুসারে ভিতর থেকে প্রতিরোধ করাই হবে উচিত কাজ ।সেই মতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে অনুরোধ জানাবেন বলে স্থির করলেন।
অধিকাংশের রায় অনুসারে উহুদের দিকে যাত্রা শুরু
কিছুক্ষন পর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) রণসাজে সজ্জিত হয়ে বাইরে আসলেন।সাহাবীগণ তাঁকে যুদ্ধের পূর্ণ সাজে সজ্জিত দেখতে পেয়ে কিছুটা হচকিত হলেন।পরক্ষনে তাঁরা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর খিদমতে হাজির হয়ে নিবেদন করলেন ,ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ! আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার আমরা আপনার উপরে ছেড়ে দিচ্ছি।শহরে অবস্থান করে শত্রুদের মুকাবেলা যদি আপনি শেয় মনে করেন তবে তাই আপনি করুন।সর্বাবস্থায় আমরা আপনার পিছনে আছি।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তখন বললেন ,না ,তা হয় না ।সর্বজন গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে আল্লাহর নাবী বাইরে গিয়েই শত্রুর মুকাবেলা করবেন-এ নিয়্যাতে তিনি বের হয়ে পরেছেন,এখন সে সিদ্ধান্ত পাল্টানো চলে না ।এর ভিতরেই রয়েছে কল্যান-যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ ও দৃঢ়তা অবলম্বন করে থাকতে পার।তবে আল্লাহ যদি এর বিপরীতে কোন আদেশ প্রদান করেন –তা হলে স্বতন্ত্র কথা।
অধিকাংশের রায় তথা সাধারণ সিদ্ধান্তের উপর নবীর এ দৃঢ়তা দর্শনে সাহাবিরা আর কিছু বলতে সাহস পেলেন না ।তারা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) –এর অনুসরন যার ঘরে যে অস্ত্র ছিল তাই নিয়ে এসে হাজির হলেন ।আনসার মুজাহির ,ছোট বড় সকলকে নিয়ে মুজাহিদদের সংখ্যা হল এক সহস্র ।দিনটি ছিল শুক্রবার ।“বিসমিল্লাহ “ বলে সহস্র সেনা সঙ্গে নিয়ে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আল্লাহর পথে যাত্রা শুরু করলেন।
To be continued…………………
বিষয়: বিবিধ
১২৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন