সৃষ্টির উদ্দেশ্য:শেষ পর্ব
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মাহি উদ্দিন ১৮ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:২০:৪৭ রাত
লিখেছেন আবু তালহা মোঃ মাহি উদ্দিন
আমরা মানুষ হয়ে জন্ম নেবার পর আমরা কতই না অসহায় অবস্থাই থাকি।আর এই অসহায় অবস্থা থেকে সময়ের বির্বতনে আস্তে আস্তে আমাদের মনের ভিতরের অদৃশ্য জানালাটা খুলতে শুরু করে।সেই জানালাতে একটি কালো পর্দা থেকে যায়।যারা মনের জানালার এই কালো পর্দাটা সরাতে চায় তাদের সামনে একটি ঔষধ আছে।শুধুমাত্র সেই ঔষধ দ্বারাই কালো পর্দাটা সরিয়ে আসল জগৎটা দেখা সম্ভব।আর সেই ঔষধটা হল পবিত্র আল-কুরআন।যার মধ্যে আমদের জীবন পরিচালনার পরিপূর্ন্য দিক নির্দেশনা পাই।আর এটার মূল কথা হল আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জন করা অর্থ্যাৎ আল্লাহের দাসত্ব করা।আর এই দাসত্বের মধ্যেই প্রকৃত স্বার্থকতা কেননা আল্লাহ তা'আলা শুধুমাত্র তার দাসত্বের জন্যই আমাদের সৃষ্টি করেছেন।আল্লাহ তা'আলা কুরআনে বলেনঃ
"
﴿وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ﴾
জিন ও মানুষকে আমি শুধু এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার দাসত্ব করবে৷ "
[সূরা আয যারিয়াতঃ৫৬]
এটা মানে আবার বুঝবেন না যে ,ঘর-সংসার বাদ দিয়ে বৈরাগী হয়ে যাওয়া।আমাদের এই জীবনকে সর্ম্পূন ব্যালান্স করে চলতে হবে।যেমনটি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ(সা) তার জীবনে করেছিলেন।তার জীবনীই আমাদের একমাত্র মডেল হওয়া উচিত,অন্য কারো জীবনী আমাদের জীবনের মডেল হতে পারে না।আল্লাহ তা'আলা কুরাআনে বলেনঃ
"
﴿مَّن يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ ۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا﴾
যে ব্যক্তি রসূলের আনুগত্য করলো সে আসলে আল্লাহরই আনুগত্য করলো৷ "
[সূরা আন নিসাঃ৮০]
আল্লাহ তা'আলা অন্য এক আয়াতে বলেনঃ
"
﴿وَكَيْفَ تَكْفُرُونَ وَأَنتُمْ تُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ آيَاتُ اللَّهِ وَفِيكُمْ رَسُولُهُ ۗ وَمَن يَعْتَصِم بِاللَّهِ فَقَدْ هُدِيَ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ﴾
তোমাদের জন্যে কুফরীর দিকে ফিরে যাবার এখন আর কোন সুযোগটি আছে, যখন তোমাদের শুনানো হচ্ছে আল্লাহর আয়াত এবং তোমাদের মধ্যে রয়েছে আল্লাহর রসূল ? যে ব্যক্তি আল্লাহকে মজবুতভাবে আকঁড়ে ধরবে, সে অবশ্যি সত্য সঠিক পথ লাভ করবে৷ "
[সূরা আল ইমরানঃ১০১]
অর্থ্যাৎ আমরা যদি হযরত মুহাম্মদ(সা) এর সুন্নাহ আমাদের জীবনে প্রয়োগ করি তাহলেই সফল হব।
এজন্যই হযরত মুহাম্মদ(সা) তার বিদায় হজ্জে আমাদের দুটি জিনিস আকঁড়ে ধরে রাখতে বলেছিলেন,এক আল কুরআন ও তার রেখে যাওয়া সুন্নাহ।কুরাআনে আল্লাহ বলেনঃ
"তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রুজ্জু মজবুতভাবে আকঁড়ে ধরো ।"
[সূরা আল ইমরানঃ১০৩]
আমরা কি তার দেয়া নির্দেশ মানছি?আপনাদের মনকে প্রশ্ন করেন ,উত্তর পেয়ে যাবেন।
বস্তুত আমরা ত আছি এক অদৃশ্য মোহে।এই মোহ হতে পারে টাকা-পয়সা,ধন-দৌলত,হতে পারে নারী,গাড়ী,মদ আরো অনেক কিছু ।আর এই মোহটাই আমাদের মনের জানালার উন্মচন করার পথে প্রধান অন্তরায় অর্থ্যাৎ মরিচা হিসাবে কাজ করছে।এই মরিচা তখনই রোধ করতে পারব যখন আমরা কুরআন পড়ব,বুঝব এবং সেই অনুযায়ী আমল করব।
আমরা কিন্তু আমাদের সৃষ্টির যে প্রকৃত উদ্দেশ্য তা ভুলে গিয়ে কোন গন্তব্য ছাড়া অজানা পথে চলছি।গন্তব্যহীন কোন পথিক যদি চলতে থাকে তাহলে কি তার পথের দিশা পাবে ?
অবশ্যই "না"।।তাকে সবাই পাগল বলবে ।আসলে আমরা কতই হতভাগা যে ঐ পথেই চলছি কোন গন্তব্যছাড়া।আল্লাহ কুরআনে বলছেনঃ
﴿ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ﴾
এটি আল্লাহর কিতাব, এর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই ৷ এটি হিদায়াত সেই ‘মুত্তাকী’দের জন্য ।"
[সূরা আল বাকারাহঃ২]
একটু ভাবুন আমরা কত অকৃতজ্ঞ ,বেইমান কেননা যে আল্লাহ রাব্বিল আলামিন আমাদের সৃষ্টি করল তাকেই কিনা আমরা ভুলে যাই।আমরা বড়ই নাফরমানি করছি।আর আল্লাহ তা'আলা এই নাফরমান লোকদের সর্ম্পকে কুরআনে বলছেনঃ
"
﴿أُولَٰئِكَ الَّذِينَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمَا لَهُم مِّن نَّاصِرِينَ﴾
এরা এমন সব লোক যাদের কর্মকাণ্ড (আমল) দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানেই নষ্ট হয়ে গেছে এবং এদের কোন সাহায্যকারী নেই ।"
[সূরা আল ইমরানঃ২২]
অর্থ্যাৎ আমাদের এই তুচ্ছ জীবনে সামান্য ভোগ-বিলাস এর বিনিময়ে আমরা জাহান্নাম কিনে নিচ্ছি।সুতরাং আমাদের এই তুচ্ছ জীবনকে আনন্দ- ফূর্তিতে কাটাতে গিয়ে... যে অবহেলায় সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে পারল না তার জন্য আখেরাতে শুধুই আফসস এবং অনন্তকাল আগুনে পোড়ার সূর্বন সুযোগ।এই প্রসজ্ঞে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
"
﴿مَتَاعٌ قَلِيلٌ ثُمَّ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ۚ وَبِئْسَ الْمِهَادُ﴾
এটা নিছক কয়েক দিনের জীবনের সামান্য আনন্দ ফূর্তি মাত্র ৷ তারপর এরা সবাই জাহান্নামে চলে যাবে, যা সবচেয়ে খারাপ স্থান৷ "
[সূরা আল ইমরানঃ১৯৭]
আমরা যদি এই ভোগ-বিলাসীতা ,খারাপ কাজ থেকে বিরত থেকে কুরআন -সুন্নাহ মোতাবেক আমাদের জীবন পরিচালনা করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হই তাহলেই আমরা আমাদের আসল গন্তব্যে পৌছেঁ যাব।আমাদের সৌভাগ্য যে আমারা এখনও বেঁচে আছি।একটু ভেবে দেখুন আপনাদের নিকট আত্বীয়-স্বজন ,বন্ধু-বান্ধব যারা জীবিত নেই তাদের কথা স্বরণ করুন,তারাও আমাদের মত আনন্দ-ফূর্তি করত,ধন-দৌলত এর লোভ ছিল।তারা কই এখন?
তাদের অবস্থা কি?......আপনি কি জনেন?...তাদের কবরে কি হছে?আমাদের মনকে আমারা জিজ্ঞেস করি আমরা কি ওই কবরে যেতে প্রস্তুত?
আপনার মনকে আপনি এই প্রশ্ন করুন উত্তর পেয়ে যাবেন।আমাদের একটু ধৈর্যশীল হয়ে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে আখিরাতের প্রস্তুতি নেবার মাঝেই এই জীবনের মূল উদ্দেশ্য সাধিত হবে।কুরাআনে আল্লাহ বলছেনঃ
"
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ﴾
হে ঈমানদানগণ! ধৈর্যের পথ অবলম্বন করো, বাতিলপন্থীদের মোকাবলায় দৃঢ়তা দেখাও, হকের খেদমত করার জন্য উঠে পড়ে লাগো এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাকো৷ আশা করা যায়, তোমরা সফলকাম হবে৷"
সর্বশেষে আল্লাহ তা'আলা আমাদের সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন...।আমিন...।।
বিষয়: বিবিধ
১১২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন