হুজুরদের জন্য তাবিজের ব্যবসাই ভালো

লিখেছেন লিখেছেন মোস্তফা মোঘল ২২ মে, ২০১৩, ০৫:৫৪:১৪ বিকাল



ছোট বেলা থেকে দেখছি এলাকার হাফেজি এবং কওমি মাদরাসার শিক্ষকরা মূলতঃ ইমামতি, বিয়ে পড়ানো, ঝাড়-ফুঁক আর তাবিজের কারবার করে থাকেন। ইসলাম বা মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোন কর্মকান্ডই তাদের নাড়া দিতোনা। একপর্যায়ে এসে পরিস্থিতি পাল্টে গেল। বহুভাগে বিভক্ত হলেও দেশের আলেম সমাজের বড়ো অংশ ইসলামের জন্য রাজপথে নামলেন। হাফেজি হুজুর থেকে শুরু করে মুফতি আমিনী এবং সর্বশেষ আল্লামা শফি আলেমদের প্রতিবাদী হয়ে উঠতে সাহস যুগিয়েছেন। মসজিদ, মাদরাসা থেকে আলেমদেরকে রাজপথে নামাতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও অনভিজ্ঞতার কারনে আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয় এখনো আসেনি।

হেফাজতে ইসলাম ১৩ দফা নিয়ে রাজপথে নামার পর থেকেই যে প্রশ্ন উঁকি মারছিল যে কওমি আলেমরা কার পক্ষে মাঠে নামলেন? ১৩ দফার মাধ্যমে তারা কার স্বার্থ রক্ষা করতে চান? অনেকের মত আমারও সন্দেহ ছিল হেফাজতের এই আন্দোলন মূলতঃ জামায়াতে ইসলামীর অগ্রযাত্রা থামানোর সরকারি কৌশল। যেহেতু কওমি আলেমদের সাথে জামায়াতের দূরত্ব রয়েছে সুতরাং দুই পক্ষকে মুখোমুখি করা গেলে অনেক বড় সুফল ঘরে তুলতে পারবে সরকার। সে চেষ্টাও তারা করেছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে একপর্যায়ে হেফাজতের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হয়ে যায় সরকারের। বিরোধী জোট কৌশলে হেফাজতকে কাছে টানতে সক্ষম হয়। সেই সাথে হেফাজত ও সরকারের মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয়। এমনকি নাস্তিকদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত হেফাজতের আন্দোলন সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিনত হয়। ৫ মে গভীর রাতের নির্মমতার মাধ্যমে হেফাজত আন্দোলনের চাপ্টার ক্লোজ করে দেয় সরকার। প্রথম দফায় সরকার হেরে গেলেও শেষটায় পুর্ন পয়েন্ট পেয়ে জিতে গেছে সরকার। যে লক্ষ্যকে সামনে রেখে হেফাজতকে তারা মাঠে নামিয়েছিল সেই লক্ষ্য শতভাগ পূর্ণ হয়েছে জুনাইদ বাবুনগরীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির মাধ্যমে। বাবুনগরীকে আদালতে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করেছে সরকার এসবকিছুর মূলে ছিল জামায়াত-শিবির আর ১৮ দলীয় জোট। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নিই ১৮ দল হেফাজতকে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছে, জামায়াত-শিবির লোক দিয়ে সহযোগিতা করেছে তারপরেও সংগঠনের মহাসচিব হিসেবে কীভাবে বাবুনগরী এসব স্বীকার করলেন? ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রিয় সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে সুস্থ্য অবস্থায় গ্রেফতারের পর এখন তাকে কোলে করে আদালতে নিতে হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মেরে তার শরীরের প্রতিটি হাড় হাড্ডি গুড়া করে দিয়েছে। তারপরেও তিনি সংগঠনের ক্ষতি হয় এমন কোন তথ্য তাদের দেননি। এটাইতো ঈমান। এটাইতো ঈমানদারের পরিচয়। অথচ বাবুনগরী সাহেবকে একটা টোকাও দেয়নি কেউ। তার চেহারার কোথাও নির্যাতনের চিহ্ন নেই। তারপরেও তিনি এমন কিছূ তথ্য আদালতে স্বীকার করলেন যা কেবল মাত্র তার নিজের বা হেফাজতে ইসলামের নয়; গোটা আলেম সমাজের মাথা নিচু করেছে। পুলিশের পিটুনি যদি এতোই ভয় করেন তাহলে আন্দোলনে নামলেন কেন? কে বলেছিল অঅপনাদের বড়ো বড়ো কথা বলতে? আপনারাতো ইসলামের জন্য জীবন দিতে চেয়েছিলেন তাহলে এতো অল্পতেই ভয় পান কেন? ঈমানী চেতনা এতো দূর্বল কেন?

জুনাইদ বাবুনগরীর এই অবস্থার প্রেক্ষিতে অনেকেইে বলতে শুরু করেছেন, এইসব হুজুরদের দিয়ে ঝাড়-ফুঁক আর তাবিজের ব্যবসা ছাড়া আর কিছুই হবেনা। এরা যতই তর্জন, গর্জন করুক পুলিশের লাঠি দেখলেই এদের পায়জামা মেখে যায়। সুতরাং ইসলামী বিপ্লবের জন্য এইসব ভীতু আলেমদের দিকে চেয়ে কোন লাভ হবেনা। বরং যাদের মুখে দাড়ি নেই, মাথায় টুপি নেই, পরনে লম্বা জুব্বা নেই সেইসব তরুণরাই পারবে বিপ্লব আনতে। আমরা তাদের পথ চেয়েই রইলাম।

বিষয়: বিবিধ

১১৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File