হেফাজতের চুপসে যাওয়া বনাম বিএনপির কঠোর আন্দোলন!
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তফা মোঘল ১৩ মে, ২০১৩, ০৪:৫৫:০৯ বিকাল
লাক্ষ লক্ষ মানুষ রাজধানীতে জড়ো করে দুনিয়াব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী হেফাজতে ইসলাম একরাতে মাত্র ১০ মিনিটের অপারেশনে যেভাবে চুপসে গেছে তাতে ঘরে বাইরে নানান জনে নানান কথা বলছেন। কেউ বলছেন হুজুরদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাবে যেমন ৫ই মে মধ্যরাতে ভয়াবহ পরিনতি হয়েছে, তেমনি একই কারনে পরবর্তীতে তারা আর কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি। হেফাজতে ইসলাম কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয় এটা সবারই জানা। আবার হেফাজতের কেন্দ্রিয় নেতাদের অনেকেই রাজনীতির ময়দানে সেয়ানা খেলোয়াড় সেটাও আমরা জানি। তাহলে এতো বড়ো একটা সংগঠন হঠাৎ নিভে গেল কেন? তারা কি সরকারের কঠোর অবস্থানের কাছে নতিস্বীকার করলেন? নাকি নিরাপত্তা বাহিনীর বুলেট তাঁদের ঈমানী জজবা কমিয়ে দিলো? কোন মুসলমান সরকারের ভয়ে ঈমানী চেতনা থেকে বিচ্যুৎ হবেন সেটা আমি বিশ্বাস করিনা। হেফাজতে ইসলামের একজন নেতা-কর্মি এমন হতে পারেন আমি কখনোই বিশ্বাস করতে চাইনা। তবে, হেফাজতের বর্তমান অবস্থানেরও বিপক্ষে আমি। যেই নাস্তিকদের ফাঁসির দাবিদে লাখ লাখ তৌহিদী জনতা বুকের রক্ত দিতে রাজপথে নেমে এলো সেই নাস্কিরা এখন প্রকাশ্যে উল্লাস করছে। সরকার তাদের জামাই আদরে জামিনে মুক্তি দিয়েছে। এই মুহুর্তে ঘরে বসে থাকা কোন মুসলমানের জন্য শোভনীয় নয়। হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মিদের জন্য তো নয়ই। তারপরও মুহতারাম হুজুর সাহেবরা চুপ করে আছেন কেন? কি ভয় তাঁদের? নাকি সরকারের সাথে গোপন সমঝোতার যে গন্ধ বাতাসে ছড়িয়েছে সেটাই ঠিক?
এবার আসি বিএনপির কথায়। ৪ মে মহাসমাবেশ থেকে বেগম খালেদা জিয়া সরকারকে দাবি মেনে নিতে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিলেন। সবাই ভাবলো এবার বুঝি বিএনপি কঠোর আন্দোলনের পথে এগুচ্ছে। পরদিন হেফাজতে ইসলামের অবরোধ। মধ্যরাতে বেগম জিয়া দলীয় নেতাকর্মিদের রাজপথে নেমে হেফাজতের পাশে দাঁড়াতে বললেন। ফলাফল কি হয়েছিল গোটা জাতি তা জানে। এই ঘটনার পর থেকেই জনমনে কৌতুহল বিএনপি নেত্রী তাহলে আল্টিমেটামের পর কি কঠোর কর্মসূচি দিচ্ছেন? এরই মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ সিনিয়র বেশ কয়েকজন নেতা জামিনে মুক্তি পেলেন। সবাই ধারনা করলেন সরকারের সাথে সমঝোতা করেই হয়তো নেতারা বেরিয়ে এলেন জেল থেকে। নতুন কোন কর্মসূচি ঘোষনা না করায় সন্দেহ সংশয় বাড়তে থাকলো। এরই ফাঁকে ১৩ মে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের ঘোষনা দেয়া হর। বলা হল এই সমাবেশ থেকে সরকার পতনের কঠোর কর্মসূচি ঘোষনা করা হবে। আজ সেই সমাবেশের অনুমতি দেয়নি সরকার। ফলে সমাবেশ স্থগিত করা হল। সবাই নিশ্চিত ছিলেন সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার প্রতিবাদে কমপক্ষে দুই দিনের হরতাল আসছে! কিন্তু সবাইকে অবাক করে বিএনপি ঘোষনা করলো তারা বুধবার সমাবেশ করবে। বিএনপি কি নিশ্চিত সরকার বুধবার সমাবেশ করতে দিবে? যদি বুধবার সমাবেশের অনুমতি না দেয়া তাহলে কি করবে বিএনপি? হরতাল ডাকবে নাকি পরের দিন সমাবেশের ঘোষনা দিবে? সাম্প্রতিক সময়ের বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে নিশ্চিত হওয়া যায় সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর কোন আন্দোলন করার ক্ষমতা তাদের নেই। জামায়াত-শিবিরের সহায়তায় ঢাকায় অনেক বড়ো সমাবেশ করলেও বিএনপি নিজের শক্তি দিয়ে কোনকিছু করতে অক্ষম সেটা প্রমানিত। গুজব শোনা যাচ্ছে- বিএনপির সিনিয়র নেতাদের অনেকেই সরকারের দালালী করছেন। তারাই বেগম জিয়াকে ভুল বুঝিয়ে কটোর আন্দোলনের পথ থেকে সরিয়ে আনছেন। যদি সত্যিই তাই হয় তাহলে এই বিএনপিকে দিয়ে আওয়ামী দুঃশাসনমুক্ত দেশ গড়া মোটেও সম্ভব নয়।
বিষয়: বিবিধ
১১৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন