ফুলির সবুজ
লিখেছেন লিখেছেন মনেরকথা ২৫ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:৫২:২৪ দুপুর
সকাল সাড়ে সাতটা।ফুল তাড়াতাড়ি করে ছয় বছরের ছেলে সবুজকে খাইয়ে
বেরিয়ে পড়ে অফিসের উদ্দেশ্যে।আটটার মধ্যে পৌঁছাতে না পারলে একদিনের বেতন কেঁটে নেবে গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ।সবুজ পেছন থেকে ডেকে বলে মা আমার জন্য একটি লাটিম কিনে আনবেন।
ফুলি ব্যস্ত ভাবে বলে,ঠিক আছে বাবা যদি সময় হয়।
সবুজ জেদের সাথে বলে,লাটিম না আনলে বাসায় উঠতে দেব না,এই বলে রাখলাম।
ফুলি কোন জবাব না দিয়ে দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
অফিসের সামনের একটি দোকানের দিকে চোখ পড়তেই দেখে বেশ কয়েকটি লাটিম ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।সেখান থেকে দুটি লাটিম পঞ্চাশ টাকা দিয়ে কিনে ব্যাগে রেখে অফিসের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।সেখানে হাজার হাজার শ্রমিক দাঁড়িয়ে আছে।আগের দিনে অফিসের পিলারে ফাটল ধরায় তারা কাজে যোগদান না করার অভিমত ব্যক্ত করে।কর্তৃপক্ষ বেতন কেঁটে নেওয়ার ভয় দেখায়।একান্ত বাধ্য হয়ে তারা যার যার অবস্থানে গিয়ে কাজে যোগদান করে।আচমকা বিকট শব্দে ভবনটি কেঁপে ওঠে।কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রচন্ড ঝাঁকুনি দিয়ে ভবনটি ভেঁঙ্গে পড়ে।কয়েক মিনিটের মধ্যে
প্রায় পুরো ভবনটি মাটির সাথে মিশে যায়।আটকে পড়া শ্রমিকদের আত্নচিৎকার ও হাহাকারে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।বাঁচাও বাঁচাও।দম বন্ধ হয়ে
আসছে।গলা শুঁকিয়ে আসছে।পানি দাও। পানি খাব এ ভাবে ধসে যাওয়া
ভবনের ভেতর থেকে বাঁচার আকুতি জানায় আটকে পড়া অসংখ্য শ্রমিক।
তাদের বাঁধভাঙ্গা আর্তনাদ আর আহাজারিতে ছুটে আসে চারপাশের লোকজন,আর্মি,পুলিশ,বিডিয়ার,দমকল বাহিনী ও অন্যান্য সবাই।তাদের
সম্মিলিত প্রয়াসে শুরু হয় উদ্ধার কার্য।ততক্ষণে চারিদিক থেকে জড় হতে
থাকে শ্রমিকদের স্বজনেরা।হাজার হাজার মানুষের বুকফাটা কান্নায় এক
মর্মন্তুদ দৃশ্যের অবতারনা করে।
কেউ খুঁজছে মাকে,কেউ ছেলেকে আবার কেউ এসেছে স্বামীর খোঁজে।কোন
কোন স্বামী এসেছে স্ত্রীর খোঁজ নিতে।ভাই এসেছে বোনের খোঁজে,বোন ভাইয়ের।তাদের শোকাতুর মন পাথরকেও গলিয়ে দিচ্ছে।কে দেবে কাকে সান্তনা। সবাই যে স্বজনহারা।উদ্ধারকর্মীরা প্রানন্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে কাউকে জীবিত উদ্ধার করছে কাউকে বা মৃত।জীবিতদের সাথে সাথে হাসপাতাল পাঠিয়ে দিচ্ছে চিকিৎসার জন্যে।চতুর্থ তলার ধ্বংসস্তুপ সরানোর সময় দেখা গেল সেলাই মেশিনের উপর পড়ে আছে একটি লাশ।লাশটি তুলতে গিয়ে দেখা গেল দুটি লাটিমের ফলা তার
কপালের ভেতরে ঢুকে গেছে।
সবুজ আশায় বুক বেঁধে আছে,তার মা লাটিম নিয়ে আসবে,সেই লাটিম দিয়ে
সে বন্ধুদের সাথে খেলবে।
ছয় বছরের সবুজকে কে বোঝাবে,তার মা আর কোন দিন ফিরে আসবে না।
তাকে খাইয়ে দেবে না,আদর করে আর কোনদিন কোলে তুলে নেবে না।সে যে চলে গেছে না ফেরার দেশে।সেখান থেকে কোন দিন ফিরে আসা যায় না।
বিষয়: সাহিত্য
১৩২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন