রোযার উপকার / فوائد الصيام

লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল আলীম ০২ জুলাই, ২০১৩, ০২:৩৪:১৬ দুপুর

রোজা আত্মশুদ্ধির এক অপূর্ব মাধ্যম এবং আল্লাহ্ ভীতি অর্জনের সর্বোত্তম পন্থা।

}يآ أيّهَا الّذِيْنَ آمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلّكُمْ تَتَّقُوْنَ{ আল্লাহ্ ত’ায়ালা বলেন-

অর্থঃ “হে ঈমানদারগণ ! তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যাতে করে তোমরা আল্লাহ্ ভীতি অর্জন করতে পার”। (আল বাক্বারা: ১৮৩)

( রোজা জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢাল স্বরুপ। (বুখারী ও মুসলিম *

*রোযার মধ্যে সাস্থ্যের জন্য খুবই উপকার রয়েছে। রোযায় রয়েছে শরীরের ওজন বৃদ্ধি, হ্যাপাটাইটিস, জন্ডিস, প্লীহা , যকৃৎ, বদহজম প্রভৃতি রোগের জন্য উপকারিতা।

* রোযা গরীব-মিসকিনদের দুঃখ দুর্দশা বুঝতে ও উহা লাঘবে এগিয়ে আসতে ধনীদেরকে উৎসাহ যোগায়।

* রোযা রোযাদারের মনে ধৈর্য ও সহনশীলতা সৃষ্টি করে। কষ্টে ধৈর্য ধারণ ও সহনশীলতা অবলম্বন করতে অভ্যাসী বানায়।

রোযা রোযাদারকে ঐসব কুঅভ্যাসের দাসত্ব থেকে মুক্তি দান করে যে সকল অভ্যাস তাদের মানসিক দুশ্চিন্তা ও ব্যাধির একমাত্র কারণ। সেই সকল রোযাদারগণ যারা ধুমপানে অভ্যাসী; যাদের অবৈধ বিড়ি-সিগারেট ছাড়া ৩০ মিনিটও অতিবাহিত হয় না, অথবা তা পান না করা পর্যন্ত পায়খানাও হয় না, যারা দৈনিক ১ প্যাকেট সিগারেট পান করে তাদের ৫০ বছরের জীবনে প্রায় ১ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা এবং ১৫২০৮ ঘন্টা ২০ মিনিট সময় অপচয় হয় , তাদের উচিৎ রোযার এই পবিত্র অবসরে এই শ্রেণীর “বিষপান” চিরদিনের জন্য পরিত্যাগ করা । কারণ এ “সুখটান” এমন “অগ্নিপান” যে ইহা মানুষের সুসাস্থ্য, দেহ, অর্থ, দ্বীন-দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য বড় ক্ষতিকর । যে মানুষ ১২/১৩ ঘন্টা আল্লাহর ওয়াস্তে তা বর্জন করে থাকতে পারে , সে মানুষ আল্লাহরই ভয়ে বাকী সময় পান না করলেও থাকতে পারবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে কোন জিনিষ বর্জন করবে, সে ব্যক্তি আল্লাহর ইচ্ছায় তার চেয়ে উত্তম জিনিষ অর্জন করবে, এটাই হল আল্লাহর রীতি। পরন্তু ইহা কোনক্রমেই উচিৎ নয় যে, রোযাদার সারাদিন হালাল জিনিষ না খেয়ে রোযা রেখে পরিশেষে হারাম জিনিষ দিয়ে রোযা খুলবে।

* আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৮৩ সনের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে , বর্তমান বিশ্বে সিগারেট ক্রয়ের পার্পাসে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় উহার (⅔) দুইতৃতীয়াংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা হলে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যগত প্রয়োজনীয়তা পুরণ করা অবশ্যই সম্ভবপর হবে।

* আন্তর্জাতিক সাস্থ্য সংস্থার আরেকটি রিপোর্টে বলা হয় যে, ধুমপানের অপকারিতায় বছরে আমেরিকাতেই প্রায় (৩,৪৬০০০) তিনলক্ষ ছেচল্লিশ হাজার ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে থাকে। তেমনি চীনে প্রায় (১,৪০০০০) একলক্ষ চল্লিশ হাজার, ব্রিটেনে ( ৫৫,০০০) পঞ্চান্ন হাজার, সুইডেনে (৮,০০০) আট হাজার এবং অনুরুপ সারাবিশ্বে (২৫,০০০০০) পঁচিশ লক্ষ মানুষ প্রত্যেক বছর মৃত্যুর কলে ঢলে পড়ে।

* চীনের সাঙ্গাহাই শহরের এক মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়েছে যে , সেখানে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত ৬৬০ জনের ৯০ ভাগই ধুমপায়ী।

*কেউ দৈনিক ২০ টি সিগারেট পান করলে তার শরীরে শতকরা পনেরো ভাগ হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দেয়।

* বিড়ি সিগারেটের শেষাংশ প্রথমাংশের চেয়ে তুলনামূলক বেশি ক্ষতিকারক।

* লজ্জাজনক বিষয় এই যে, চতুষ্পদ জন্তুর সামনে তামাক রাখা হলে ওরা তা খেতে চায়না ; অথচ মানুষ খুব সহজেই তা দৈনিক প্রচুর পরিমাণে গলধঃকরণ করে থাকে।

অতএব, যে মানুষ ১২/১৩ ঘন্টা আল্লাহর ওয়াস্তে ধুমপান বর্জন করে থাকতে পারে, সে মানুষ আল্লাহরই ভয়ে বাকী সময় পান না করলেও থাকতে পারবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে কোন জিনিষ বর্জন করবে, সে ব্যক্তি আল্লাহর ইচ্ছায় তার চেয়ে উত্তম জিনিষ অর্জন করবে, এটাই হল আল্লাহর রীতি। পরন্তু ইহা কোনক্রমেই উচিৎ নয় যে, রোযাদার সারাদিন হালাল জিনিস না খেয়ে রোযা রেখে পরিশেষে হারাম বস্তু দিয়ে রোযা খুলবে। (মাজমু’ ফাতাওয়া ,কাবায়ের ও ফিকহুস সুন্নাহ )

উল্লেখ্য যে, কুরআনুল কারীমের প্রায় ১৭ টি আয়াতে এবং রাসূল  এর একাধিক হাদীসে মাদকদ্রব্য-ধুমপান হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে।

ماذا على الصائم

রোযাদারের কর্তব্য

১. রোজ এবং অন্যান্য যে কোন ইবাদত কবুল হওয়ার প্রধান শর্ত নিয়্যাতের বিশুদ্ধতা ও ইখলাস । আল্লাহ্ তায়ালা বলেন-

}وَمَا أُمِرُوْا إِلاَّ لِيَعْبُدوُا اللَّهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ{

অর্থঃ“তাদেরকে এ ছাড়া আর কোন নির্দেশ দেওয়া হয়নি যে,তারা খাটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে”।(বাইয়্যেনাহ-৫)

এজন্য রোজাদারের উচিৎ একান্ত আল্লাহর উদ্দেশ্যে রোজা রাখা,লোক দেখানো বা কাউকে খুশী করার জন্য যেন না হয়।

২. অনেকেই রোজা রাখে কিন্তু নামায পড়েনা মূলতঃ এ রোজা দুনিয়া ও আখেরাতে এই ব্যক্তির কোন কল্যাণে আসবেনা। কারণ অধিকাংশ ইমামদের মতে “ ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগকারী ঈমানের গন্ডি থেকে বেরিয়ে যায় ” আর যে ব্যক্তি ঈমানের গন্ডি থেকে বেরিয়ে যায় তার কোন আমলই আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় নয় । এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেন-

}وَقَدِمْنَا إلَى مَا عَمِلُوْا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبـَاءً مَّنْثُوْرًا{

অর্থঃ “ আমি তাদের আমলের দিকে মনোনিবেশ করলাম অতঃপর উহাকে ধুলিস্মাৎ করে দিলাম ”। (আল-ফুরকানঃ২৩)

নামায ত্যাগকারী যে দীনের গন্ডি থেকে বেরিয়ে যাবে এর দলীলঃ- আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেন-

}فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوْا الصّلاَةَ وَاتَّبَعُوْا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيّاً,إلاّ مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فأُولَئكَ يَدْخُلوْنَ الْجَنَّةَولايُظْلَمُونَ شَيْئًا{

অর্থঃ “ অত:পর তাদের পর সেই অযোগ্য-অপদার্থ লোকেরা তাদের স্থলাভিষিক্ত হল যারা নামাযকে নষ্ট করল আর মনের লালসা-বাসনার অনুসরণ করল । অতএব অচিরেই তারা গুমরাহীর পরিণামের সম্মুখীন হবে। অবশ্য যে, তাওবা করবে ঈমান আনবে ও নেক আমল করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের উপর কোন প্রকার জুলুম করা হবে না”। (মারইয়াম ঃ ৫৯-৬০)

} فَإِنْ تَابُوْا وَ أَقَامُوْا الصَّلاَةَ وَ آتَوُا الزّكَاةَ فَخَلّوْا سَبِيْلَهُمْ{ আল্লাহ্ তা’য়ালা আরো বলেন -

অর্থঃ “আর তারা(মুশরিকরা)যদি তাওবা করে আর নামায কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে,তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও”। (তাওবাঃ৫) }فَإِنْ تَابُوْا وَ أَقَامُوْا الصَّلاَةَ وَ آتَوُا الزّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدّيْن{ِ আল্লাহ্ তা’য়ালা আরো বলেন -

অর্থঃ“আর তারা (মুশরিকরা) যদি তাওবা করে আর নামায কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে,তাহলে তারা তোমাদের দীনি ভাই ”। (তাওবা ঃ ১১)

রাসূল  বলেন- ( العَهْدُ الَّذِيْ بَيْنَا وَ بَيْنَهُمْ الصّلاَةُ فَمَنْ تَرَكَ فَقَدْ كَفَرَ)

“আমাদের মাঝে আর তাদের (কাফেরদের) মাঝে অঙ্গিকার নামাযের, সুতরাং যে নামায ছেড়ে দিল সে কুফরী করল”। (আসহাবুস সুনান)

( كان أصحاب رسول الله لا يرون شيئا من الأعمال تركه كفرغير الصلاة) আব্দুল্লাহ্ বিন শাকীক আল্ উকাইলী (রহিমাহুাল্লাহ্) বলেন-

“ রাসূল  এর সাহাবাগণ নামায ব্যতীত অন্য কোন আমল ত্যাগ করাকে কুফরী মনে করতেন না , অর্থাৎ শুধূ নামায ত্যাগ করাকেই কুফরী মনে করতেন ”। (তিরমিযি ও হাকিম)

মুআত্তা মালেক ও বায়হাক্বী)) “যে নামায ছেড়ে দিল ইসলামে তার কোন অংশ নাই ”لا حظ في الإسلام لمن ترك الصلاة উমার  বলেন -

৩. রোজাদারের উচিৎ অশ্লিল কথা-বার্তা, কাজ-কর্ম, গান, বাদ্য, পরনিন্দা, গীবত, হিংসা-বিদ্বেষ, মিথ্যা ইত্যাদী কাজ-কর্ম পরিহার করা। রাসূল  বলেন-“যে ব্যক্তি মিথ্যাকথা, কাজ-কর্ম পরিহার করল না, তার পানাহার ত্যাগ করা আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই”। (বুখারী)

রাসূল  আরো বলেন -“রোযার দিন তোমাদের কেউ যেন অশ্লিল কথা-বার্তা বা শ্রুতিকটু বাক্য ব্যবহার না করে ”। (বুখারী ও মুসলিম)

بنغالي ২

فضائل صوم رمضان

রোযা ও রমাজান মাসের ফজিলত

১. এই মাসেরই এক শ্রেষ্ঠ রজনীতে আল্লাহ্ তা’য়ালা মহাগ্রন্থ আল-কুরআন নাযিল করেন। আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেন-

} অর্থঃ “ রমাজান ঐ মাস যে মাসে আল্-কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে ”। (বাক্বারা ঃ ১৮৫) شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيْهِ القُرْآن{

} অর্থঃ“নিশ্চয় আমি ক্বদরের রাত্রিতে আল্-কুরআন নাযিল করেছি”। (ক্বদর ঃ ১)إِنّا أَنْزَلْنَاه فِيْ لَيْلَةِ القَدْر{ِ আল্লাহ্ তা’য়ালা আরো বলেন-

২. এ মাসের মধ্যেই রয়েছে ক্বদরের রাত যে রাতের ইবাদাত হাজার মাসের ইবাদাত হতেও উত্তম।

} অর্থঃ “ ক্বদরের রজনী হাজার মাসের চাইতে উত্তম ”। (ক্বদর ঃ৩) لَيْلَةُ القَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْر{ٍ আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেন-

৩. এ মাসেই বদরের যুদ্ধের মাধ্যমে ইসলামের বিজয়ের সূচনা হয় এবং এ মাসেই মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে ইসলাম বিজয়ী দ্বীন হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নেই যার ফলে পরবর্তীতে দু’শতকের মধ্যে মুসলমানরা অর্ধ পৃথিবী শাসন করতে সক্ষম হয়।

৪. এ মাসেই আল্লাহ্ তা’য়ালা জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেন এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেন, আর শায়ত্বানকে শৃংখলা বদ্ধ করে রাখা হয় । ( বুখারী ও মুসলিম )

৫. এ মাসেই আল্লাহ্ তা’য়ালা প্রত্যেক রাতে অসংখ্য মানুষকে জাহন্নাম থেকে মুক্তি দান করেন । রাসূল  বলেন - রমাজানে একজন ঘোষণাকারী ফিরিশ্তা ঘোষণা দিয়ে থাকেন ! হে কল্যাণকামী , দ্রুত কল্যাণের পথে এগিয়ে আস আর হে পাপ অন্বেষণকারী পিছে হঠ। আর রমাযানে প্রত্যেক রাতে আল্লাহ্ তা’য়ালা অনেককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন ”। (সহীহ ইবনে মাজাহ্ )

৬. এ মাসে প্রত্যেক আমলকে দশ থেকে সাত শ’ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয় । বিশেষ করে রোজার প্রতিদান আল্লাহ্্ নিজেই দান করেন । হাদীসে কুদসীতে এসেছে ঃ আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেন- “বনী আদমের প্রত্যেক নেক আমলের প্রতিদান দশ থেকে সাত শত গুণ বৃদ্ধি করা হয় কিন্তু রোজা ছাড়া; কেননা নিশ্চয় উহা একমাত্র আমার জন্য আর আমি নিজেই উহার প্রতিদান দান করব”। ( বুখারী ও মুসলিম )

৭. ঈমান ও নেকী লাভের উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি রোজা পালন করবে আল্লাহ্ তা’য়ালা তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন।

( مَنْ صَامَ رَمضانَ إِيْمانًا وَ احْتِسابًا غُفِرَ لَهُ ما تَقدَّمَ مِنْ ذَنْبِه ) রাসূল  বলেন-

“যে ব্যক্তি ঈমান রেখে এবং সওয়াবের আশায় রমাযানের রোযা রাখবে তার পৃর্বের সমস্ত পাপ মার্জনা করা হবে”। ( বুখারী ও মুসলিম )

৮. যে ব্যক্তি রোযা রেখে প্রতিনিয়ত তারাবীর নামায আদায় করবে তার পৃর্বের সমস্ত পাপ মার্জনা করা হবে।

রাসূল  বলেন - “যে ব্যক্তি ঈমান রেখে এবং সওয়াবের আশায় ক্বিয়ামুল লাইল তথা রাত্রীর (তারাবীহ) নামায পড়বে তার পৃর্বের সমস্ত— পাপ মার্জনা করা হবে”। ( বুখারী ও মুসলিম )

৯. আল্লাহ্ তা’য়ালা “আর-রাইয়ান” নামক জান্নাতের এটি দরজাকে শুধুমাত্র রোযাদারদের প্রবেশের জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন।

১০. রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ্ ্ তা’য়ালার নিকট মিশ্কে - আম্বারের চেয়েও অধিক সুগন্ধময়।

১১. রোযাদারের দু’আ বিশেষভাবে ক্ববুল করা হয়। রাসূল  বলেন- “তিন শ্রেণী মানুষের দু’আ সঙ্গে সঙ্গে ক্ববুল করা হয় ১. রোযাদারের দু’আ ২.অত্যাচারিত ব্যক্তির দু’আ এবং ৩.মুসাফিরের দু’আ ”। (বায়হাক্বী )

১২.হুযায়ফা  বলেন আমি রাসূল  কে বলতে শুনেছি যে, “ মানুষের পরিবার , ধন-সম্পত্তি ও প্রতিবেশীর ব্যাপারে ঘটিত বিভিন্ন ফিত্না ও গুনাহের কাফ্ফারা হলো নামায, রোযা ও সদ্কাহ্ ”। ( বুখারী ও মুসলিম )

১৩.আবু হুরায়রাকর্তৃক বর্ণিত, রাসূল  বলেন-“রোযা জাহান্নাম থেকে রক্ষার জন্য ঢাল ও দুর্ভেদ্য দুর্গ স্বরুপ। (আহমাদ ও বায়হাকী)

১৪. রাসূল  বলেন-“ কিয়ামতের দিন রোযা এবং কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে ---- নবী  বলেন , অতএব ওদের উভয়ের সুপারিশ গৃহীত হবে”। (মুসনাদ আহমাদ ও ত্ববারানী )

( العُمْرةُ فيِ رَمضانَ تَعْدِلُ حَجّة أو حجّةً مَعِي ) ১৫. রমাযান মাসে ওমরা করার সওয়াব হজ্জের সমান । রাসূল  বলেন-

অর্থাৎঃ “রমাযানের ওমরা একটি হজ্জ অথবা আমার সাথে একটি হজ্জ করার সমতুল্য” । ( বুখারী ও মুসলিম )

آداب الصيام

:রোযার বিশেষ আদব :

لَيْسَ الصِّيامُ مِن الأكلِ و الشُّرْبِ إِنَّما الصيّامُ مِن اللَّغْوِ و الرَّفث فإِنَّ سابَّكَ أَحَدٌ أو جهِل عَليْكَ فَلْتَقُلْ إنيِّ صائمٌ إنيِّ صَائِمٌ রাসূল ৎ বলেন -

“ রোযা শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকার নাম নয়, বরং অনর্থক এবং অশালীন কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার নাম হলো রোযা। সুতরাং কেউ যদি রোযাদারকে গালি দেয় অথবা মূর্খতাপূর্ণ আচরণ করে তখন সে যেন বলে, আমি রোযাদার, আমি রোযাদার”। (ইবনে খুযায়মা, সহীহ্)

উল্লেখ্য যে, রোযার কিছূ ওয়াজিব এবং মুস্তাহাব আদব রয়েছে।

ওয়াজিব আদব সমূহ নি¤œরুপ ঃ

১.রোযাদার সম্পূর্ণ রুপে মিথ্যা কথা ও কারবার হতে বিরত থাকবে। কেননা মিথ্যা সব সময় হারাম, সুতরাং রোযা রেখে উহা অধিক হতে অধিকতর হারাম।

২.পরনিন্দা-গীবত হতে রোযাদার বিরত থাকবে।

৩. চোগলখোর-কুটনা স্বভাব ত্যাগ করা। পরস্পরের মধ্যে ফিৎনা-ফাসাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একের কথা অপরের নিকট লাগিয়ে বেড়ানোকে চোগলখোরী বলা হয়। চোগলখোরী স্বভাব কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত।

৪. লেনদেন, বেচা-কেনা, শিল্পকারখানা, ভাড়া দেওয়া ইত্যাদী সর্বক্ষেত্রে ধোকাবাজী পরিত্যাজ্য।

৫.রোযাদার মিথ্যা বলা হতে বিরত থাকবে, কেননা উহা রোযা বিনষ্ট করার অন্যতম কারণ। রাসূল ৎ বলেন- যে ব্যক্তি রোযা রেখে মিথ্যা কথা এবং মিথ্যার উপর আমল পরিত্যাগ করতে পারলনা, সে রোযাদারের (সুবহে সাদেক্ব হতে সূর্যাস্থ— পর্যন্ত) পানাহার থেকে বিরত থাকা আল্লাহ্ ্ তায়ালার নিকট কোন উপকারে আসবেনা (বুখারী)

মুস্তাহাব আদব সমূহ হলো ঃ

১.রোযাদারের সাহ্রী খাওয়া সুন্নাত, কেননা রাসূল ৎ বলেন-“তোমরা সাহ্রী খাও কারণ সাহ্রীতে বরকত আছে”। (বুখারী ও মুসলিম)

২. সাহ্রী দেরীতে খাওয়া সুন্নাত, যা স্বয়ং রাসূল ৎ এর আমল দ্বারা প্রমানিত। বিশিষ্ট সাহাবী যায়েদ বিন ছাবেত ঃ হতে বর্ণিত তিনি বলেন- আমরা নবী ৎ এর সাথে সাহ্রী খেয়ে (ফজরের) স্বলাতের উদ্দেশ্যে রাওয়ানা হতাম, আনাস বিন মালেক ঃ যায়েদকে ঃ জিজ্ঞাসা করলেন “সাহ্রী খাওয়া এবং আযান দেওয়ার মাঝে কতটুকু সময়ের ব্যবধান ছিল ? উত্তরে যায়েদ ঃ বলেলন – কুরআনুল কারীম হতে ৫০ আয়াত পড়তে যতটুকু সময়ের প্রয়োজন হয়। ( বুখারী ও মুসলিম )

৩. ইফতার তাড়াতাড়ি করা সুন্নাত, কারণ রাসুল ৎ বলেছেন- মানুষেরা (মুসলমানরা) ততক্ষণ কল্যাণের মধ্যে অবস্থান করবে যতক্ষণ তারা তাড়াতাড়ি (সূর্য অস্তমিত হওয়ার পরক্ষণই) ইফতার করবে। (বুখারী ও মুসলিম )

৪.অনর্থক কথা-বার্তা বলা থেকে জিহ্বাকে সংরক্ষণ করা।

৫. আল্লাহ্ যা কিছূ হারাম করেছেন তা দর্শণ করা হতে চক্ষুকে অবনমিত রাখা, শরীরের অন্যান্য অঙ্গের ন্যায় চক্ষুকে ও সিয়ামব্রত পালন করতে হবে আর তাহলো হারাম বস্তু দর্শন হতে চক্ষুকে সংরক্ষণ করা।

৬. কুরআন তেলোয়াত, দোআ’, যিকির, নামায, সাদ্াক্বাহ্ ইত্যাদী ইবাদাত অধিকহারে করতে হবে।

ভ্রাতৃবৃন্দ ! রোযদারের রোযার আদব-শিষ্টাচার অলঙ্কৃত না হওয়া পর্যন্ত রোযার ফযীলত অনুধাবন করতে পারবে না। সুতরাং আমরা সকলেই যাতে আমাদের রোযার যথাযথ হিফাযত করার চেষ্টা করি। আর আমাদের কৃত অসৎ কর্মের জন্য আমরা সবাই মিলে আল্লহর নিকট তাওবাহ্ করি।



بنغالي৩

مفطرات الصيام

রোযা ভঙ্গকারী বিষয় সমূহ

১.ইচ্ছাকৃত পানাহার করা ঃ- যে কোন প্রকারের পানাহার, চায় সে পানাহারে উপকারী হোক কিংবা ক্ষতিকারক হোক যেমন- ধুমপান ইত্যাদীর দ্বারা রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

২. ইচ্ছাকৃত বমি করা ঃ- রাসূল  বলেন - “যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে বমি করবে তার উপর ক্বাযা ওয়াজিব হবে” । (হাকিম)

৩.মহিলাদের মাসিক স্রাব এবং নিফাস শুরু হলে ঃ- এমনকি ইফতারের কিছু মুহুর্ত পূর্বেও যদি হায়েজ-নিফাস শুরু হয় তবুও রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

৪. যেকোন পদ্ধতিতে বীর্য্যপাত ঘটালে ঃ- যেমন- হস্তমৈথুনের দ্বারা বা স্ত্রীকে স্পর্শ ও চুম্বনে বা যেকোন ভাবেই হোক জাগ্রতাবস্থায় বীর্য্যপাত ঘটালে রোজা বিনষ্ট হয়ে যাবে।

৫.রক্ত গ্রহন করলে ঃ- যেমন রোযাদারের যদি রক্তশুন্যতা দেখা দেয় যার ফলে ইনজেক্শনের মাধ্যমে রক্ত প্রয়োগ করা হলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।

৬. শিঙ্গা নিলে ঃ- রোযা অবস্থায় শিঙ্গা বা এ জাতীয় কিছু লাগিয়ে রক্ত বের করা ।

৭. এমন ইনজেক্শান গ্রহন করা যা খাবার স্বরুপ কাজ দেয় ঃ- যেমন ঃ স্যালাইন বা খাবার গ্লুকোজ ইনজেক্শান ইত্যাদি । এসমস্ত কাজ করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং পরবর্তীতে এ রোজা ক্বাযা করতে হবে ।

৮. স্ত্রী সহবাস ঃ রমাজানে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করলে এ কারণে রোজা ভঙ্গ হবে এবং ক্বাযা ও কাফ্ফারা উভয়ই ওয়াজিব হবে । এর কাফ্ফারা হল ঃ একজন মুমিন গোলাম আযাদ করা,তাতে সক্ষম না হলে লাগাতার ( একটানা) দু’মাস রোযা রাখা আর তাতেও যদি সক্ষম না হয় তাহলে ষাটজন মিসকিনকে খানা খাওয়ানো বা দান করা ।

উল্লেখ্য যে, মহিলার উপর রোযা ফরয সেই মহিলা সম্মত হয়ে রমাজানের দিনে স্বামী-সঙ্গম করলে তার উপরও কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে । অবশ্য তার ইচ্ছা না থাকা সত্বেও যদি স্বামী তার সাথে জোরপূর্বক তার সাথে সহবাস করতে চায় ,তাহলে তার জন্য যথাসাধ্য তা প্রতিহত করা জরুরী , অবশেষে অক্ষম হলে তার উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব নয় ,তবে উহা ক্বাযা আদায় করতে হবে ।

৯. বেহুশ হওয়া ঃ- রোযাদার যদি ফজর থেকে নিয়ে মাগরিব পর্যন্ত বেহুশ থাকে , তাহলে তার রোযা শুদ্ধ হবে না এবং তাকে ঐ দিনের রোযা ক্বাযা রাখতে হবে ।

مكروهات الصوم

সিয়াম অবস্থায় অপছন্দনীয় কার্যাবলী

সিয়াম ব্রত অবস্থায় কতিপয় কার্যাবলী রয়েছে যা মূলত সিয়াম বিনিষ্টকারী নয় বটে তবে কখনও কখনও সিয়াম বিনষ্টের নিকটবর্তী পৌঁছায়ে দেয়। সেহেতু ঐসকল কার্যাবলী হতে বিরতি থাকাই বাঞ্ছনীয়। তাই উহা চর্চা করা অছন্দনীয় বা মাকরুহ। আর উহা হলো ঃ-

১. অযুর সময় সীমাতিরিক্ত গড়গড়ায়ে কুলি করা এবং অধিক রুপে নাকে পানি দিয়ে পরিস্কার করা। কারন ইহাতে পানি ভিতরে প্রবেশের আশংকা থেকে যায়।

২. সিয়াম অস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন, আলিঙ্গন ইত্যাদি করা। কেননা এর ফলে বীর্যপাত বা সহবাসে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়ে যায়।

৩. স্ত্রীর দিকে বারবার উত্তেজনা সহ তাকানো। কেননা এতেও সহবাস সংঘটিত হওয়ার আশংকা বিদ্যমান।

৪. সিয়ামাবস্থায় বারবার সহবাসের চিত্র মস্তিস্কে উপস্থিত করা বা বিরতিহীন ভাবে সহবাসের খেয়াল ধ্যান করা।

৫. বিনা প্রয়োজনে তরল জাতীয় খাদ্যো স্বাদ গ্রহণ করা বা প্রয়োজনে বারবার কোন খাদ্যের স্বাদ আস্বাদান করা।

৬. থুথু, কাশি মুখে জমা করে গলাধ:করণ করা। অবশ্য সাধারণত: যেভাবে সামান্য সামান্য থুথূ বা কাশি মুখে এসে যায় তা গলাধ:করণে সিয়ামের কোন ত্রুটি হবেনা।- ইনশাআল্লাহ তায়া’লা-

৭. দিবসে টুথপেস্ট, মাজন বা টাটকা তরতাজা মেসওয়াক ব্যবহার করা। কেননা এর ফলে এগুলো বা এগুলোর রস ভিতরে চলে যেতে পারে। তবে যথাযথ সতর্কতা সহ ব্যবহারে কোন অসুবিধা নেই।- ইনশাআল্লাহ তায়া’লা-

ما لا يفطر الصائم

ঃ যে সমস্ত কারণে রোযা ভঙ্গ হবে না ঃ

১. যদি ভূলবশতঃ অথবা অজান্তে বা অনিচ্ছাসত্বে কোনকিছু খাওয়া বা পানকরা। রাসূল  বলেন- কোন ব্যক্তি রোজা রাখা অবস্থায় অজ্ঞাসারে কোনকিছু খায় বা পান করে সে যেন তার রোজা পূর্ণকরে কেননা আল্লাহই তাকে খাইয়েছেন বা পান করিয়েছেন।

( বুখারী ও মুসলিম )

২. অনিচ্ছাকৃত বুমি করা। রাসূল  বলেন-“ যার অনিচ্ছাকৃত বমি হয়েছে তার রোযা ক্বাযা করার প্রয়োজন নাই ”। (হাকিম)

৩. রোযা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে।

৪. রোগের কারণে উত্তেজনা ব্যতীত বীর্য্য নির্গত হলে ।

৫. স্বাভাবিক কারনে যে মযী বা তরল পদার্থ বের হয় এর কারণে রোজা ভঙ্গ হবে না ।

৬. স্ত্রীকে চুম্বন বা আলিঙ্গন করার কারণে রোজা ভঙ্গ হবে না । কিন্তু যে ব্যক্তি আতœসংযোমি নয় বরং চুম্বন বা আলিঙ্গনের কারণে উত্তেজিত হয়ে নিজকে সংবরন করতে পারবেনা তার জন্য স্ত্রীকে চুম্বন , আলিঙ্গন বা তার সাথে মাখামাখি কোনটিই

করা জায়েজ নয়। আয়েশা  থেকে বর্ণিত “রাসূল  রোজা থাকা অবস্থায় তাঁকে চুম্বন দিতেন”। (বুখারী ও মুসলিম )

৭. মুখের লালা গিললে রোজা নষ্ট হবেনা।

৮. নাক দিয়ে অথবা কাশির সাথে গলা দিয়ে সামান্য রক্ত বের হলে বা মেসওয়াক করার কারনে দাঁতের রক্ত বের হলে রোজার কোন ক্ষতি হবেনা।

৯. সেহরীর সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরও নাপাক জনিত বা ফরজ গোসল করতে বিলম্ব হলে রোজার কোন ক্ষতি হবেনা। তবে ফজরের নামায পড়ার জন্য অতিদ্রুত গোসল সেরে নিতে হবে। তেমনি মহিলাদের হায়েজ বা নিফাস ফজরের পূর্বে বন্ধ হলে রোজার নিয়্যত করে নিবে , কিন্তু ফরজ গোসল সেহরীর সময় পার হয়ে কিছুটা বিলম্ব হওয়াতে রোজার কোন ক্ষতি হবেনা।

১০.রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত দিলে রোজা ভঙ্গ হবে না ।

১১. হোঁচট খেয়ে শরীর কেটে গিয়ে সামান্য রক্ত বের হলে রোজার কোন ক্ষতি হবেনা।

১২. যে সব ইনজেক্শান পানাহারের বিকল্প নয় বরং চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় , যেমন ঃ ইনসুলিন , প্যানিসেলিন বা ভেক্সিন টিকা ইত্যাদির কারণে রোজার কোন ক্ষতি হবেনা। তবে সতর্কতার জন্য এ গুলো রাতে গ্রহন করা উত্তম।

১৩. গুহ্যদ্ব%

বিষয়:

২৪২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File