জীবনের চেয়ে ভাবমূর্তির মুল্য বেশি!!
লিখেছেন লিখেছেন আরিয়ান খান ২৯ এপ্রিল, ২০১৩, ১০:০১:০০ রাত
যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় স্তব্ধ সারা দেশ, স্তব্ধ পুরো জাতি, হতবাক সারা বিশ্ব... হ্যা সাভার ট্রাজেডির কথাই বলছি। আজ এই লেখাটি লিখতে গিয়ে হাতে কোন শক্তি পাচ্ছিনা, মাথা থেকে কিছু বের হচ্ছেনা, চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ দেখে ও সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুরো জাতির মত আমিও হয়ে গেছি স্তব্ধ। ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধারকাজে সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতাও করেছি, কিন্তু তারপরও বারবার মনে হয়েছে ওদের জন্য আমার এ ত্যাগের পরিমান অতি নগন্য। আরো বেশি কিছু যদি করতে পারতাম...। ঘটনার ভয়াবহতা এত বেশি ছিল যে কোন পদক্ষেপেই আমার অতৃপ্ত আত্বাকে শান্তি দিতে পাচ্ছিলাম না। বাসা থেকে বারবার আমার মায়ের ফোন আসছিল, কান্নাজড়িত কন্ঠে বারবার মা আমাকে বলছিল, `বাবা ওদেরকে উদ্ধারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা কর। আমি নামাজ পড়ে সবসময় ওদের জন্য দোয়া করছি।` মায়ের এই আদেশ আমার উতসাহকে আরো বাড়িয়ে দেয়। আমি উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করতে থাকি। আর মূল উদ্ধার কাজ পরিচালনা করে ফায়ার সার্ভিস। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবসহ অনান্য বাহিনী ও বিভিন্ন সংগঠন তাদেরকে সহযোগিতা করে। জনগনের ভূমিকাও এক্ষেত্রে কম নয়। উদ্ধার কাজে এত ততপরতা সত্বেও নিঁখোজের স্বজনরা উদ্ধারকাজ ধীর গতিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। উদ্ধার কাজের গতি নিয়ে তাদের অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে উদ্ধারকারী ব্যক্তিদের কোন দোষ ছিল না। বরং তারা নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে সর্বোচ্চ মেধা ও শক্তি দিয়ে তাদের অভিযান পরিচালনা করেছেন।
তবে সমস্যাটা কোথায় ছিল? সমস্যা হল বাংলাদেশে উদ্ধারকাজের জন্য অত্যাধুনিক কোন যন্ত্রপাতি নেই। যতটুকু আছে তা দিয়ে প্রথম থেকেই অভিযান চালানো সম্ভব ছিলনা। কারন প্রথম থেকেই এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে অভিযান পরিচালনা করলে জীবিতদের জন্য তা ঝুকিপূর্ণ হতো। তাহলে কি জীবিতদের দ্রুত উদ্ধারে অন্য কোন উপায় ছিলনা? হ্যা অবশ্যই ছিল। এ ঘটনাটি বিশ্ব গনমাধ্যমে প্রচারের পরপরই জাতিসংঘ স্ব-প্রনোদিত হয়ে উন্নত দেশগুলোর প্রতি সহায়তার আহবান জানান। জাতিসংঘের এই আহবানে সাড়া দিয়ে কয়েকটি দেশ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও দক্ষ কর্মি দিয়ে বাংলাদেশকে সহায়তার প্রস্তাব করে। কিন্তু ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হবার ভয়ে বাংলাদেশ সে প্রস্তাব গ্রহন করেনি। রোববার লন্ডনের দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের এ খবর প্রকাশিত হয় (সূত্রঃ বাংলামেইল২৪ডটকম ও বিবিসি) । লাইফ লোকেটর ও অন্যান্য উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যাবহারের ফলে হয়তো আরো দ্রুততম সময়ে আরো অধিক জীবিত ব্যক্তিদের উদ্ধার সম্ভব হত। কিন্তু শুধু ভাবমুর্তির দোহাই দিয়ে বিদেশি সহায়তা ফিরিয়ে দেয়াটা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? বাংলাদেশ তো তাদের কাছ থেকে সাহায্য চায়নি, তারা নিজেরাই যেখানে উদ্যোগি হয়ে সহায়তা করতে চাচ্ছিল, সেখানে ভাবমুর্তির প্রশ্ন আসবে কেন? তারা গার্মেন্টস শ্রমিক বলে? তাদের জীবনের চাইতে কি ভাবমূর্তির মুল্যই বেশি? আজ যদি ঐ ভবনের ধ্বংসস্তুপের নিচে দেশের গন্যমান্য ব্যক্তি বা বিশিষ্ট শিল্পপতিরা চাপা পড়তেন তবে কি বিদেশি সহায়তার প্রস্তাবকে এভাবে প্রত্যাখ্যান করা হতো?
বিষয়: বিবিধ
১৯৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন