হিজাব পরিয়ে ঐশীর মানবাধিকার হরণ করেছে পুলিশ
লিখেছেন লিখেছেন আবদুস সামাদ রাজু ২৬ আগস্ট, ২০১৩, ০১:৫১:৪১ রাত
সংবিধান অনুযায়ী এটা একটা সেক্যুলার কান্ট্রি। আর ব্যাক্তি জীবন কিংবা স্বাভাবিক চলাফেরায় পুরোপুরি সাংবিধানিক হতে পারে না কোন দেশের মানুষই। কিন্তু যখনই আনুষ্ঠানিকতা চলে আসবে তখনই সংবিধান মানা চাই। আর তা না হলে সরাসরি শাস্তিরও বিধান রয়েছে। যেমন আমরা মনে মনে নির্দ্বিধায় রাষ্ট্রের এমন সব লোকদের কিংবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে গালি দিতে পারি যেগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব কথা শুনালে সরাসরি মানহানি মামলার খড়্গয় পড়তে হবে। তাছাড়া এখন মোবাইল কোট তো রয়েছেই। সুতরাং এসব ব্যপারে খুবই হুশিয়ার থাকতে হবে।
এবার মূল কথায় আসি। সংবিধানে আমরা সেক্যুলার মোটামুটি। যদিও সেক্যুলারিটির বিশাল ব্যপার সেপার আমাদের সংবিধানপ্রসবকারীরা পুরোপুরি মেইনটেইন করেন নাই। যাক সে কথাও। এখন কথা হলো দেশে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন আদালতে দেখেছি হিজাবের ব্যপারে সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়েছে বিচারকরা। সেসব রায়ে বলা হয়েছে কাউকেই তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে হিজাব পরতে বাধ্য করা যাবে না। তা করা হলে আদালত জোরকারীর বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নিবে। সেই শাস্তির পরিমানও উল্লেখ করা হয়েছে সেসব রায়ে। তাহলে ঐশীকে কেন জোর করে হিজাব পরানো হলো? আর তা কোন অনানুষ্ঠানিক পরিবেশেও নয়। যেখান থেকে এই রায় এসেছে উল্টো সেই বিচারিক কার্যালয়েই ঐশীকে জোর করে হিজাব পরিয়ে নিয়ে গেছে পুলিশ।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে ঐশীকে জোর করে হিজাব পরিয়েছে পুলিশ একথারইবা সত্যতা কতটুকু! কিন্তু কথা হলো যেই মেয়েটি তার বয়সের পুরোটিই ছিল উদারপন্থী পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধী সেই মেয়েটি বুঝি এক দিনেই উল্টে গেল। আমরা দেখেছি প্রথম যেদিন ঐশী পুলিশে ধরা দেয় সেদিন ঐশীর জামা আর জিন্স এর সাথে একটা ওড়নাও ছিল না। কিন্তু এরপর পুলিশ কোত্থেকে একটা কাপড় এনে তার বুক ঢেকে দেয়। কোন অধিকারে পুলিশ তার উপর এই নির্মমতা চালাতে পারে! সে যদি অপরাধী হয় তাহলে আদালত রায় দিবে কিন্তু পুলিশ কোন এখতিয়ারে তার পোশাকের উপর হস্তক্ষেপ করছে? এর পর দেখছি পরের দিন ঐশীর মাথায় ঘোমটা পরিয়ে দেয়া হয়েছে, এ কোন মৌলবাদে ভরে গেল আমাদের পুলিশ প্রশাসন!
এখানেই শেষ নয়। এবার আমরা দেখলাম মধ্যযুগীয় বর্বরতা। ঐশীকে পরানো হলো সেকেলে বর্বর আর সন্ত্রাসী'র প্রতিক হিজাব যা সাধারণত আরবের নারীরা লু হাওয়া থেকে বাচার জন্য ব্যবহার করতো! সেই হিজাব পরিয়ে ঐশীকে নেয়া হলো আদালতে। আর আদালত এই অপরাধে অপরাধী পুলিশকে বাগে পেয়েও গ্রেফতার কিংবা তাৎক্ষনিক কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তার মানে পুলিশের হাতে কী আদালতের খুঁটি?
একটা ঐশী তার মা-বাবাকে হত্যা করেছে এটা তার অপরাধ হতে পারে কিন্তু তাই বলে কী তার পোশাকে হস্তক্ষেপ করতে পারবে পুলিশ? হত্যাকান্ডের সাথে পোশাকের কোন সংযোগ থাকতে পারে না। ঐশীর মতো চপলা কিশোরীরা মুক্ত বিহঙ্গের মতো নাচবে গাইবে স্বাধীনভাবে চলবে, তাহলেইতো পৃথিবী সুন্দর হবে। এখানে দুএকটি হত্যাকান্ড বিবেচনা করে ঐশীদের উচ্ছ্বল জীবন রোধ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
আর যদি কোন মৌলবাদি পুলিশ কিংবা বিচারক মনে করেন যে, না! ঐশীদের এভাবে চলতে দেয়া যায় না, এটা ঠিক না। তাহলে আমি সেইসব মৌলবাদীদেরকে বলবো, "আরে দূর, পারলে সংবিধান নিয়ে ভাব গিয়ে, আসামীরে বোরখা না পরিয়ে সংবিধানকে পারলে বোরখা পরা"
বিষয়: বিবিধ
১৯৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন